
নিজস্ব প্রতিবেদক: সম্প্রতি মাধবদীকে কেন্দ্র করে সংঘটিত ভূমিকম্পটি কেবল একটি সাধারণ ভূকম্পন নয়, বরং এটি মাটির গভীরের এক ভয়ংকর টেকটোনিক পরিস্থিতির জানান দিচ্ছে। ভূতাত্ত্বিক বিশ্লেষণে উঠে এসেছে, ভূমিকম্পের এই উৎপত্তিস্থলটি মূলত ‘বেঙ্গল ফোরডিপ’ (Bengal Foredeep) নামক একটি বিশাল ও ভূতাত্ত্বিকভাবে অত্যন্ত সক্রিয় অববাহিকার অংশ। ভারতীয় প্লেট, বার্মা মাইক্রোপ্লেট এবং তিব্বত প্লেটের সংযোগস্থলে অবস্থিত এই জটিল টেকটোনিক অঞ্চলটি বাংলাদেশ ও আশপাশের এলাকার জন্য বড় ঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বিশাল এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই ফোরডিপের সীমানা পশ্চিমে ভাগীরথী নদী, পূর্ব ও উত্তর-পূর্বে ব্রহ্মপুত্র ও মেঘনা নদী, উত্তরে ব্রহ্মপুত্র নদ এবং দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত। এর পূর্ব প্রান্তে রয়েছে ‘ইন্দো-বার্মা সাবডাকশন জোন’। ঠিক এই জায়গাটিতেই ভারতীয় প্লেট ক্রমাগত বার্মা মাইক্রোপ্লেটের নিচে তলিয়ে যাচ্ছে। এই সাবডাকশন প্রক্রিয়ার ফলে এই অঞ্চলের ভূমি প্রতিনিয়ত উত্থান (Uplift) ও অবনমন (Subsidence) প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, যা ভূমিকম্পের ঝুঁকি বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বেঙ্গল ফোরডিপের একটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হলো এর ওপর জমে থাকা প্রায় ১৬ কিলোমিটার গভীর পলিমাটির স্তর। এই স্তরের ঠিক নিচেই রয়েছে মেসোজয়িক যুগের পাথরের স্তর। ভূতাত্ত্বিক গঠনশৈলীর কারণেই এই অঞ্চলে ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল বা কেন্দ্র কখনোই খুব বেশি গভীর হয় না। বিজ্ঞানের ভাষায়, ভূমিকম্পের কেন্দ্র ভূপৃষ্ঠের যত কাছে বা অগভীর হবে, তার কম্পন বা ‘শকিং’ তত বেশি হবে এবং বিস্তৃতিও বেশি ঘটবে। গত ২০২৩ সাল এবং আজকের ভূমিকম্পের প্রকৃতি বিশ্লেষণ করলে এই দাবির সত্যতা পাওয়া যায়।
উদ্বেগের বিষয় হলো, এমন সংবেদনশীল ও সক্রিয় ভূ-কাঠামো নিয়ে দেশে তেমন কোনো গভীর গবেষণা নেই। উল্টো এই ফোরডিপ অঞ্চলের ওপর অপরিকল্পিত ও ভারি উন্নয়ন কার্যক্রম মাটির ভেতরের স্তরকে আরও অস্থির করে তুলছে।
বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলছেন, মাধবদীর এই ভূমিকম্পগুলোকে হালকাভাবে দেখার সুযোগ নেই। অগভীর উৎসের কারণে অদূর ভবিষ্যতে এই ‘বেঙ্গল ফোরডিপ’ থেকে সৃষ্ট শক্তিশালী ভূমিকম্প শুধু ঢাকা বা বাংলাদেশ নয়, ভারতের সীমান্তবর্তী রাজ্যগুলোতেও ভয়াবহ বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।



