অপরাধআইন ও বিচারপ্রশাসনবাংলাদেশমিডিয়া

লাশ ঘরে রেখেই ঘাতক জুটির বিকৃত উল্লাস, অতঃপর ২৬ টুকরো

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজধানীর হাইকোর্ট মাজার গেট সংলগ্ন এলাকা থেকে প্লাস্টিকের ড্রামে ভর্তি ব্যবসায়ী আশরাফুল হকের ২৬ টুকরো লাশ উদ্ধারের ঘটনায় বেরিয়ে এসেছে রোমহর্ষক তথ্য। নিহতের বন্ধু ও হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী জারজ আলী এবং তার প্রেমিকা শামীমা আক্তারকে ৫ দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছেন আদালত। পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, আশরাফুলকে হত্যার পর তার মৃতদেহ ওই ঘরে রেখেই আসামিরা একান্তে সময় কাটিয়েছেন এবং শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হয়েছেন।

সোমবার ঢাকার আদালতে তাদের হাজির করা হলে বিচারক রিমান্ডের এ আদেশ দেন।

তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, রংপুরের কাঁচামাল ব্যবসায়ী আশরাফুলের দীর্ঘদিনের বন্ধু ছিলেন জারজ আলী। জারজ ও শামীমার মধ্যে গত এক বছর ধরে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। ঘটনার মাসখানেক আগে জারজের প্ররোচনায় শামীমা আশরাফুলের সঙ্গে মুঠোফোনে সখ্যতা গড়ে তোলেন। পরিকল্পনা ছিল, আশরাফুলকে ঢাকায় এনে অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ভিডিও ধারণ করে ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হবে। সেই ছক অনুযায়ী গত ১১ নভেম্বর রংপুর থেকে জারজ ও আশরাফুল ঢাকায় আসেন এবং পরদিন শামীমাসহ শনির আখড়ার নূরপুর এলাকায় একটি বাসা ভাড়া নেন।

হত্যাকাণ্ডের বর্ণনায় জানা যায়, বাসায় পৌঁছানোর পর শামীমা কৌশলে শরবতের সঙ্গে কড়া ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে আশরাফুলকে পান করান। তিনি অচেতন হয়ে পড়লে জারজ ও শামীমা মিলে তার আপত্তিকর ভিডিও ধারণ করেন। এরপর আশরাফুলের হাত রশি দিয়ে বেঁধে এবং মুখ স্কচটেপ দিয়ে আটকে ফেলা হয়।

এ সময় জারজ আলী অতিরিক্ত ইয়াবা সেবন করে উত্তেজিত অবস্থায় হাতুড়ি দিয়ে আশরাফুলকে এলোপাতাড়ি আঘাত করতে থাকেন। শামীমা দাবি করেন, তিনি বাধা দিতে গেলে জারজ তাকেও মারধর করেন। মুখ আটকানো থাকায় এবং অতিরিক্ত আঘাতে শ্বাসরোধ হয়ে ঘটনাস্থলেই আশরাফুলের মৃত্যু হয়।

হত্যাকাণ্ডের পর আসামিরা মৃতদেহটি সেই ঘরেই ফেলে রাখেন। পুলিশের দেওয়া তথ্যমতে, লাশ ঘরে রেখেই জারজ ও শামীমা রাতে শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হন। পরদিন সকালে লাশ গুম করার পরিকল্পনা করেন তারা।

পরদিন স্থানীয় বাজার থেকে চাপাতি ও দুটি প্লাস্টিকের ড্রাম কেনেন জারজ। এরপর ঠান্ডা মাথায় বন্ধুর লাশ ২৬ টুকরো করে ড্রামে ভরেন। লাশ গুম করতে তারা একাধিকবার অটোরিকশা পরিবর্তন করেন। শেষমেশ হাইকোর্টের পানির পাম্প সংলগ্ন প্রধান সড়কের পাশে একটি গাছের নিচে ড্রাম দুটি ফেলে পালিয়ে যান।

পুলিশ জানিয়েছে, শামীমার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে শনির আখড়ার ওই বাসা থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত চাপাতি, রশি, স্কচটেপ এবং রক্তমাখা পোশাক উদ্ধার করা হয়েছে। রিমান্ডে আসামিদের কাছ থেকে আরও বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যাবে বলে আশা করছেন তদন্তকারীরা।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button