বিমানবন্দর স্টেশনে জিআরপি আইসির ‘রাজত্ব’: মাদক ও ছিনতাইকারীদের গডফাদার হওয়ার অভিযোগ

মো: জাকিরুল ইসলাম: ঢাকা বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশন বর্তমানে অপরাধীদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। জিআরপি ইনচার্জ (আইসি) হিসেবে নাদিরুজ্জামান যোগদানের পর থেকেই স্টেশন এলাকায় মাদক কারবার, ছিনতাই এবং হকার বাণিজ্যের এক অরাজক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। খোদ আইসি এবং তার নিজস্ব সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসায়ী ও ছিনতাইকারীদের ‘সেল্টার’ দিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার গুরুতর তথ্য পাওয়া গেছে।
অনুসন্ধান ও অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, গত ২৮ অক্টোবর ২০২৫ তারিখে স্টেশন এলাকা থেকে তানিয়া নামের এক মাদক কারবারিকে ৬ কেজি গাঁজাসহ হাতেনাতে আটক করেন আইসি নাদিরুজ্জামান। অভিযানে তার সঙ্গে ছিলেন এএসআই ইয়ার আলী, কনস্টেবল আশিক খান, মমিনুল ও নারী কনস্টেবল সুইটি। কিন্তু মাদক মামলা না দিয়ে ৪১ হাজার টাকার বিনিময়ে তানিয়াকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

একই কায়দায় গত ৩ নভেম্বর ২০২৫ তারিখে ৮ কেজি গাঁজাসহ অজ্ঞাত এক ব্যক্তিকে আটক করা হয়। তার কাছ থেকে নগদ ৬৫ হাজার টাকা নিয়ে তাকেও ছেড়ে দেওয়া হয়। এই অভিযানেও আইসির সঙ্গে ছিলেন এএসআই ইয়ার আলী, আশিক, মমিনুল ও জহিরুল।
সর্বশেষ গত ৫ নভেম্বর ২০২৫ তারিখে জয় আহমেদ (বাবু) নামের এক পেশাদার ছিনতাইকারীকে মোবাইল চুরির সময় হাতেনাতে ধরা হয়। কিন্তু আইনি ব্যবস্থা না নিয়ে তার কাছ থেকে ৪৩ হাজার টাকা নিয়ে তাকে ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে আইসি নাদিরুজ্জামান ও তার সহযোগী আশিক, মমিনুল ও জহিরুলের বিরুদ্ধে।
সূত্রমতে, আইসির ‘ডান হাত’ হিসেবে পরিচিত কনস্টেবল আশিক খান এবং ‘বাম হাত’ মমিনুল পুরো সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করেন। দাপ্তরিক কাজের আড়ালে নারী কনস্টেবল সুইটিও এই চক্রের অন্যতম হোতা। অভিযোগ রয়েছে, গত ১০ অক্টোবর থেকে ১ নভেম্বর পর্যন্ত তানভীর হাসান মোল্লা নামের এক চোরকে দিয়ে স্টেশনে অবাধে চুরি ও ছিনতাই করানো হয়েছে। চোরদের সঙ্গে পুলিশের অলিখিত চুক্তি থাকে যে, পাবলিকের হাতে ধরা পড়লে পুলিশ গিয়ে তাদের ‘উদ্ধার’ করবে। স্টেশনের সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করলেই এসব ঘটনার সত্যতা মিলবে বলে দাবি সংশ্লিষ্টদের।
স্টেশন এলাকায় মাসোহারা বাণিজ্যেরও ভয়াবহ চিত্র উঠে এসেছে। খোরশেদ নামের এক ছিনতাইকারীর কাছ থেকে সপ্তাহে ৫ হাজার টাকা, ২ নম্বর প্ল্যাটফর্মের পাবলিক টয়লেট এলাকার মাদক স্পট নিয়ন্ত্রণকারী মৌসুমীর কাছ থেকে সপ্তাহে ৫ হাজার টাকা এবং ১ নম্বর প্ল্যাটফর্মের কার পার্কিং এলাকার মাদক বিক্রেতা লিমার কাছ থেকে সপ্তাহে ৪ হাজার টাকা আদায় করেন আইসি ও তার সহযোগী আশিক।
এছাড়া স্টেশনের কার পার্কিং এলাকা দখল করে জুতা, কাপড় ও চায়ের দোকানসহ শতাধিক অবৈধ দোকান বসানো হয়েছে। হকারদের এসব দোকান থেকে প্রতিদিন ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা পর্যন্ত চাঁদা তোলা হয়। অভিযোগ রয়েছে, এই হকার বাণিজ্যের লভ্যাংশ আইসি নাদিরুজ্জামান এছাড়াও রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার শাহাদাত হোসেনের পকেটে যায়।
ভুক্তভোগী ও স্থানীয়দের অভিযোগ, গণমাধ্যমে একাধিকবার সংবাদ প্রকাশ হলেও অদৃশ্য খুঁটির জোরে বহাল তবিয়তে আছেন এই দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা। কথিত আছে, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ‘ম্যানেজ’ করেই তারা এসব অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছেন। এমতাবস্থায় রেলওয়ে প্রশাসন এই সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কোনো কঠোর পদক্ষেপ নেবে কি না, সেটাই এখন দেখার বিষয়।



