ইসলাম ধর্ম

সূরা আন-নাসে আল্লাহর বিশেষ নির্দেশনা

ইসলামিক বিচিত্রা ডেস্ক: পবিত্র কুরআনের সর্বশেষ সূরা ‘আন-নাস’-এ আল্লাহ তা’আলা মানবজাতিকে সমস্ত প্রকার কুমন্ত্রণাদাতা ও শয়তানের অনিষ্ট থেকে তাঁর কাছে কীভাবে আশ্রয় চাইতে হবে, সেই শিক্ষা দিয়েছেন। এই সূরার প্রতিটি আয়াতে রয়েছে মানুষের আত্মিক সুরক্ষা ও শয়তানের চক্রান্ত থেকে বাঁচার মৌলিক নির্দেশনা।

সূরা আন-নাসের প্রথম তিনটি আয়াতে আশ্রয়প্রার্থীকে মহান আল্লাহ্‌র তিনটি মৌলিক গুণের ভিত্তিতে তাঁর কাছে আশ্রয় চাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে: ১. রব (প্রতিপালক), ২. মালিক (অধিপতি বা রাজা), এবং ৩. ইলাহ (উপাস্য বা মাবুদ)। এই তিনটি গুণের মাধ্যমেই আল্লাহ তাঁর অসীম ক্ষমতা ও কর্তৃত্বের পরিচয় দেন। যেহেতু সব সৃষ্টিই তাঁর দ্বারা সৃষ্ট, তাঁরই মালিকানাধীন এবং তাঁরই বান্দা, তাই একমাত্র এই তিনটি গুণে গুণান্বিত সত্তার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করাই বুদ্ধিমানের কাজ। [ইবন কাসীর]

এই সূরায় আল্লাহ যে অনিষ্ট থেকে আশ্রয় চাইতে বলেছেন, তা হলো বারবার কুমন্ত্রণাদাতা বা ‘আল-ওয়াসওয়াস আল-খান্নাস’-এর অনিষ্ট। এটি মানুষের সঙ্গে নিয়োজিত সেই শয়তান সঙ্গী, যে মানুষকে মন্দ কাজ করাতে সবসময় সচেষ্ট থাকে।

হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই বিষয়ে বলেছেন, “তোমাদের প্রত্যেকের সাথেই একজন শয়তান সঙ্গী নিয়োগ করা হয়েছে।” সাহাবায়ে কেরাম (রা.) জানতে চাইলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ, আপনার সাথেও? তিনি জবাব দিলেন, “হ্যাঁ, তবে আল্লাহ আমাকে তার ওপর নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করেছেন, ফলে তার থেকে আমি নিরাপদ হয়েছি এবং সে আমাকে শুধুমাত্র ভালো কাজের কথাই বলে।” [মুসলিম, ২৮১৪]

আলোচনায় কুমন্ত্রণাদাতা শয়তানের উৎসের ক্ষেত্রে দুটি ভিন্ন মত পাওয়া যায়:

১. শয়তান জিন ও মানুষ—উভয় ধরনের মানুষের অন্তরেই কুমন্ত্রণা দেয়।
২. কুমন্ত্রণাদাতা শয়তান জিনদের মধ্য থেকেও আসে, আবার মানুষের মধ্য থেকেও আসে। পণ্ডিতদের মতে, এই দ্বিতীয় মতটিই অধিক শক্তিশালী। [ইবন কাছীর]

এর সারমর্ম হলো, আল্লাহ তা’আলা তাঁর রাসূলকে (সা.) জিন-শয়তানের অলক্ষ্যে দেওয়া কুমন্ত্রণা থেকে এবং দৃশ্যমান মানুষ-শয়তানের অনিষ্ট থেকেও তাঁর নিকট আশ্রয় চাওয়ার শিক্ষা দিয়েছেন।

জিন-শয়তান যেমন মানুষের মনে কুমন্ত্রণা দিয়ে থাকে, ঠিক তেমনিভাবে মানুষের নফস বা প্রবৃত্তিও অনেক সময় তাকে খারাপ কাজের দিকে প্ররোচিত করে। এই কারণে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্বয়ং আপন নফসের অনিষ্ট থেকেও আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করার শিক্ষা দিয়েছেন।

একটি হাদীসে উল্লেখ আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “হে আল্লাহ! আমি আপনার আশ্রয় চাই, আমার নফসের অনিষ্ট থেকে, শয়তানের অনিষ্ট থেকেও এবং তার শির্ক (বা জাল) থেকেও।” [আবু দাউদ ৫০৬৭, তিরমিযী ৩৩৯২, মুসনাদে আহমাদ ১/৯০]

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button