ফজরের নামাজে যেভাবে বদলে গেল তরুণ ইমরানের জীবন
ইসলামিক বিচিত্রা ডেস্ক: শহরের আর দশজন সাধারণ তরুণের মতোই ছিল ইমরানের জীবন। যান্ত্রিক ব্যস্ততা, রাত জেগে মোবাইল স্ক্রিনে চোখ রাখা আর বেলা করে ঘুম থেকে ওঠা—এটাই ছিল তার নিত্যদিনের রুটিন। ফজরের আজান শোনার সৌভাগ্য বা সময় কোনোটিই তার হয়ে উঠত না। কিন্তু মায়ের একটি উপদেশ আর এক রাতের অদ্ভুত অভিজ্ঞতায় আমূল বদলে গেছে তার জীবন। ভোরের সেজদায় সে খুঁজে পেয়েছে এক নতুন পৃথিবী।
জানা যায়, ছেলের এমন জীবনযাপন দেখে ইমরানের মা প্রায়ই দীর্ঘশ্বাস ফেলতেন। তিনি বোঝাতেন, “ফজরের নামাজ শুধু ইবাদত নয়, এটি রিজিক, শান্তি ও আল্লাহর রহমতের দরজা।” কিন্তু ঘুমের আলস্য কাটিয়ে ওঠা ইমরানের জন্য ছিল কঠিন। তবে এক রাতে একটি স্বপ্ন তার বিবেককে নাড়া দেয়। স্বপ্নে সে দেখে, অন্ধকার কুয়াশা ভেদ করে এক অপার্থিব আলো তাকে ডাকছে। কানে ভেসে আসে এক দৈববাণী—‘ভোরের আলো তোমার অপেক্ষায়।’
ঘুম ভেঙে আজানের ধ্বনি শুনে আর বিছানায় থাকতে পারেননি ইমরান। ওজুর শীতল পানিতে আলস্য ধুয়ে সেই ভোরেই পা বাড়ান মসজিদের দিকে। ভোরের স্নিগ্ধ বাতাস আর মসজিদের পবিত্রতা তার হৃদয়ে এক অনাবিল প্রশান্তি এনে দেয়। সিজদায় লুটিয়ে পড়ে অশ্রুসজল চোখে সে অনুতপ্ত হয় নিজের অতীতের জন্য।
মসজিদের ইমামের বয়ানে রাসুল (সা.)-এর সেই হাদিসটি—‘ফজরের দুই রাকাত সুন্নত দুনিয়া ও দুনিয়ার সব কিছুর চেয়ে উত্তম’—ইমরানের হৃদয়ে গভীর রেখাপাত করে। সে উপলব্ধি করে, কত বড় নিয়ামত থেকে সে এতদিন বঞ্চিত ছিল।
এরপর থেকে আর পেছনে তাকাতে হয়নি তাকে। নিয়মিত ফজরের নামাজ আদায়ে তার জীবনে আসতে শুরু করে অলৌকিক পরিবর্তন। রুক্ষ মেজাজ হয়ে ওঠে শান্ত, কাজে বাড়ে মনোযোগ এবং মায়ের দোয়ায় সংসারে আসে বরকত। বন্ধুদের বিস্ময়ের জবাবে ইমরান জানায়, ভোরের নামাজের অভ্যাসই তার আত্মিক পরিবর্তনের মূল চাবিকাঠি।
শীতের তীব্র ভোরেও যখন উষ্ণ বিছানা ছাড়তে কষ্ট হতো, তখন মায়ের উৎসাহ তাকে শক্তি জুগিয়েছে। এখন মসজিদের মুসল্লিরাও তার চেহারায় ফুটে ওঠা প্রশান্তির প্রশংসা করেন।
ইমরানের এই বদলে যাওয়া জীবন তরুণ প্রজন্মের জন্য এক অনন্য উদাহরণ। ফজরের নামাজ যে কেবল ইবাদত নয়, বরং এটি যে মানুষের চরিত্র গঠন, আত্মশুদ্ধি এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভের এক অমোঘ মাধ্যম—ইমরানের জীবন তারই প্রমাণ বহন করে।



