অপরাধএক্সক্লুসিভদুর্নীতিপ্রশাসনবাংলাদেশমিডিয়াসম্পাদকীয়সুনামগঞ্জ

ঘুষ ও দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত ছাতক উপজেলা প্রকৌশলীকে অবশেষে বদলি

ছাতক (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি: সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরে (এলজিইডি) ঘুষ বাণিজ্য, অনিয়ম ও ঠিকাদারদের হয়রানির অভিযোগে অভিযুক্ত উপজেলা প্রকৌশলী মো. রফিকুল ইসলামকে অবশেষে বদলি করা হয়েছে। গত ২৩ নভেম্বর (২০২৫) এলজিইডির প্রধান কার্যালয় থেকে জারি করা এক দাপ্তরিক আদেশে তাকে ছাতক থেকে সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলায় বদলি করা হয়।

এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলী (রুটিন দায়িত্ব) জোবেদ করিম স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে (স্মারক নং ৪৬.০২.০০০০.০০১.৯৯.১৫৯.১৯-১০৪৬৮) এই বদলিকে ‘জনস্বার্থে’ উল্লেখ করা হয়েছে।

দীর্ঘদিন ধরে ছাতক এলজিইডি কার্যালয়ে ঘুষ ছাড়া কোনো ফাইল নড়ত না বলে অভিযোগ রয়েছে। ভুক্তভোগী ঠিকাদার ও স্থানীয়দের দাবি, প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম বিল অনুমোদনের ক্ষেত্রে কৃত্রিম জটিলতা সৃষ্টি করে মোটা অঙ্কের টাকা আদায় করতেন। তার এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে অতিষ্ঠ হয়ে উপজেলার ১৫টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান একত্রিত হয়ে বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করে।

অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, জিপিএস স্কুল প্রকল্পের বিল ছাড় করার জন্য তিনি ২ শতাংশ হারে ঘুষ দাবি করতেন। এছাড়া এসডিআইআর আইআইপি-৩ প্রকল্পের আওতায় উপ-সহকারী প্রকৌশলী সঞ্জয় সিংহের মাধ্যমে লাখ লাখ টাকার ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এমনকি প্রকল্প এলাকা পরিদর্শনের নামে ঠিকাদারদের কাছ থেকে গাড়ি ভাড়া বাবদ ৮ থেকে ৯ হাজার টাকা করে জোরপূর্বক আদায় করা হতো। চাহিদামতো টাকা না পেলে কাজের অগ্রগতি থাকলেও বিল আটকে দেওয়া এবং অহেতুক ত্রুটি ধরে হয়রানি করা ছিল তার নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার।

স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম সিলেট বিভাগের একাধিক উপজেলায় দায়িত্ব পালনকালে দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের দায়ে অভিযুক্ত হয়েছেন। প্রতিবারই অভিযোগ ওঠার পর তাকে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসেবে কেবল এক উপজেলা থেকে অন্য উপজেলায় বদলি করা হয়, কিন্তু তিনি সিলেট বিভাগের বাইরে যান না। শাস্তির বদলে শুধু বদলির এই সংস্কৃতি তাকে দুর্নীতিতে আরও বেপরোয়া করে তুলেছে বলে মনে করছেন সচেতন মহল।

বদলির বিষয়টি নিশ্চিত করে এলজিইডি সদর দপ্তরের (আগারগাঁও) সিনিয়র সহকারী প্রকৌশলী মো. শফিকুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, “ছাতকে তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত বিভিন্ন অনিয়মের সুনির্দিষ্ট অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতেই মো. রফিকুল ইসলামকে ফেঞ্চুগঞ্জে বদলি করা হয়েছে।”

এদিকে, বিতর্কিত এই প্রকৌশলীর বদলির খবরে স্থানীয় ঠিকাদারদের মধ্যে স্বস্তি ফিরে এসেছে। তবে তারা বলছেন, শুধু স্থান পরিবর্তনই যথেষ্ট নয়। দুর্নীতির শিকড় উপড়ে ফেলতে হলে সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে তার বিরুদ্ধে কঠোর বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে কেউ এমন অনিয়মের সাহস না পায়।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button