চট্টগ্রামদেশপরিবেশবাংলাদেশসম্পাদকীয়

ঐতিহ্য আর ইতিহাসে গাথা মিরসরাই এর নয় টিলা দরবার শরীফ

নিজস্ব প্রতিবেদক: ৩৬০ আউলিয়ার দেশে হক্কানি এক আউলিয়ার মাজার,যা পরিচিতি পেয়েছে নয় টিলা মাজার নামে,নয় টিলা দরবার শরীফ। চট্টগ্রাম জেলার মীররসরাই উপজেলার করের হাট ইউনিয়নের গেড়ামারা গ্রামে রামগড় রোডে উক্ত নয় টিলা দরবার শরীফের অবস্থান। বারৈয়ার হাট এবং ছাগলনাইয়া থেকে রামগড়, খাগড়াছড়ি যেতে রাস্তার পাশে চোখে পড়ে এ মাজার শরীফের। বিশেষ করে প্রতি বছর ভ্রমন পিপাসুরা রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও রামগড় যেতে এ নয় টিলা মাজার পরিদর্শন ও জেয়ারত করে থাকেন।

মাজারের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস হচ্ছে এ মাজারে দুইজন আল্লাহর ওলি চিরনিদ্রায় আছেন। একজন হচ্ছেন সুলতানুল আরেফিন বাদশায়ে আউলিয়া হযরত নুর আলী শাহ (রাঃ) যার জন্ম তারিখ পাওয়া যায় ১২ মে ১৫২০ খৃষ্টাব্দ। এবং মৃত্যু তারিখ পাওয়া যায় ৩ জানুয়ারী ১৬১০ খৃষ্টাব্দ। অন্যজন হচ্ছেন, হযরত গাজী রজ্জাক আলী শাহ (রাঃ)। প্রথমে হযরত নুর আলী শাহ (রাঃ) এর বিষয়ে জানায়। যে তথ্যগুলো দিয়েছেন নয় টিলা দরবার শরীফের খাদেম হযরত গাজী রাজ্জাক আলী শাহ (রাঃ) এর চতুর্থ আওলাদ আশেকান রাসুল সৈয়দ শাহজাদা হযরত সরওয়ার উদ্দিন সাহেব। হযরত নুর আলী শাহ (রাঃ) জন্মস্থান হচ্ছে ইয়ামেন দেশে। এখন থেকে ৫ শ বছর পূর্বে তিনি হজ্ব করার উদ্দেশ্যে মক্কায় গমন করেন। হজ্ব এর কাজ সম্পাদন শেষে চলে যান মদিনা শরীফে। সেখানে প্রিয় রাসুল হযরত মোহাম্মদ (সঃ) রওজা প্রচারের জন্য তাকে আহবান করা হয়। তাই তিনি সেখান থেকে চলে যান ভারতের আজমীর শরীফে। তৎকালীন পূর্ববঙ্গ বর্তমান বাংলাদেশের চট্টগ্রামে চলে আসেন তিনি। মদিনা শরীফ থেকে পানি পথে চট্টগ্রামে চলে আসেন ১৫৬০ সালে।

চট্টগ্রামের পত্যেঙ্গা এলাকায় কিছুদিন থাকার পর তিনি ইসলাম প্রচারের জন্য চলে আসেন চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার করের হাট এলাকার গেড়ামারা গ্রামে। তখনকার সময় সেখানে তেমন জনবসতি ছিলনা। কারন সেখানে জায়গা গুলো হচ্ছে পাহাড়ী এলাকা। শুধু কিছু সংখ্যক মগ, চাকমারা বসবাস করতেন। তাদের কাছেই তিনি দ্বীন প্রচার করতে শুরু করেন। মগ্ন, চাকমারা হুজুরের কিছু আধ্যাতিক গুনাগুন দেখে খৈ, চিড়া নিয়ে আসতেন হুজুরকে খাওয়ানোর জন্য। কিন্তু হুজুর এই খৈ চিড়া না খেয়ে খাওয়াতেন হুজুরের পাশে থাকা বাঘ, হরিণ এবং বিভিন্ন ধরনের বনের পশু পাখিদের। তৎকালীন সময় হুজুরের ওফাতের পরও লোকজন হুজুরকে সরাসরি দেখেছেন, সালাম বিনিময় করেছেন বলেও ইতিহাস আছে। হুজুরের এই ভাবে অনেকগুলো আধ্যাতিক ঘটনা রয়েছে বলে খাদেম সরওয়ার উদ্দিন আমাদের জানান। হযরত নুর আলী শাহ (রাঃ) সেখানে ৬০ বছর অবস্থান করে অবশেষে ৩ জানুয়ারী ১৬১০ খৃষ্টাব্দে আজকের এ নয় টিলায় ওফাত গ্রহন করেন এবং এখানে তাকে দাফন করা হয়। নয় টিলা মাজারের নাম করন করেন তখনকার সময় কলকাতার মেজর এম আর চৌধুরী । তিনি উক্ত মাজার পরিদর্শন এসে পাহাড়ের টিলায় দাড়িয়ে নয়টি পাহাড়ের মিলনস্থল দেখতে পান। তাই তিনি এ মাজারকে নয় টিলা মাজারের নামকরন ঘোষণা দিয়ে যান।

সংক্ষিপ্ত আকারে নয় টিলার বিবরণ:
হযরত রাজ্জাক আলী শাহ (রাঃ)। তিনি হযরত নূর আলী শাহ (রাঃ) এর ওফাতের ৬০ বছর পর শিশু বয়স অর্থাৎ যুবক বয়সে এখানে চলে আসেন ফেনী জেলার ফুলগাজী উপজেলার আনন্দ পুর গ্রাম থেকে। তখন করের হাট এলাকা এসে বসবাস শুরু করেন চত্তরুয়া গ্রামে হাইনশা পাতাশা ফকিরের বাড়ীতে। কিছুদিন সেখানে থাকার পর চলে আসেন আজকের এই নয় টিলা মাজার শরীফে। হযরত নুর আলী শাহ (রাঃ) এর অনুগত হযরত রাজ্জাক আলী শাহ (রাঃ) তৎকালীন সময়ে বাঘের পিঠে করে গ্রামের পর গ্রাম ছড়িয়ে বেড়াতেন বলে রেওয়াজ আছে।

বনের পশু পাখিদের সাথে ছিল রাজ্জাক আলী শাহ (রাঃ) এর গভীর সম্পর্ক। রাত দিন তিনি বনের পশু পাখিদের সাথেই অধিকাংশ সময় কাটাতেন। রেওয়াজ আছে এখন থেকে ১৫০ বছর পূর্বে তখনকার সময়ে চিকিৎসার অভাবে কলেরা বসন্তে রোগে মানুষ মারা যেতো। হযরত রাজ্জাক আলী শাহ (রাঃ) চত্তরুয়া, বালুকিয়া, মহাজন, পশ্চিম জয় আজম নগর এলাকার প্রতি ঘর থেকে এক মুঠ এক মুঠ চাউল সংগ্রহ করে শিল্পি পাকায়ে রোগীকে খাওয়াতেন। হুজুরের উপর অগাধ বিশ্বাসে রোগীরা ভালো হয়ে যেতেন। হযরত রাজ্জাক আলী শাহ (রাঃ) এর ওছিয়তনামা অনুযায়ী প্রতি বছর মাঘ মাসে সেটি পুরোনো রেওয়াজে শিন্নি পাক আয়োজন করে সবাইকে খাওয়ান এলাকাবাসী।

হযরত রাজ্জাক আলী শাহ (রাঃ) ওফাতের পর মাজার পরিচালনা ধারাবাহিক ভাবে ছিলেন, তাহার ওরশজাত সৈয়দ হাবিব উল্লাহ, হাবিব উল্লাহর সন্তান সৈয়দ সামছুল হক, সৈয়দ রহুল আমিন ও সৈয়দ জাকির হোসেন উক্ত মাজার পরিচালনা করে আসছেন। বর্তমান সময়ে সু-পরিচিত সুনামধন্য আলেমেদ্বীন শাহজাদা সৈয়দ সরওয়ার উদ্দিন খাদেমের দায়িত্বে সুনামের সহিত অত্র নয় টিলা মাজার শরীফ পরিচালিত হয়ে আসছে। হযরত রাজ্জাক আলী শাহ (রাঃ) জন্ম তারিখ হচ্ছে ৭ আগষ্ট ১৭৭০ খৃষ্টাব্দ এবং ওফাত গ্রহন করেন ৩০ আগষ্ট ১৮৪০ খৃষ্টাব্দ। চট্টগ্রাম জেলা ট্রাক কাভারভ্যান এবং মিনি পিকআপ মালিক সমিতির সম্মানিত সভাপতি খাদেম সৈয়দ জিয়াউদ্দিন পক্ষ থেকে জানা যায়, শাহজাদা সৈয়দ মোঃ সরওয়ার উদ্দিন খাদেম (মাঃজিঃআঃ) তত্ত্বাবধানে বাৎসরিক ওয়াজ মাহফিল ওরস মোবারক প্রত্যেক রমজান মাসে অসহায় দরিদ্রদের মাঝে খাদ্যদ্রব্য সামগ্রী বিতরণ করা হয়।

প্রত্যেক রবিউল আউয়াল মাসে ঈদে মিলাদুন্নবী জশনে জুলুস রেলি ও আলোচনা করা হয়। সোহদায় কারবালা স্মরণে মোহরম মাসে মাহফিল করা হয়। প্রত্যেক সপ্তাহে জুমার নামাজ শেষে মুসল্লিও ভক্ত বৃন্দুদেরকে দুপুরের মেহমানদারী করা হয়। এছাড়া কোন ব্যক্তি কোন প্রকার বিপদে পড়লে সহায়তা করা হয়।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button