নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের রাজনীতির মাঠে বর্তমানে সুবিধাজনক অবস্থানে থাকলেও সাধারণ মানুষের সমর্থন যাতে কোনো কারণে হাতছাড়া না হয়, সে বিষয়ে বিশেষ সতর্কতার ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে। সময়ের দাবি মেনে এবং আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে দলের নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের জন্য ১৯টি গুরুত্বপূর্ণ ‘মোটিভেশনাল’ বা কৌশলগত প্রস্তাবনা উঠে এসেছে। এতে আদর্শিক প্রচারণার পাশাপাশি রাষ্ট্র পরিচালনা ও নীতিনির্ধারণী বিষয়ে দলের অবস্থান স্পষ্ট করার তাগিদ দেওয়া হয়েছে।
উত্থাপিত কৌশলগুলোর মধ্যে ধর্মীয় মূল্যবোধ, সুশাসন এবং আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের বিষয়গুলো প্রাধান্য পেয়েছে। নিচে ১৯ দফা কর্মপরিকল্পনার মূল বিষয়গুলো তুলে ধরা হলো:
কৌশলপত্রে বলা হয়েছে, কুরআন নাজিলের মূল উদ্দেশ্য এবং এর আলোকে মুসলমানদের দায়িত্ব ও কর্তব্য সাধারণ মানুষকে যুক্তি দিয়ে বোঝাতে হবে। একজন মুসলমানের জীবনের লক্ষ্য নির্ধারণ, ইসলামি দলে সংঘবদ্ধ থাকার গুরুত্ব এবং ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো মতবাদ যে রাষ্ট্র পরিচালনায় গ্রহণযোগ্য নয়—তা পরিষ্কারভাবে তুলে ধরার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া অনৈসলামিক বা ফাসেকি দলের নেতৃত্বের পরিণাম সম্পর্কে সতর্ক করা এবং ইসলামি রাষ্ট্র না থাকা অবস্থায় একজন আমিরকে অনুসরণ বা বায়াত গ্রহণের গুরুত্ব বোঝানোর কথা বলা হয়েছে।
দলের নীতি নিয়ে জনমনে থাকা অস্পষ্টতা দূর করার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো—
- ইসলামি রাষ্ট্রব্যবস্থায় অমুসলিমদের অধিকার, জামায়াতে তাদের যোগদান এবং দায়িত্ব-কর্তব্য যৌক্তিকভাবে ব্যাখ্যা করা।
- নারীদের পর্দা, কর্মসংস্থান, ব্যবসায় অংশগ্রহণ এবং সংসদে এমপি বা মন্ত্রী হিসেবে মনোনয়ন দেওয়ার বিষয়ে দলের অবস্থান পরিষ্কার করা।
- দলের আকিদা নিয়ে বিভ্রান্তিমূলক প্রশ্নের জবাব দেওয়া এবং অন্যান্য ইসলামি দল, পীর-মাশায়েখ ও তাবলিগ জামাত সম্পর্কে দলের ইতিবাচক ও স্বচ্ছ অবস্থান তুলে ধরা।
আগামী দিনে রাষ্ট্র পরিচালনায় জামায়াত কতটা দক্ষতার পরিচয় দেবে, তা প্রমাণের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার কথা বলা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে—দুর্নীতি ও চাঁদাবাজি কঠোরভাবে প্রতিরোধ করা, জাকাতভিত্তিক অর্থব্যবস্থা চালুর মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচন এবং দেশে-বিদেশে ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি। এছাড়া শিক্ষা, কৃষি, স্বাস্থ্য ও আইটি খাতের উন্নয়ন এবং পুলিশ ও সামরিক বাহিনীকে আধুনিক ও উন্নত করার পরিকল্পনার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। নির্বাচনী মাঠে কেন্দ্র দখল রোধ এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার সক্ষমতা প্রদর্শনের বিষয়টিতেও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে হাতে থাকা স্বল্প সময়কে (আনুমানিক আড়াই মাস) সর্বোচ্চ কাজে লাগানোর আহ্বান জানানো হয়েছে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে ‘ব্যালট জিহাদ’-এ অংশ নেওয়া এবং ইসলামি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় ভোট দেওয়াকে ‘সদকায়ে জারিয়া’ হিসেবে গণ্য করার বিষয়টি আমজনতাকে বোঝানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
একই সঙ্গে ইসলামি স্কলার ও দায়ীদের প্রকাশ্যে আন্দোলনে সক্রিয় হওয়া এবং স্থানীয় সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যাপকভাবে সম্পৃক্ত করার কৌশল নেওয়া হয়েছে। শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন সময়োপযোগী কর্মসূচির মাধ্যমে আকৃষ্ট করে ছাত্রশিবিরের সমর্থক হিসেবে গড়ে তোলার নির্দেশনাও এই পরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।



