ইসলাম ধর্ম

সবচেয়ে বড় পাপী যেভাবে হলেন শ্রেষ্ঠ নেককার: মুসা (আ.)-এর আমলের শিক্ষণীয় ঘটনা

ধর্ম ডেস্ক: মহান আল্লাহ তাআলা অসীম দয়ালু। বান্দা যখন নিজের পাপের জন্য লজ্জিত হয়ে অনুতপ্ত হৃদয়ে প্রভুর দিকে ফিরে আসে, তখন আল্লাহর রহমতের দরিয়ায় জোয়ার আসে। হযরত মুসা (আ.)-এর সময়ের একটি ঘটনা এই সত্যটিকেই আমাদের সামনে তুলে ধরে। ঘটনাটি পাপ, অনুশোচনা এবং আল্লাহর ক্ষমার এক অপূর্ব দৃষ্টান্ত।

একদিন আল্লাহর নবী হযরত মুসা (আ.) মহান আল্লাহর কাছে সবিনয়ে জানতে চাইলেন, “হে আমার প্রভু! আমার উম্মত বা অনুসারীদের মধ্যে সবচেয়ে বড় পাপী কে, তাকে আমি দেখতে চাই।”

উত্তরে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বললেন, “হে মুসা! তুমি রাস্তার ধারে অপেক্ষা করো। এই পথ দিয়ে যে ব্যক্তি সর্বপ্রথম অতিক্রম করবে, সেই হলো তোমার অনুসারীদের মধ্যে সবচেয়ে বড় পাপী।”

আল্লাহর নির্দেশ অনুযায়ী হযরত মুসা (আ.) পথের ধারে বসে রইলেন। কিছুক্ষণ পর তিনি দেখলেন, এক ব্যক্তি তার কোলের ছোট শিশুসন্তানকে নিয়ে ওই পথ দিয়ে হেঁটে জঙ্গলের দিকে যাচ্ছেন। মুসা (আ.) নিশ্চিত হলেন, আল্লাহর ঘোষণা অনুযায়ী এই ব্যক্তিই সেই জঘন্য পাপী।

এরপর হযরত মুসা (আ.) আল্লাহর কাছে আবার আরজ করলেন, “হে দয়াময়! এবার আমাকে আপনার সবচেয়ে প্রিয় ও নেককার বান্দাকে দেখিয়ে দিন।” আল্লাহ তখন বললেন, “সূর্যাস্তের সময় যে ব্যক্তি এই পথ দিয়ে ফিরে আসবে, সেই হলো আমার দৃষ্টিতে বর্তমান সময়ের সবচেয়ে বড় নেককার ও পুণ্যবান ব্যক্তি।”

কৌতূহলী হয়ে হযরত মুসা (আ.) বিকেল থেকেই সেখানে অপেক্ষা করতে লাগলেন। সূর্য যখন ডুবুডুবু, তখন তিনি অবাক হয়ে দেখলেন—সকালে যে ব্যক্তিটি সন্তান কোলে নিয়ে গিয়েছিলেন, সেই একই ব্যক্তি আবার ফিরে আসছেন। হযরত মুসা (আ.) বিস্মিত হয়ে আল্লাহর কাছে জানতে চাইলেন, “হে প্রভু! একই ব্যক্তি কীভাবে একই দিনে সবচেয়ে বড় পাপী এবং দিনশেষে সবচেয়ে বড় নেককার হতে পারে?”

তখন মহান আল্লাহ মুসা (আ.)-কে জানালেন সেই অলৌকিক পরিবর্তনের রহস্য। আল্লাহ বললেন, “হে মুসা! সকালে যখন এই ব্যক্তি তার সন্তানকে নিয়ে গহীন বনে প্রবেশ করল, তখন অবুঝ শিশুটি বাবাকে প্রশ্ন করেছিল—
‘বাবা, এই জঙ্গল কত বড়?’
বাবা উত্তর দিলেন, ‘অনেক বড়।’
ছেলে আবার জিজ্ঞেস করল, ‘জঙ্গল থেকে কি বড় কোনো কিছু আছে?’
বাবা বললেন, ‘হ্যাঁ বাবা, ওই পাহাড়গুলো জঙ্গলের চেয়েও বড়।’
ছেলে পুনরায় জানতে চাইল, ‘পাহাড়ের চেয়েও বড় কি কিছু আছে?’
বাবা আকাশের দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘হ্যাঁ, এই বিশাল আকাশ পাহাড়ের চেয়েও বড়।’

এরপর শিশুটি যখন জিজ্ঞেস করল, ‘বাবা, আকাশের চেয়েও কি বড় কিছু আছে?’ তখন সেই পাপী ব্যক্তিটি দীর্ঘশ্বাস ফেলে উত্তর দিল, ‘হ্যাঁ বাবা, তোমার বাবার পাপ এই বিশাল আকাশের চেয়েও বড়।’

বাবার মুখে এ কথা শুনে শিশুটি আবার প্রশ্ন করল, ‘বাবা, তোমার পাপের চেয়ে বড় কি আর কিছুই নেই?’

সন্তানের এই প্রশ্নে বাবার হৃদয় বিগলিত হয়ে গেল। তিনি চিৎকার করে কেঁদে সন্তানকে জড়িয়ে ধরে বললেন, ‘অবশ্যই আছে বাবা! আমার পাপ যত বিশালই হোক না কেন, আমার আল্লাহর রহমত তার চেয়েও অনেক অনেক গুণ বড়।’”

আল্লাহ মুসা (আ.)-কে বললেন, “হে মুসা! এই ব্যক্তির পাপের স্বীকৃতি এবং আমার রহমতের ওপর তার এই অগাধ বিশ্বাস ও অনুশোচনা আমার কাছে এতটাই প্রিয় হয়েছে যে, আমি তাকে মুহূর্তের মধ্যে সবচেয়ে বড় পাপী থেকে সবচেয়ে বড় নেককার হিসেবে কবুল করে নিয়েছি। জেনে রেখো, আমার শাস্তির চেয়ে আমার ক্ষমার হাত বহুগুণ প্রশস্ত।”

এই ঘটনা আমাদের শেখায়, পাপ যত বড়ই হোক, আল্লাহর রহমত তার চেয়েও বড়। তাই হতাশ না হয়ে আমাদের উচিত সর্বদা আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা।

হে আল্লাহ! আপনি আমাদের পেছনের সব গুনাহ ক্ষমা করে দিন এবং সামনের দিনগুলোতে সত্য ও ন্যায়ের পথে চলার তৌফিক দান করুন। আমিন।

রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, “আল্লাহ ওই ব্যক্তির চেহারা উজ্জ্বল করে দেন, যে আমার কোনো হাদিস শুনেছে এবং তা অন্যের কাছে পৌঁছে দিয়েছে।” (আবু দাউদ: ৫১৫)

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button