ইসলাম ধর্ম

সর্বাধিক হাদিস বর্ণনাকারী সাহাবি হযরত আবু হুরায়রা (রা.)-এর জীবন ও কর্ম

ইসলামিক বিচিত্রা ডেস্ক: সিরিয়ার প্রাচীন নগরী দামেস্কে চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর অন্যতম বিশিষ্ট সাহাবি হযরত আবু হুরায়রা (রা.)। ইসলামের ইতিহাসে হাদিস সংরক্ষণে যার অবদান অতুলনীয়। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সাহাবিদের মধ্যে তিনিই সবচেয়ে বেশি হাদিস বর্ণনা করেছেন।

নাম ও বংশপরিচয়: হযরত আবু হুরায়রা (রা.) দক্ষিণ আরবের আযদ গোত্রের সুলায়ম ইবন ফাহাম বংশে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম সাখর এবং মাতার নাম উম্মিয়া বিনতে সফীহ (মতান্তরে মায়মুনা)। হিজরতের বেশ কিছুকাল পূর্বে তাঁর জন্ম। ইসলাম গ্রহণের আগে তাঁর নাম নিয়ে ভিন্নমত থাকলেও প্রসিদ্ধ অভিমত হলো, তখন তাঁর নাম ছিল আবদুশ শামস বা আবদে উমর। ইসলাম কবুল করার পর তাঁর নাম রাখা হয় ‘আবদুর রহমান’।

যেভাবে হলেন ‘আবু হুরায়রা’: আবদুর রহমান নাম ছাপিয়ে তিনি বিশ্বজুড়ে ‘আবু হুরায়রা’ নামেই সর্বাধিক পরিচিত। এই নামকরণের পেছনে রয়েছে নবীজির সঙ্গে তাঁর এক মধুর স্মৃতি। ‘আবু হুরায়রা’ অর্থ বিড়াল ছানার পিতা বা মালিক। তিনি বিড়াল ছানা খুব পছন্দ করতেন। একদিন জামার আস্তিনের নিচে একটি বিড়াল ছানা নিয়ে তিনি রাসুল (সা.)-এর দরবারে উপস্থিত হন। হঠাৎ সবার সামনে বিড়ালটি বেরিয়ে পড়লে রাসুল (সা.) কৌতুক করে তাঁকে সম্বোধন করেন, ‘হে বিড়ালের পিতা!’ এরপর থেকেই তিনি এই উপনামে খ্যাত হন।

এ ছাড়া তাঁকে ‘আবু তুরাব’ বা মাটির পিতা নামেও ডাকা হতো। একদিন তাঁকে মাটিতে শুয়ে থাকতে দেখে নবীজি (সা.) আদর করে বলেছিলেন, ‘কি হে আবু তুরাব! মাটিতে শুয়ে আছ কেন?’

ইসলাম গ্রহণ ও যুদ্ধে অংশগ্রহণ: হিজরি সপ্তম বর্ষে (৬২৯ খ্রিস্টাব্দ) খাইবার যুদ্ধের প্রাক্কালে তিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। তখন তাঁর বয়স ছিল আনুমানিক ৩০ বছর। ইসলাম গ্রহণের পর তিনি রাসুল (সা.)-এর ছায়াসঙ্গী হয়ে ওঠেন এবং তাঁর সঙ্গে প্রতিটি যুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন। প্রখ্যাত ঐতিহাসিক ইবনে আসিরের মতে, তিনি রাসুল (সা.)-এর সঙ্গে সব যুদ্ধেই উপস্থিত ছিলেন।

মায়ের ইসলাম গ্রহণ ও নবীজির দোয়া: প্রথম জীবনে আবু হুরায়রা (রা.)-এর বৃদ্ধা মা ছিলেন অংশুবাদী। তিনি মাকে প্রতিনিয়ত ইসলামের দাওয়াত দিতেন, কিন্তু মা তা প্রত্যাখ্যান করতেন। একদিন দাওয়াত দিলে তাঁর মা রাসুল (সা.) সম্পর্কে কটু কথা বলেন। এতে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন আবু হুরায়রা (রা.)। তিনি কাঁদতে কাঁদতে নবীজির দরবারে গিয়ে বলেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল! আমি আমার মাকে ইসলামের দাওয়াত দিই, কিন্তু তিনি মানেন না। আজ তিনি আপনার সম্পর্কে এমন কথা বলেছেন, যা আমাকে ভীষণ কষ্ট দিয়েছে। আপনি দোয়া করুন, আল্লাহ যেন আমার মায়ের হৃদয়কে ইসলামের আলোয় আলোকিত করেন।’
রাসুল (সা.) তখন দোয়া করলেন, ‘হে আল্লাহ! আবু হুরায়রার মাকে হেদায়েত দান করো।’ নবীজির দোয়ার বরকতে বাড়ি ফিরে তিনি দেখতে পান, তাঁর মা ইসলাম গ্রহণ করেছেন।

হাদিস শাস্ত্রে অবিস্মরণীয় অবদান: জ্ঞানপিপাসু এই সাহাবি আসহাবে সুফফার সদস্য ছিলেন। নিজের স্মরণশক্তি ও নবীজির সার্বক্ষণিক সান্নিধ্যের কারণে সাহাবিদের মধ্যে তিনিই সর্বাধিক হাদিস বর্ণনা করেছেন। তাঁর বর্ণিত হাদিসের সংখ্যা ৫,৩৭৪টি (মতান্তরে ৫,৩৭৫টি)। এ কারণে তাঁকে ‘রাবিদের নেতা’ বা বর্ণনাকারীদের সর্দার বলা হয়। ইমাম বুখারির মতে, প্রায় আট শতাধিক রাবি বা বর্ণনাকারী তাঁর কাছ থেকে হাদিস বর্ণনা করেছেন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button