ভূমিকম্প কিয়ামতের আলামত: হাদিসের আলোকে আত্মরক্ষা ও আমল
ধর্ম ও জীবন ডেস্ক: ইসলামি শরিয়তের দৃষ্টিতে ভূমিকম্প কেবল একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা ভৌগোলিক ঘটনা নয়; বরং এটি মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে বান্দার জন্য একটি পরীক্ষা এবং কঠোর সতর্কবার্তা। পবিত্র কুরআন ও হাদিসে এ বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে।
মহান আল্লাহ তায়ালা মানুষকে বিভিন্ন দুর্যোগ দিয়ে পরীক্ষা করেন। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কুরআনের সূরা বাকারার ১৫৫ নম্বর আয়াতে ইরশাদ হয়েছে:
“আর আমি অবশ্যই তোমাদের পরীক্ষা করব কিছু ভয়, ক্ষুধা এবং জান-মাল ও ফল-ফলাদির স্বল্পতার মাধ্যমে। আর তুমি ধৈর্যশীলদের সুসংবাদ দাও।”
রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর হাদিস থেকে জানা যায়, দুনিয়ার বুকে ভূমিকম্প বা দুর্যোগ মুমিনদের জন্য এক প্রকার শাপমোচনকারী শাস্তি, যাতে পরকালে তারা শাস্তি থেকে রেহাই পায়। হযরত আবু মুসা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:
“আমার এ উম্মত দয়াপ্রাপ্ত, পরকালে এদের কোনো শাস্তি হবে না। আর ইহকালে তাদের শাস্তি হলো— ফিতনাসমূহ, ভূমিকম্প ও যুদ্ধবিগ্রহ।” (আবু দাউদ: ৪২৭৮)
নবীজি (সা.)-এর ভবিষ্যৎবাণী অনুযায়ী, অধিক পরিমাণে ভূমিকম্প হওয়া কিয়ামতের অন্যতম আলামত। সমাজে যখন পাপাচার বৃদ্ধি পায়, তখন প্রকৃতিতে এমন বিপর্যয় নেমে আসে। জামে তিরমিজি শরিফের ২২১২ নম্বর হাদিসে উল্লেখ করা হয়েছে—
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “এ উম্মত ভূমিকম্প, আকৃতি বিকৃতি এবং পাথরবর্ষণের মুখোমুখি হবে।”
তখন একজন সাহাবি জিজ্ঞাসা করলেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল! সেটা কখন হবে?’
জবাবে তিনি বলেন, “যখন গায়িকা এবং বাদ্যযন্ত্রের প্রকাশ ঘটবে এবং মদ্যপানের সয়লাব হবে।”
ভূমিকম্প বা যেকোনো আকস্মিক বিপদ থেকে রক্ষা পেতে আলেমসমাজ বেশি বেশি তওবা, ইস্তেগফার ও দোয়া ইউনুস পাঠ করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। এছাড়া হাদিসে বর্ণিত একটি বিশেষ দোয়া সকাল-সন্ধ্যা তিনবার পাঠ করলে আসমান ও জমিনের কোনো কিছুই ওই ব্যক্তির ক্ষতি করতে পারে না।
দোয়াটি হলো:
উচ্চারণ: বিসমিল্লা-হিল্লাযী লা ইয়াদ্বুররু মা‘আসম ইহী শাইউন ফিল আরদ্বি ওয়ালা ফিস্ সামা-ই, ওয়াহুয়াস সামী‘উল ‘আলীম।
অর্থ: “আল্লাহর নামে; যাঁর নামের বরকতে আসমান ও জমিনে কোনো কিছুই কোনো ক্ষতি করতে পারে না। আর তিনি সর্বশ্রোতা, মহাজ্ঞানী।” (আবু দাউদ: ৫০৮৮)
দুর্যোগের মুহূর্তে আতঙ্কিত না হয়ে আল্লাহর ওপর ভরসা রাখা এবং এই আমলগুলো করাই মুমিনের বৈশিষ্ট্য।



