অপরাধ বিচিত্রা ডেস্ক: সন্তানের চরিত্র গঠন ও নৈতিক শিক্ষা প্রদানে বাবার ভূমিকা অনস্বীকার্য। একজন আদর্শ বাবা কেবল সন্তানের ভরণপোষণই করেন না, বরং তাকে একজন প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনাও দেন। সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এবং বিভিন্ন মহলে একজন বাবার তার ছেলেকে দেওয়া ১৬টি উপদেশ বেশ প্রশংসিত হচ্ছে। এই উপদেশগুলো কেবল একটি পরিবারের জন্য নয়, বরং সমাজ গঠনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
নিচে সেই ১৬টি উপদেশ তুলে ধরা হলো, যা একজন সন্তানকে জীবনের সঠিক পথে চলতে সহায়তা করবে:
১. ধর্মীয় অনুশাসন ও জ্ঞানার্জন: সময়ের সঠিক ব্যবহার করে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা এবং দ্বীনি শিক্ষা অর্জন করা। সর্বদা আল্লাহ ও তার রাসূলের (সা.) নির্দেশিত পথে চলা।
২. শ্রমের মর্যাদা: জুতা সেলাই বা রং করার সময় মেরামতকারীর মুখের সামনে পা বাড়িয়ে না দেওয়া। বরং জুতা খুলে, ধুলোবালি মুছে তাদের হাতে দেওয়া—এটি ভদ্রতা ও বিনয়ের পরিচায়ক।
৩. গৃহকর্মীদের সম্মান: কাজের লোক বা গৃহকর্মীকে ‘কামলা’ বা ‘বুয়া’ বলে ডাকার পরিবর্তে সম্মানসূচক সম্বোধন করা। মনে রাখতে হবে, তারাও কারো না কারো স্বজন।
৪. কাউকে তুচ্ছ না করা: পদমর্যাদা, শিক্ষা বা বয়সে কেউ ছোট হলেও তাকে অবজ্ঞা করা যাবে না। অন্যকে ছোট করলে দিনশেষে নিজের ব্যক্তিত্বই খাটো হয়।
৫. সৎ পথে উন্নতি: পড়াশোনা ও কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে জীবনে উন্নতি করতে হবে। তবে অন্যকে ডিঙিয়ে বা কারো ক্ষতি করে ওপরে ওঠার চেষ্টা করা অনুচিত।
৬. গোপন দান: কাউকে সাহায্য করার পর তার দিকে ফিরে না তাকানো, যাতে গ্রহীতা লজ্জিত বোধ না করেন। দান হবে নিঃস্বার্থ।
৭. দাতার হাত: মানুষের কাছে পাওয়ার প্রত্যাশার চেয়ে দেওয়ার মানসিকতা বেশি রাখতে হবে। কারণ, গ্রহণকারীর চেয়ে প্রদানকারীর হাত সর্বদা ওপরে থাকে।
৮. পারিবারিক মর্যাদা রক্ষা: এমন কোনো কাজ করা যাবে না, যাতে নিজের এবং পরিবারের দিকে কেউ আঙুল তোলার সুযোগ পায়।
৯. দায়িত্ববোধ: পুরুষ হিসেবে জন্ম নেওয়ার কারণে পরিবারের ও সমাজের প্রতি নিজের দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়া যাবে না।
১০. আচরণের মাধ্যমে পরিচয়: মানুষের বাহ্যিক পোশাকে তার পরিচয় লেখা থাকে না। কিন্তু তার ব্যবহারই বুঝিয়ে দেয় তিনি কোন পরিবার থেকে উঠে এসেছেন।
১১. মা ও স্ত্রীর ভারসাম্য: মায়ের কথায় স্ত্রীকে অথবা স্ত্রীর কথায় মাকে দোষী সাব্যস্ত করা যাবে না। সংসারে শান্তি বজায় রাখতে দুজনকে সমান গুরুত্ব দিয়ে ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে।
১২. আতিথেয়তার শিষ্টাচার: কারো বাড়িতে নিমন্ত্রণে গেলে ক্ষুধার্ত বা লোভাতুর দৃষ্টিতে খাবারের অপেক্ষা না করা। বাসা থেকে সামান্য কিছু খেয়ে যাওয়া ভদ্রতার অংশ।
১৩. খাবারের সমালোচনা না করা: অন্যের বাড়ির খাবারের স্বাদ নিয়ে কখনোই সমালোচনা করা উচিত নয়। কেউ ইচ্ছে করে খাবার বিস্বাদ করে না।
১৪. মানুষ হওয়ার সাধনা: কেবল বড় বা ধনী হওয়ার জন্য নয়, বরং একজন ভালো ‘মানুষ’ হওয়ার জন্য জীবন অতিবাহিত করতে হবে।
১৫. শ্বশুরবাড়ির সম্মান: নিজের বাবা-মাকে যতটুকু সম্মান করা হয়, শ্বশুর-শাশুড়িকেও ততটুকু সম্মান দিতে হবে। এমন আচরণ করতে হবে যেন তারা তাদের মেয়েকে আপনার বাড়িতে পাঠাতে নিশ্চিন্ত বোধ করেন।
১৬. বিনয় ও প্রতিবাদ: চলাফেরা ও কথাবার্তায় সর্বদা ভদ্র ও নম্র হতে হবে। তবে অন্যায়ের সঙ্গে কখনোই আপস করা যাবে না।
সমাজবিজ্ঞানীদের মতে, বর্তমান যান্ত্রিক সময়ে বাবার কাছ থেকে সন্তানের এমন নৈতিক শিক্ষা পাওয়া অত্যন্ত জরুরি। এই উপদেশগুলো মেনে চললে পারিবারিক ও সামাজিক অবক্ষয় রোধ করা সম্ভব।



