অপরাধঅব্যাবস্থাপনাআইন ও বিচারএক্সক্লুসিভচাঁদপুরেদেশপ্রতারনাপ্রশাসনবাংলাদেশমিডিয়া

ফরিদগঞ্জে ৪ লাখ টাকা দিয়েও মেলেনি কাজ, ক্ষতিপূরণ দিতে নারাজ দালালের পরিবার

মোঃ সোহেল রানা: চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জে দালাল চক্রের খপ্পরে পড়ে সর্বস্বান্ত হয়েছেন জসিম উদ্দিন (৫০) নামের এক প্রবাসী। ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা খরচ করে ‘কোম্পানি ভিসা’র কথা বলে বিদেশ গেলেও সেখানে গিয়ে জুটেনি প্রতিশ্রুত কাজ। উল্টো ভিনদেশে অনাহারে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন তিনি। এ ঘটনায় থানায় লিখিত অভিযোগ ও স্থানীয়ভাবে সালিস বৈঠক হলেও দালালের পরিবার তা মানতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। এমনকি সালিসকারীদের ‘চাঁদাবাজ’ আখ্যা দিয়ে ক্ষতিপূরণের টাকা দিতেও অস্বীকার করেছেন অভিযুক্তের মা।

ভুক্তভোগী জসিম উদ্দিন উপজেলার বালিচাটিয়া গ্রামের রেহানা বেগমের স্বামী। অন্যদিকে অভিযুক্ত দালাল মহিন উদ্দিন (৩৫) একই গ্রামের সফিক হোসেনের ছেলে।

অভিযোগ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, প্রায় দুই বছর আগে স্বচ্ছলতার আশায় জসিম উদ্দিন বিদেশে পাড়ি জমান। তাকে বিদেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন প্রতিবেশী প্রবাসী মহিন উদ্দিন। ‘কোম্পানি ভিসা’ ও ভালো বেতনের প্রলোভন দেখিয়ে জসিমের কাছ থেকে সাড়ে ৪ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন মহিন। কিন্তু বিদেশ পৌঁছানোর পর জসিম দেখেন বাস্তবতা সম্পূর্ণ ভিন্ন। তাকে কোম্পানির পরিবর্তে দেওয়া হয় ‘সাপ্লাই ভিসা’। আকামা (ওয়ার্ক পারমিট) না থাকায় এবং কাজ না পেয়ে তিনি সেখানে একপ্রকার বন্দি জীবন কাটাচ্ছেন।

এদিকে দেশে জসিমের স্ত্রী রেহানা বেগম (৪৫) স্বামী ও সন্তানদের নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন। এনজিও ও মহাজনদের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে স্বামীকে বিদেশ পাঠিয়ে এখন তিনি দিশেহারা। উপায় না দেখে গত ২৫ জুলাই ফরিদগঞ্জ থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন তিনি।

অভিযোগের প্রেক্ষিতে থানা পুলিশ ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে একটি সালিস বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে জসিমের ক্ষতিপূরণ ও পরিবারের অসহায়ত্বের কথা বিবেচনা করে অভিযুক্ত পক্ষকে ৫০ হাজার টাকা প্রদানের সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়। কিন্তু অভিযুক্ত মহিনের মা রেহানা বেগম এই রায় মানতে নারাজ।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত মহিন উদ্দিনের মা রেহানা বেগমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “আমি থানা বা সমাজের বিচার মানি না। যারা বিচার করেছে তারা চাঁদাবাজ। আমি তাদের এক টাকাও দেব না। প্রয়োজনে আমি আদালতে গিয়ে মামলা লড়ব।”

সালিসে উপস্থিত স্থানীয় সমাজপতিরা জানান, শর্তভঙ্গ করে জসিমকে বিদেশ পাঠানো হয়েছে। বর্তমানে তিনি মানবেতর জীবনযাপন করছেন। মানবিক দিক বিবেচনা করে পুলিশ কর্মকর্তাসহ আমরা বিষয়টি আপস-মীমাংসার মাধ্যমে মাত্র ৫০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ ধরেছিলাম। কিন্তু বিবাদী পক্ষ সেই সামান্য টাকা দিতেও অস্বীকার করছে, যা অত্যন্ত দুঃখজনক।

এ বিষয়ে ফরিদগঞ্জ থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম বলেন, “উভয় পক্ষের সম্মতিতে থানায় বসে একটি মীমাংসার চেষ্টা করা হয়েছিল। সালিসগণের উপস্থিতিতে ভুক্তভোগীকে ৫০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু বিবাদী পক্ষ যেহেতু এই সিদ্ধান্ত মানছে না, তাই ভুক্তভোগী পরিবারকে মানবপাচার আইনে আদালতে মামলা করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।”

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button