ইসলাম ধর্ম

রিজিক বৃদ্ধি ও বিপদাপদ থেকে মুক্তির প্রতিদিনের কিছু পরীক্ষিত আমল

ইসলামিক বিচিত্রা ডেস্ক: মুমিন মুসলমানরা সব সময় মহান আল্লাহর সাহায্য কামনা করেন। দুনিয়ার জীবনে সচ্ছলতা, রিজিক বৃদ্ধি, বিপদ থেকে মুক্তি এবং পরকালের শান্তির জন্য কোরআন ও হাদিসে অনেক দোয়া ও জিকিরের উল্লেখ রয়েছে। ওলামায়ে কেরাম ও বুজুর্গরা বিভিন্ন সময় এমন কিছু আমলের কথা বলেছেন, যা পালন করলে আল্লাহর রহমতে দ্রুত ফল পাওয়া যায়।

দৈনন্দিন জীবনে পালনীয় এমন কিছু গুরুত্বপূর্ণ দোয়া ও আমল নিচে তুলে ধরা হলো—

রিজিক ও সচ্ছলতা লাভের আমল
জীবিকার সন্ধানে মানুষ সর্বদা ব্যস্ত থাকে। আল্লাহর গুণবাচক নামের জিকির ও কোরআনের আমল রিজিক বাড়াতে সহায়তা করে।

  • সকালের বিশেষ আমল: সকালে ঘুম থেকে উঠে আল্লাহর গুণবাচক নাম ‘ইয়া মালিকু, ইয়া কুদ্দুসু’ পাঠ করলে আল্লাহ তায়ালা অঢেল সম্পদের ব্যবস্থা করে দেন এবং অভাব দূর হয়।
  • আয়াতের আমল: ঘরের দরজায় হাত রেখে সুরা ফাতিহার এই আয়াতটি— ‘ইয়াকা না’বুদু ওয়া ইয়াকা নাসতাঈন’ পাঠ করলে আল্লাহ তায়ালা অকল্পনীয় রিজিকের ব্যবস্থা করেন।
  • মুখে হাত বুলানো: সকালে ১০ বার ‘ইয়া বাসিতু’ (হে প্রশস্তকারী) পাঠ করে দুই হাতে ফু দিয়ে সেই হাত মুখমন্ডলে বুলিয়ে নিলে সারাদিন বরকত থাকে এবং হাতে টাকা-পয়সা আসতে থাকে।

ইচ্ছা পূরণ ও জান্নাত ওয়াজিব হওয়ার আমল

  • ইচ্ছা পূরণ: সকালে ঘুম থেকে উঠে ২০ বার ‘ইয়া হাইয়ু ইয়া কাইয়ুম’ পাঠ করলে আল্লাহর রহমতে সব কাজ নিজের ইচ্ছা ও পরিকল্পনা অনুযায়ী সম্পন্ন হয়।
  • জান্নাত লাভ: আজান শোনার পর বা দোয়ার সময় ‘আল্লাহুম্মা রব্বানা ইন্নাকা লা তুখলিফুল মিদ’ পাঠ করলে ওই ব্যক্তির জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যায় বলে হাদিসে ইঙ্গিত রয়েছে।

নামাজ ও দোয়া কবুল হওয়া
নামাজের শুরুতে ছানা পড়ার আগে তাকবীরে তাহরিমার পর রাসুলুল্লাহ (সা.) একটি বিশেষ দোয়া পড়তেন। দোয়াটি হলো—
উচ্চারণ: ‘আল্লাহু আকবার কাবিরা, ওয়াল হামদুলিল্লাহি কাসিরা, ওয়া সুবহানাল্লাহি বুকরাতাও ওয়া আসিলা।’
হাদিসে এসেছে, এই দোয়া পাঠ করলে আসমানের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয় এবং দোয়া কবুল করা হয়।

বিপদ ও দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তির উপায়
মানুষের জীবনে বিপদ বলে-কয়ে আসে না। যেকোনো বিপদ বা কঠিন পরিস্থিতিতে মহানবীর (সা.) শেখানো আমলগুলো ঢালস্বরূপ।
বিপদ কাটানোর জন্য সবসময় পাঠ করতে হবে:
১. ইস্তেগফার: আস্তাগফিরুল্লাহ।
২. দোয়া ইউনুস: ‘লা ইলাহা ইল্লা আনতা সুবহানাকা ইন্নি কুনতু মিনাজ জোয়ালিমিন।’
৩. দরুদ শরীফ: সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।

এ ছাড়া মহান আল্লাহর সাহায্য চাইতে পড়তে হবে—

  • ‘আগীিসনি ইয়া রহমান’ (হে দয়ালু আল্লাহ, আমাকে সাহায্য করুন)।
  • ‘ইয়া হাইয়ু ইয়া কাইয়ুম বিরাহমাতিকা আস্তাগিস’ (হে চিরঞ্জীব, হে চিরস্থায়ী! আপনার রহমতের উসিলায় সাহায্য প্রার্থনা করছি)।

শত্রুর অনিষ্ট ও ভয়ভীতি দূর করতে
শত্রু বা কোনো সম্প্রদায়ের ভয়ে ভীত হলে আল্লাহর ওপর ভরসা করে এই দোয়াগুলো পড়া অত্যন্ত কার্যকরী:

  • ‘আল্লাহুম্মাকফিনিহিম বিমা শি’তা।’ (অর্থ: হে আল্লাহ! আপনি যা ইচ্ছা তা দ্বারাই এদের মোকাবিলায় আমার জন্য যথেষ্ট হোন।)
  • ‘আল্লাহুম্মা ইন্না নাজআলুকা ফি নুহুরিহিম ওয়া নাউজুবিকা মিন শুরুরিহিম।’ (অর্থ: হে আল্লাহ! আমরা তাদের মোকাবিলায় আপনাকে যথেষ্ট ভাবছি এবং তাদের অনিষ্ট থেকে আপনার কাছে আশ্রয় চাইছি।)

কঠিন কাজ সহজ করার দোয়া
কোনো কাজ কঠিন মনে হলে বা আটকে গেলে এই দোয়াটি পড়লে আল্লাহ তা সহজ করে দেন:
উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মা লা সাহলা ইল্লা মা জায়ালতাহু সাহলান, ওয়া আনতা তাজআলুল হুযনা সাহলান ইযা শিইতা।’
অর্থ: হে আল্লাহ, কোনো বিষয়ই সহজ নয়, যতক্ষণ না আপনি তা সহজ করে দেন। আর যখন আপনি চান, তখন কঠিন কাজকেও সহজ করে দেন।

সিজদার বিশেষ দোয়া ও সান্ত্বনা
নামাজের সিজদায় বা বিশেষ মুহূর্তে জাহান্নাম ও কবরের আজাব থেকে মুক্তি চাইতে এই দোয়াটি পড়া সুন্নত:

  • ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আউযুবিকা মিন আজাবিল কাবরি, ওয়া মিন আজাবি জাহান্নাম, ওয়া মিন ফিতনাতিল মাহইয়া ওয়াল মামাতি, ওয়া মিন শাররি ফিতনাতিল মাসিহীদ দাজ্জাল।’

এ ছাড়া কোনো বিপদ বা প্রিয় কিছু হারালে ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন’ পড়ার পাশাপাশি এই দোয়াটি পড়লে আল্লাহ উত্তম বিনিময় দান করেন:

  • ‘আল্লাহুম্মা আজিরনি ফি মুসিবাতি ওয়া আখলিফ-লি খাইরাম মিনহা।’ (হে আল্লাহ! আমাকে এই বিপদে প্রতিদান দিন এবং এর চেয়ে উত্তম কিছু দান করুন।)

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button