অপরাধদুর্নীতিপ্রশাসনবাংলাদেশমিডিয়া

এসপি সম্রাটের ‘ইমিগ্রেশন সিন্ডিকেট’: ভিজিট ভিসায় মালয়েশিয়ায় মানবপাচারের রমরমা বাণিজ্য

নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের ইমিগ্রেশন ব্যবস্থাকে পুঁজি করে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গড়ে উঠেছে এক শক্তিশালী মানবপাচার ও আদম ব্যবসার সিন্ডিকেট। অভিযোগ উঠেছে, পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের (এসবি) পুলিশ সুপার (এসপি) সম্রাট মোহাম্মদ আবু সুফিয়ান এই চক্রের মূল হোতা। তার ছত্রছায়ায় ভিজিট ভিসার আড়ালে ভুয়া নথিপত্র দিয়ে প্রতিদিন শত শত মানুষকে মালয়েশিয়ায় পাঠানো হচ্ছে, যার ফলে হুমকিতে পড়ছে দেশের ভাবমূর্তি এবং সর্বস্ব হারাচ্ছেন হাজারো ভুক্তভোগী।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, এই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে যারা বিদেশ যান, তাদের পাসপোর্টের বৈধতার চেয়ে বোর্ডিং পাসের ওপর দেওয়া বিশেষ সাংকেতিক চিহ্নই মুখ্য ভূমিকা পালন করে। যাত্রীদের বোর্ডিং পাসে কলমের খোঁচায় লেখা থাকে ‘এসএল’ (SL), ‘এসএস-ওকে’ (SS-OK) কিংবা ‘অপস স্যার’ (Ops Sir)-এর মতো গোপন কোড। সঙ্গে থাকে একটি নির্দিষ্ট স্বাক্ষর।

ইমিগ্রেশন কাউন্টারে দায়িত্বরত কর্মকর্তারা পাসপোর্টের ত্রুটি বা জাল নথিপত্র যাচাই করার পরিবর্তে কেবল এই কোড বা স্বাক্ষরটি খোঁজেন। ভুয়া ট্রেড লাইসেন্স, জাল ব্যাংক সলভেন্সি সার্টিফিকেট কিংবা নকল আইডি কার্ড—সবকিছুই এই এক স্বাক্ষরের জাদুতে ‘বৈধ’ বলে গণ্য হয়। ফলে কোনো প্রকার বাধা ছাড়াই ইমিগ্রেশন পার হয়ে বিমানে চড়ছেন যাত্রীরা।

গ্রামবাংলার সহজ-সরল মানুষদের মালয়েশিয়ায় স্থায়ী চাকরি ও উজ্জ্বল ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখিয়ে এই ফাঁদে ফেলা হয়। সিন্ডিকেটটি ৩ লাখ থেকে শুরু করে ৫ লাখ ৭০ হাজার টাকার ‘প্যাকেজ’-এর মাধ্যমে এই অবৈধ কাজ পরিচালনা করছে।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, চড়া সুদে ঋণ নিয়ে বা শেষ সম্বল বিক্রি করে তারা এই সিন্ডিকেটের হাতে টাকা তুলে দেন। কিন্তু মালয়েশিয়ায় পৌঁছানোর পর তাদের মুখোমুখি হতে হয় রূঢ় বাস্তবতার। বৈধ কাগজপত্র না থাকায় অনেকেই কুয়ালালামপুর বিমানবন্দর থেকেই ফেরত আসেন। যারা ঢুকতে পারেন, তারা পড়েন সীমাহীন অনিশ্চয়তায়। লুকিয়ে কাজ করতে গিয়ে কেউ বেতন পান না, আবার কেউ পুলিশের হাতে ধরা পড়ে জেল খাটেন।

অভিযুক্ত এসপি সম্রাট মোহাম্মদ আবু সুফিয়ানের ক্ষমতার উৎস নিয়ে অনুসন্ধানে তার রাজনৈতিক ও পারিবারিক প্রভাবের তথ্য বেরিয়ে এসেছে। জানা গেছে, তার বাবা আবদুল কাইযুম নালিতাবাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। অভিযোগ রয়েছে, পারিবারিক রাজনৈতিক প্রভাব এবং নিজের প্রশাসনিক পদ ব্যবহার করে এসপি সম্রাট বিমানবন্দরে এই একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করেছেন।

প্রতিদিন এই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে যে বিপুল পরিমাণ অর্থ অবৈধভাবে উপার্জিত হচ্ছে, তা ব্যক্তিগত আয়ের মেশিনে পরিণত করেছে রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ এই স্থাপনাটিকে। ভুক্তভোগী ও সচেতন মহলের দাবি, অবিলম্বে এই চক্রের বিরুদ্ধে সুষ্ঠু তদন্ত করে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button