ইসলাম ধর্ম

পাপের অনুশোচনাতেই মুক্তি: আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হওয়া যাবে না

ইসলামিক বিচিত্রা ডেস্ক: মহান আল্লাহ তাআলা পাপ বা গুনাহ পছন্দ করেন না, কিন্তু পাপ করার পর বান্দার অন্তরে যে তীব্র অনুশোচনা জাগে, তা তিনি অত্যন্ত পছন্দ করেন। শয়তানের প্ররোচনায় মানুষ ভুল করতেই পারে, কিন্তু সেই ভুলকে আঁকড়ে ধরে হতাশার সাগরে ডুবে যাওয়া মুমিনের কাজ নয়। বরং সেই অনুশোচনাকে পুঁজি করে পুনরায় আল্লাহর দিকে ফিরে আসাই হলো প্রকৃত ইমানদারের পরিচয়।

বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ ড. ইয়াসির ক্বাদী তার ‘দ্য সাইকোলজি অব সিন’ শীর্ষক এক খুতবায় পাপ, অনুশোচনা এবং আল্লাহর রহমতের স্বরূপ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। সেখানে তিনি উল্লেখ করেন, আল্লাহ যদি মানুষকে সম্পূর্ণ নিষ্পাপ করে সৃষ্টি করতে চাইতেন, তবে আমরা মানুষ না হয়ে ফেরেশতা হতাম। মানুষ হিসেবে আমাদের সৃষ্টিগত স্বভাবই হলো ভুল করা। তবে এর অর্থ এই নয় যে, পাপকে প্রশ্রয় দিতে হবে। বরং পাপের বিরুদ্ধে সর্বদা সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হবে।

শয়তানের অন্যতম বড় কৌশল হলো—মানুষকে তার নিজের দৃষ্টিতে মূল্যহীন ও অপদার্থ হিসেবে উপস্থাপন করা। বিশেষ করে যারা অভ্যাসবশত বারবার একই পাপে জড়িয়ে পড়েন, শয়তান তাদের বোঝাতে চায় যে তাদের দিয়ে আর ভালো কিছু হবে না। কিন্তু মনে রাখতে হবে, যত বড় পাপীই হোক না কেন, কোনো কিছুই বান্দা এবং তার রবের মাঝখানে দেয়াল হয়ে দাঁড়াতে পারে না, যদি বান্দা ফিরে আসার সদিচ্ছা পোষণ করে।

আদর্শ অবস্থা হলো সব ধরনের কবিরা গুনাহ বর্জন করা এবং পাপমুক্ত জীবন যাপন করা, যা নবী-রাসূল ও আউলিয়াদের বৈশিষ্ট্য। কিন্তু সাধারণ মানুষ হিসেবে কেউ যদি সেই স্তরে পৌঁছাতে ব্যর্থ হন, তবুও হাল ছাড়া যাবে না। নিজের পাপগুলোকে ভালো কাজে অনুপ্রাণিত হওয়ার মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করতে হবে। বেশি বেশি ইস্তেগফার বা ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে।

হাদিসের দৃষ্টান্ত দিয়ে ড. ইয়াসির ক্বাদী উল্লেখ করেন, বনি ইসরাইলের এক পতিতা নারী, যার জীবন ছিল পাপে পরিপূর্ণ, তিনি কেবল একটি তৃষ্ণার্ত কুকুরকে পানি পান করানোর উসিলায় আল্লাহর ক্ষমা লাভ করেছিলেন। নিজের পাপী সত্তার কথা জেনেও তিনি একটি ভালো কাজ করার চেষ্টা করেছিলেন।

আরেকটি বর্ণনায় রাসুলুল্লাহ (সা.) এমন এক ধনাঢ্য ব্যক্তির কথা বলেছেন, যিনি জীবনে অসংখ্য পাপ করেছিলেন। কিন্তু তিনি মানুষের সঙ্গে লেনদেনে ছিলেন অত্যন্ত উদার। তিনি তার কর্মচারীদের নির্দেশ দিতেন ঋণগ্রস্ত দরিদ্রদের ঋণ মওকুফ করে দিতে, এই আশায় যে আল্লাহ হয়তো এর বিনিময়ে তাকে ক্ষমা করবেন। কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাকে বলবেন, “তুমি মানুষের প্রতি দয়া করেছ, আমি তো তোমার চেয়েও বেশি দয়াবান।” অতঃপর আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দেবেন।

পরিশেষে বলা যায়, মানুষ হিসেবে আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত নিখুঁত হওয়ার চেষ্টা করা। আল্লাহ আমাদের নিখুঁত হওয়ার জন্য সৃষ্টি করেননি, বরং আমাদের ক্ষমা পাওয়াটা নির্ভর করে নিখুঁত হওয়ার সেই নিরলস প্রচেষ্টা এবং ইস্তেগফারের ওপর। তাই আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ না হয়ে প্রতিনিয়ত তাঁর দিকেই ফিরে আসতে হবে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button