ট্রাইব্যুনালে জিয়াউলের আইনজীবীর বিরুদ্ধে সময়ক্ষেপণের অভিযোগ, ‘বাড়তি সুবিধা’ নিয়ে ক্ষোভ
নিজস্ব প্রতিবেদক: আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে (আইসিটি) গণহত্যা ও গুমের অভিযোগে অভিযুক্ত এনটিএমসির সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) জিয়াউল আহসানের বিচারিক কার্যক্রম চলাকালে তার আইনজীবী নাজনীন নাহারের আচরণ নিয়ে তীব্র অসন্তোষ ও বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। সম্পর্কে জিয়াউল আহসানের বোন এই আইনজীবীর বিরুদ্ধে আদালতের মূল্যবান সময় নষ্ট করা এবং আইনি এখতিয়ারের বাইরে গিয়ে বাড়তি সুবিধা আদায়ের চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে।
সোমবার ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম শুনানির এক পর্যায়ে উল্লেখ করেন যে, বিবাদী পক্ষের এই আইনজীবী আদালতের প্রচুর সময়ক্ষেপণ করছেন। আদালত সংশ্লিষ্টদের মতে, এর আগেও জিয়াউল আহসানকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করার দিন তার আইনজীবী নথিপত্র হস্তান্তরের অজুহাতে প্রায় ৪৫ মিনিট সময় নষ্ট করেছিলেন। যদিও আদালতের নিয়ম অনুযায়ী ওই মুহূর্তে সরাসরি নথিপত্র দেওয়ার বিধান নেই, তবুও তিনি দীর্ঘ সময় ধরে তর্ক চালিয়ে যান, যা উপস্থিত আইনজীবী ও বিচারপ্রক্রিয়ার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
সূত্রের খবর, জিয়াউল আহসানকে জিজ্ঞাসাবাদের সময় তার আইনজীবী নাজনীন নাহার ভাইয়ের পাশে বসে থাকার দাবি জানিয়েছেন। বর্তমানে প্রচলিত আইনের বাইরে গিয়েও তাকে জিজ্ঞাসাবাদের সময় পাশের কক্ষে বসার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে এবং আসামির সঙ্গে কথা বলার সুযোগও তিনি পাচ্ছেন। তবে ভুক্তভোগী ও বাদীপক্ষের অভিযোগ, এই সুযোগের অপব্যবহার করে তিনি এখন সরাসরি ইন্টারোগেশন কক্ষে আসামির পাশে বসার আবদার করছেন।
এ বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে গুম ও নির্যাতনের শিকার ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা বলেন, জিয়াউল আহসানের সময়ে নিরপরাধ মানুষদের চোখ বেঁধে, হাতকড়া পরিয়ে অমানবিক নির্যাতন করা হতো। সেখানে মূল অভিযুক্তকে বর্তমানে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এরপরেও তার আইনজীবীর পাশে বসে থাকার আবদারকে ‘বিলাসিতা’ ও ভুক্তভোগীদের প্রতি উপহাস হিসেবে দেখছেন তারা।
সংশ্লিষ্ট মহলের অভিযোগ, জিয়াউল আহসানের বোন হিসেবে নাজনীন নাহার বিচারিক প্রক্রিয়াকে বিলম্বিত করার চেষ্টা করছেন। সাধারণত পরিবারের কোনো সদস্য গুরুতর অপরাধে জড়ালে অন্যরা যেখানে নিজেদের আড়াল করতে চান, সেখানে এই আইনজীবীর মরিয়া আচরণ সন্দেহজনক বলে মনে করছেন অনেকে। তার কর্মকাণ্ড খতিয়ে দেখার দাবিও উঠেছে।
ভুক্তভোগী ও অধিকারকর্মীদের মতে, আইনি সহায়তা পাওয়ার অধিকার সবার আছে। কিন্তু আইনের ফাঁকফোকর ব্যবহার করে বিচার প্রক্রিয়াকে দীর্ঘায়িত করা বা অযৌক্তিক সুবিধা দাবি করা গ্রহণযোগ্য নয়। জিজ্ঞাসাবাদের সময় আসামিকে যেন কোনো প্রকার অননুমোদিত সুবিধা না দেওয়া হয়, সে বিষয়ে ট্রাইব্যুনালের কঠোর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তারা। একইসঙ্গে অভিযুক্তদের সামাজিকভাবে বয়কটের আহ্বানও জানানো হয়েছে।



