Uncategorizedইসলাম ধর্ম

দৃষ্টি ও লজ্জাস্থানের সুরক্ষা: ইসলামে পর্দার অপরিহার্যতা

কোরআন ও হাদীসের আলোকে নারী-পুরুষের চারিত্রিক পবিত্রতা

ইসলামিক বিচিত্রা ডেস্ক: চারিত্রিক পবিত্রতা ও সামাজিক শৃঙ্খলার রক্ষাকবচ হিসেবে ইসলামে পর্দার বিধানকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। পবিত্র কোরআন ও সহীহ হাদীসে মু’মিন নারী ও পুরুষের জন্য দৃষ্টি সংযত রাখা এবং সতর আবৃত রাখার সুস্পষ্ট নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

আল্লাহ তা’আলা সূরা আন্-নূরের ৩০ নম্বর আয়াতে নবী (সা.)-এর মাধ্যমে মু’মিন পুরুষদের নির্দেশ দিয়েছেন যেন তারা তাদের দৃষ্টি সংযত রাখে এবং লজ্জাস্থানসমূহের হেফাজত করে। এই পদ্ধতিকে আল্লাহ তাদের জন্য অধিক পবিত্র বলে ঘোষণা করেছেন।

  • দৃষ্টি নিয়ন্ত্রণ: হযরত আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত হাদীসে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) হঠাৎ পতিত দৃষ্টিকে ক্ষমার্হ বললেও, পরবর্তীতে স্বেচ্ছাকৃত দৃষ্টিকে নিষিদ্ধ করেছেন। এটি প্রমাণ করে যে, অনাকাঙ্ক্ষিত দৃষ্টির পর দ্রুত দৃষ্টি ফিরিয়ে নেওয়া আবশ্যক।
  • ৬টি জামিন: হযরত আবু উমামা (রাঃ) বর্ণিত হাদীসে রাসূল (সাঃ) ৬টি জিনিসের (মিথ্যা না বলা, আমানতের খিয়ানত না করা, ওয়াদা ভঙ্গ না করা, দৃষ্টি নিম্নমুখী রাখা, যুলুম থেকে হাত বাঁচানো ও লজ্জাস্থানের হিফাযত করা) দায়িত্ব নিলে জান্নাতের দায়িত্ব নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।
  • ব্যভিচারের প্রাথমিক স্তর: হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) বর্ণিত সহীহ হাদীসে চোখ, মুখ, কান, হাত ও পায়ের কাজকে ব্যভিচারের অংশ বলা হয়েছে—চোখের ব্যভিচার হলো দেখা, মুখের বলা, কানের শোনা ইত্যাদি। এই অঙ্গগুলো দ্বারা কামনার জন্ম হয় এবং তা লজ্জাস্থান দ্বারা বাস্তবায়িত হতে পারে।

পরবর্তী আয়াতে (সূরা আন্-নূর, আয়াত ৩১) আল্লাহ মু’মিন মহিলাদের একই সাথে দৃষ্টি ও লজ্জাস্থানের হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন। পাশাপাশি তাদেরকে তাদের সাজসজ্জা প্রকাশ না করা এবং ওড়নার আঁচল দিয়ে বুক ঢেকে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

আয়াতে বিশেষভাবে বলা হয়েছে যে, নারীরা কেবল নিম্নোক্তদের সামনে তাদের সাজসজ্জা প্রকাশ করতে পারবে:

স্বামী, বাপ, স্বামীর বাপ, নিজের ছেলে, স্বামীর ছেলে, ভাই, ভাইয়ের ছেলে, বোনের ছেলে, নিজের মেলামেশার মেয়েরা, নিজের মালিকানাধীনরা, এমন অধীনস্থ পুরুষ যাদের অন্য কোনো রকম উদ্দেশ্য নেই এবং এমন শিশু যারা মেয়েদের গোপন বিষয় সম্পর্কে এখনো অজ্ঞ।

  • সজোরে পদক্ষেপ নিষেধ: নারীগণ যেন নিজেদের গোপন সৌন্দর্য (যেমন পায়ের অলঙ্কার) প্রকাশ করার উদ্দেশ্যে সজোরে পদক্ষেপ না করে—জাহেলী যুগের এই অভ্যাসকে ইসলামে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
  • অন্ধ ব্যক্তির সামনেও পর্দা: হযরত উম্মে সালমা ও মায়মূনা (রাঃ)-কে রাসূল (সাঃ) অন্ধ সাহাবী হযরত ইবনে উম্মে মাকতূম (রাঃ)-এর সামনেও পর্দা করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন।
  • চাদর টেনে দেওয়া: সূরা আহযাবের নির্দেশ অনুযায়ী, মুমিন নারীদেরকে তাদের চাদরের কিয়দংশ নিজেদের ওপর টেনে দিতে বলা হয়েছে, যাতে তাদের পরিচয় স্পষ্ট হয় এবং তারা উত্ত্যক্ত না হয়।

আল্লাহর নবী (সাঃ)-এর স্ত্রীদের মাধ্যমে সমস্ত মু’মিন নারীদের জন্য আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ নীতি বর্ণিত হয়েছে:

  • স্বরের কোমলতা পরিহার: নবীর স্ত্রীগণকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যেন তারা মিহি স্বরে কথা না বলেন, যাতে অন্তরে গলদ থাকা কোনো ব্যক্তি প্রলুব্ধ না হয়। বরং পরিষ্কার সোজা ও স্বাভাবিকভাবে কথা বলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
  • গৃহেই অবস্থান: তাদেরকে নিজেদের গৃহের মধ্যে অবস্থান করতে এবং পূর্বের জাহেলী যুগের মতো সাজসজ্জা দেখিয়ে বাইরে বের হতে নিষেধ করা হয়েছে।
  • মাহরাম ছাড়া নির্জনতা নিষিদ্ধ: আব্দুল্লাহ্ বিন্ ‘আববাস্ (রা.) বর্ণিত হাদীসে রাসূল (সাঃ) নির্দেশ দিয়েছেন যে, মাহরাম (এগানা পুরুষ) ছাড়া কোনো পুরুষ যেন বেগানা মহিলার সাথে নির্জনে অবস্থান না করে।
  • স্বামী অনুপস্থিত থাকলে: জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত হাদীসে স্বামী উপস্থিত নেই এমন মহিলার ঘরে প্রবেশ করতে নিষেধ করা হয়েছে, কারণ শয়তান রক্ত প্রবাহের মতো মানুষের মধ্যে চলাচল করে।
  • সুগন্ধিযুক্ত হয়ে বাইরে যাওয়া: হযরত আবু মূসা (রাঃ) বর্ণিত হাদীসে রাসূল (সাঃ) বলেছেন, যে নারী আতর মেখে, ফুল পরে বা সুগন্ধি ছড়িয়ে পুরুষদের মজলিসের পাশ দিয়ে যায়, সে ব্যভিচারিণী হিসেবে গণ্য।

এই সমস্ত বিধান মু’মিন নারী ও পুরুষ উভয়কে চারিত্রিক অবনতি থেকে রক্ষা করে এবং সমাজকে পবিত্র রাখার জন্য অপরিহার্য।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button