ইসলাম ধর্ম

আধুনিক জীবনে যে কাজগুলো অজান্তে বড় গুনাহের কারণ!

ইসলামিক বিচিত্রা ডেস্ক: বর্তমান গতিশীল জীবনযাত্রার অনেক অভ্যাসকে আমরা সাধারণ বা স্বাভাবিক অংশ বলে মনে করলেও, ইসলামের দৃষ্টিতে সেগুলো গুরুতর পাপের কারণ হতে পারে। সমাজে গ্রহণযোগ্য হলেও, ধর্মীয় মানদণ্ডে এই কাজগুলো মারাত্মক গুনাহ। নিচে এমন কয়েকটি বিষয় তুলে ধরা হলো যা আধুনিক সময়ে ব্যাপক প্রচলিত:

১. অনলাইনে গিবত ও অপবাদ (পেছন থেকে সমালোচনা) অনুপস্থিত ব্যক্তির নিন্দা করা, মিথ্যা রটনা ছড়ানো বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কাউকে নিয়ে ঠাট্টা করা— সবই গিবত (পরনিন্দা) ও অপবাদের অন্তর্ভুক্ত। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ এ বিষয়ে কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন: “তোমরা একে অন্যের গোপনীয় বিষয় সন্ধান করো না এবং একে অন্যের গীবত করো না। তোমাদের মধ্যে কি কেউ তার মৃত ভাইয়ের গোশত খেতে চাইবে?” (সূরা আল-হুজুরাত ৪৯: ১২)।

২. মূল্যবান সময় নষ্ট করা (অতিরিক্ত সোশ্যাল মিডিয়া আসক্তি) সময়কে আল্লাহ কর্তৃক প্রদত্ত এক আমানত হিসেবে বিবেচনা করা হয়। লক্ষ্যহীনভাবে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার বা অপ্রয়োজনীয় বিনোদনে অতিরিক্ত সময় ব্যয় করা এই আমানতের খেয়ানত। এটি পরকালের প্রস্তুতির পথে বড় বাধা তৈরি করে। রাসূল (সা.) এ সম্পর্কে বলেছেন: “দুটি নেয়ামত এমন আছে, যার কারণে অধিকাংশ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত। তা হলো: স্বাস্থ্য ও অবসর সময়।” (সহীহ বুখারী ৬৪১২)।

৩. পর্দার বিষয়ে উদাসীনতা (অপ্রয়োজনীয় সৌন্দর্য প্রদর্শন) ছবি বা ভিডিওর মাধ্যমে নিজেদের সৌন্দর্য প্রদর্শনকে অনেকে আধুনিক সমাজে স্বাধীনতা মনে করেন। অথচ এটি মুমিন নারী-পুরুষের জন্য আল্লাহর নির্দেশিত দৃষ্টি সংযত রাখা এবং শালীনতা বজায় রাখার নির্দেশের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেছেন: “মুমিন পুরুষদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি সংযত রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হেফাজত করে।” (সূরা আন-নূর ২৪: ৩০)। নারীদের জন্যও অনুরূপ নির্দেশ রয়েছে।

৪. লোক দেখানো ভালো কাজ (রিয়া) ভালো কাজ বা দানশীলতার ছবি সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশ করার মূল উদ্দেশ্য যদি হয় মানুষের কাছ থেকে প্রশংসা বা বাহবা লাভ করা, তবে তা ‘রিয়া’ বা লোক দেখানো আমল। এটি এক প্রকার গোপন পাপ যা সৎ কাজের সব সওয়াব নষ্ট করে দিতে পারে। রাসূল (সা.) রিয়াকে সবচেয়ে ভয়ংকর হিসেবে উল্লেখ করে বলেছেন: “আমি তোমাদের জন্য যা ভয় করি, তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভয় করি ছোট শিরককে।” তিনি বললেন, “তা হলো রিয়া (লোক দেখানো আমল)।” (সুনান ইবনু মাজাহ ৪২০৪)।

৫. দ্বীনের বিষয় নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রূপ ইসলামের কোনো বিধান (যেমন: পর্দা, দাড়ি) বা আল্লাহর নির্দেশিত কোনো বিষয়কে নিয়ে হাসি-ঠাট্টা করা, ব্যঙ্গ করা কিংবা তাচ্ছিল্যসূচক মন্তব্য করা মারাত্মক পাপ। আধুনিক সমাজে আড্ডা বা সোশ্যাল মিডিয়ায় এসব প্রবণতা দেখা গেলেও এটি আল্লাহ, তাঁর বাণী (আয়াতসমূহ) এবং রাসূলের (সা.) প্রতি চরম অসম্মানজনক, যা ইমান বিনষ্টকারী পর্যন্ত হতে পারে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button