সমাজ যখন এই ১৫ অপরাধে ডুবে যাবে, তখনই আসবে ভূমিকম্প: মহানবী (সা.)-এর সতর্কবার্তা
ইসলাম ও জীবন ডেস্ক: সাম্প্রতিক সময়ে ভূমিকম্পের ঘনঘটা মানুষকে ভাবিয়ে তুলেছে। ইসলামি চিন্তাবিদ ও আলেমদের মতে, প্রাকৃতিক দুর্যোগ কেবল ভূ-তাত্ত্বিক ঘটনা নয়, বরং এটি মানবসমাজে ছড়িয়ে পড়া পাপাচার ও অন্যায়ের প্রতি মহান আল্লাহর সতর্কবার্তা। সমাজ যখন নির্দিষ্ট কিছু অপরাধে লিপ্ত হয়, তখন আল্লাহ তায়ালা সতর্কতাস্বরূপ এমন আজাব প্রেরণ করেন।
আজ থেকে প্রায় দেড় হাজার বছর আগে বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) উম্মতকে এমন ১৫টি বিশেষ অপরাধ বা সামাজিক অবক্ষয়ের বিষয়ে সতর্ক করেছিলেন, যার প্রাদুর্ভাব ঘটলে ভূমিকম্পসহ ভয়াবহ প্রাকৃতিক বিপর্যয় নেমে আসতে পারে। হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত জামে তিরমিজি শরিফের ২২১১ নম্বর হাদিসে এই ভীতিপ্রদ পরিস্থিতির বর্ণনা রয়েছে।
রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর হাদিস অনুযায়ী, সমাজে যখন নিচের ১৫টি লক্ষণ বা অপরাধ প্রকট আকার ধারণ করবে, তখনই বিপর্যয়ের অপেক্ষা করতে হবে:
১. রাষ্ট্রীয় সম্পদের অপব্যবহার: যখন ‘গনিমত’ বা রাষ্ট্রীয় ও জাতীয় সম্পদকে ব্যক্তিগত সম্পদ হিসেবে ভোগদখল করা হবে।
২. আমানতের খেয়ানত: গচ্ছিত আমানতের মালকে যখন লুটের মালের মতো মনে করে আত্মসাৎ করা হবে।
৩. জাকাত প্রদানে অনীহা: জাকাত দেওয়াকে যখন মানুষ ইবাদত না মনে করে জরিমানা বা বোঝা মনে করবে।
৪. ধর্মহীন শিক্ষা: যখন দ্বীনি বা ধর্মীয় উদ্দেশ্য ছাড়া কেবল দুনিয়াবি স্বার্থে জ্ঞান অর্জন করা হবে।
৫. স্ত্রীর আনুগত্য ও মায়ের অবাধ্যতা: পুরুষ যখন স্ত্রীর অন্ধ অনুগত হয়ে মায়ের সঙ্গে দুর্ব্যবহার বা অবাধ্যতা করবে।
৬. বন্ধুকে আপন ও বাবাকে পর ভাবা: যখন সন্তান বন্ধু-বান্ধবকে কাছে টেনে নেবে, কিন্তু জন্মদাতা পিতাকে দূরে ঠেলে দেবে।
৭. মসজিদে হট্টগোল: যখন পবিত্র মসজিদে উচ্চস্বরে কথাবার্তা ও হট্টগোল করা হবে।
৮. পাপাচারী নেতৃত্ব: যখন সমাজের বা গোত্রের নেতৃত্ব ফাসিক বা পাপাচারী ব্যক্তির হাতে চলে যাবে।
৯. নিকৃষ্ট ব্যক্তির ক্ষমতা: যখন জাতির সবচেয়ে নিকৃষ্ট ও অধম ব্যক্তিটি সমাজের কর্ণধার বা নেতা হবে।
১০. ভয়ের কারণে সম্মান: কোনো ব্যক্তির অনিষ্ট বা ক্ষতির ভয়ে মানুষ যখন তাকে সম্মান প্রদর্শন করবে।
১১. নর্তকী ও বাদ্যযন্ত্রের সয়লাব: যখন ঘরে ঘরে গায়িকা, নর্তকী ও বাদ্যযন্ত্রের ব্যাপক বিস্তার ঘটবে।
১২. মদ্যপান: যখন প্রকাশ্যে ও ব্যাপকভাবে মদ্যপান বা নেশাজাতীয় দ্রব্য গ্রহণ করা হবে।
১৩. পূর্বসূরিদের অভিশাপ: যখন এই উম্মতের পরবর্তী প্রজন্মের লোকেরা তাদের পূর্ববর্তী মনিষীদের অভিশাপ দেবে বা গালিগালাজ করবে।
হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, এই কাজগুলো যখন সমাজে স্বাভাবিক হয়ে যাবে, তখন যেন মানুষ অপেক্ষা করে—
- লোহিত বা অগ্নিঝরা বাতাসের (রক্তিম ঝড়)।
- ভয়াবহ ভূমিকম্পের।
- ভূমিধস বা ভূমি ধসে যাওয়ার।
- মানুষের আকৃতি বিকৃত হয়ে যাওয়ার।
- পাথর বর্ষণের।
নবীজি (সা.) উপমা দিয়ে বলেছেন, পুরোনো তসবিহ বা পুঁতির মালা ছিঁড়ে গেলে দানাগুলো যেমন একের পর এক খসে পড়তে থাকে, ঠিক তেমনি এই আজাব বা বিপদগুলো একটার পর একটা আসতে থাকবে।
বর্তমান সমাজের দিকে তাকালে এই লক্ষণগুলোর অনেক কিছুই দৃশ্যমান। তাই মুমিনদের উচিত, আল্লাহর কাছে খাঁটি তওবা করে পাপমুক্ত জীবনযাপনে ফিরে আসা।



