সংবাদ প্রকাশের জেরে সাংবাদিককে হয়রানি: ব্রাহ্মণবাড়িয়ার এসপি ও ওসির বিরুদ্ধে ১০ দপ্তরে অভিযোগ
নিজস্ব প্রতিবেদক: ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পুলিশ সুপার (এসপি) মো. এহতেশামুল হক এবং বিজয়নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শহীদুল ইসলামের বিরুদ্ধে ঘুষ বাণিজ্য, ক্ষমতার অপব্যবহার ও দুর্নীতির গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। পুলিশের অনিয়ম নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করায় এক সাংবাদিকের বিরুদ্ধে সাজানো চাঁদাবাজির মামলা দিয়ে হয়রানির অভিযোগ এনে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ ১০টি দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
রোববার (২৪ নভেম্বর) ‘দৈনিক অগ্রযাত্রা প্রতিদিন’ পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক মেহেদী হাসান বাদী হয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়সহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোতে এই অভিযোগ জমা দেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি বিজয়নগর থানা এলাকায় একটি মারামারির ঘটনা নিয়ন্ত্রণে আনতে গিয়ে এক উপ-পরিদর্শকসহ (এসআই) কয়েকজন পুলিশ সদস্য হামলার শিকার হন। পুলিশ সদস্য আহত হওয়ার ঘটনায় সরকারি কাজে বাধা ও হামলার মামলা হওয়ার কথা থাকলেও, রহস্যজনক কারণে তা হয়নি। অভিযোগ রয়েছে, এসপি এহতেশামুল হকের পরোক্ষ নির্দেশনায় এবং ওসি শহীদুল ইসলাম (বিপি নং- ৮১০৮১২৩৫৪৩) হামলাকারীদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের ঘুষ গ্রহণ করে ঘটনাটি ধামাচাপা দেন।
এই অনিয়মের বিষয়টি নিয়ে ‘দৈনিক অগ্রযাত্রা প্রতিদিন’-এর বিজয়নগর প্রতিনিধি মিজানুর রহমান “ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগরে পুলিশের রক্তের বিনিময়ে ঘুষ নিলেন ওসি শহীদুল” শিরোনামে একাধিক ভিডিও প্রতিবেদন প্রকাশ করেন। এতেই ক্ষিপ্ত হন এসপি ও ওসি।
অভিযোগে বলা হয়, সংবাদ প্রকাশের প্রতিশোধ নিতে গত ২০ নভেম্বর ওসির নিজস্ব সিন্ডিকেটের সদস্য ও দালাল হিসেবে পরিচিত আব্দুল শহীদসহ কয়েকজনকে দিয়ে সাংবাদিক মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মিথ্যা ও ভিত্তিহীন মামলা দায়ের করা হয়। যেখানে পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় মামলা নেওয়া হয়নি, সেখানে সাংবাদিকের বিরুদ্ধে তড়িঘড়ি করে জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা রুজু করায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন উঠেছে।
সম্পাদক মেহেদী হাসানের লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, বিজয়নগর থানা বর্তমানে একটি ব্যবসায়িক কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। ওসি শহীদুল ইসলাম ৫ থেকে ৯ সদস্যের একটি দালাল সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করেন, যার নেতৃত্বে রয়েছেন আব্দুল শাহিদ (এনআইডি নং- ২৪১৫৮৫২৯৮৩)। এই সিন্ডিকেটের মাধ্যম ছাড়া থানায় কোনো মামলা নেওয়া হয় না। মাদক স্পট নিয়ন্ত্রণ, সীমান্ত চোরাচালান, হত্যা মামলা ধামাচাপা দেওয়া এবং সাধারণ মানুষকে হয়রানি করে অর্জিত অর্থের ভাগ এসপি এহতেশামুল হকের কাছেও পৌঁছে বলে অভিযোগে দাবি করা হয়। এই দুই কর্মকর্তা ক্ষমতার অপব্যবহার করে বিপুল অবৈধ সম্পদের মালিক হয়েছেন বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।
পুলিশি হয়রানি ও দুর্নীতির প্রতিকার চেয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় ছাড়াও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় (জননিরাপত্তা বিভাগ), পুলিশ সদর দপ্তর (আইজিপি), দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি এবং জাতীয় মানবাধিকার কমিশনে অভিযোগ পাঠানো হয়েছে। এছাড়া জাতীয় প্রেসক্লাব, বিএফইউজে এবং ক্র্যাব-এর মতো সাংবাদিক সংগঠনগুলোকেও বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে।
অভিযোগকারী মেহেদী হাসান জানান, জনস্বার্থে এই দুই পুলিশ কর্মকর্তার অপকর্মের সুষ্ঠু তদন্ত ও অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধান প্রয়োজন। ন্যায়বিচার নিশ্চিত না হলে তিনি উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।



