ইসলাম ধর্মশিক্ষা

হাসি-তামাশা ও কৌতুক: ইসলামে মিথ্যার কোনো স্থান নেই

ধর্ম ও জীবন ডেস্ক: ইসলাম একটি ভারসাম্যপূর্ণ জীবনব্যবস্থা, যেখানে মানুষের স্বভাবজাত আনন্দ, বিনোদন বা হাসি-কৌতুককে নিরুৎসাহিত করা হয়নি। বরং ইসলামে মার্জিত রসবোধ ও কৌতুককে উৎসাহ দেওয়া হয়েছে। তবে বিনোদনের নামে মিথ্যা বলা বা কাউকে ছোট করা ইসলামে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ।

রাসূলুল্লাহ (সা.) এবং তাঁর সাহাবায়ে কেরাম (রা.) নিজেদের মধ্যে হাসি-কৌতুক করতেন, তবে তার মধ্যেও সত্যের মাপকাঠি বজায় রাখতেন। তাঁরা কখনোই হাসানোর উদ্দেশ্যে মিথ্যার আশ্রয় নিতেন না।

মানুষকে হাসানোর জন্য বানিয়ে মিথ্যা কথা বলাকে নবীজি (সা.) ধ্বংসাত্মক কাজ বলে অভিহিত করেছেন। জামে তিরমিজি ও আবু দাউদ শরিফের হাদিসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:
“যে ব্যক্তি মানুষকে হাসানোর জন্য কথা বলে এবং তাতে মিথ্যার আশ্রয় নেয়, তার জন্য ধ্বংস! তার জন্য ধ্বংস! তার জন্য ধ্বংস!” (তিরমিজি: ২৩১৫; আবু দাউদ: ৪৯৯০)

অন্যদিকে, যারা কৌতুক করার সময়ও মিথ্যা পরিহার করে, তাদের জন্য জান্নাতের সুসংবাদ রয়েছে। আবু দাউদ শরিফের একটি হাদিসে (৪৮০০) রাসূলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেন:
“আমি সেই ব্যক্তির জন্য জান্নাতের মধ্যবর্তী স্থানে একটি ঘরের জিম্মাদার হচ্ছি, যে ব্যক্তি কৌতুক বা হাসির ছলেও মিথ্যা বলে না।”

হাসি-তামাশার ক্ষেত্রে কোনটি মিথ্যা আর কোনটি বৈধ উদাহরণ, তা নিয়ে অনেকের মনে সংশয় থাকে। সৌদি আরবের জুবাইল দাওয়াহ অ্যান্ড গাইডেন্স সেন্টারের দাঈ শায়খ আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল এ বিষয়ে স্পষ্ট ব্যাখ্যা দিয়েছেন।

তিনি জানান, যদি নির্দিষ্ট কোনো ব্যক্তির নাম উল্লেখ করে বা ইঙ্গিত করে এমন কোনো কথা বলা হয়, যা বাস্তবে তিনি করেননি বা বলেননি—তবে তা মিথ্যা বলে গণ্য হবে। কিন্তু কাউকে নির্দিষ্ট না করে উদাহরণ বা উপমা হিসেবে কোনো কাল্পনিক ঘটনার অবতারণা করা মিথ্যার অন্তর্ভুক্ত হবে না।

এ প্রসঙ্গে পবিত্র কুরআনের সূরা কাহাফের ৩২ নম্বর আয়াত ও সূরা যুমারের ২৯ নম্বর আয়াতের উদ্ধৃতি দেওয়া হয়। যেখানে আল্লাহ তায়ালা ‘দুই ব্যক্তির উদাহরণ’ বা ‘মালিকের উদাহরণ’ পেশ করেছেন, যা বাস্তবিক কোনো নির্দিষ্ট ব্যক্তির ঘটনা নয় বরং উপমা। প্রখ্যাত আলেম আল্লামা উসাইমিন (রহ.)-এর মতে, শিক্ষণীয় বা বিনোদনের জন্য এমন সাধারণ উদাহরণ দেওয়া বৈধ।

ইসলামি শরিয়ত মতে, হাসি-কৌতুক জায়েজ হওয়ার জন্য দুটি মূল শর্ত মেনে চলা জরুরি:

১. নির্দিষ্ট ব্যক্তির নামে অপবাদ না দেওয়া: কোনো নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে নিয়ে এমন কোনো গল্প বা কৌতুক বলা যাবে না, যা সত্য নয়। তা মুখে বলা হোক, লেখা হোক বা অভিনয়ের মাধ্যমে হোক—সবই মিথ্যার অন্তর্ভুক্ত এবং বড় অন্যায়।

২. মিথ্যা বর্জন ও পরিমিতিবোধ: কেবল মানুষকে হাসানোর জন্য মিথ্যা গল্প সাজানো যাবে না। বাস্তবসম্মত কথা বা ঘটনার মাধ্যমে কৌতুক করা উত্তম চরিত্রের অংশ। তবে হাসি-তামাশা যেন অতিরিক্ত পর্যায়ে না যায়। কারণ, অতিরিক্ত হাসি-ঠাট্টা মানুষের ব্যক্তিত্ব কমিয়ে দেয় এবং অন্তরকে মৃত বা অনুভূতিহীন করে তোলে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button