ইসলাম ধর্ম

আল্লাহর অশেষ রহমত লাভের ১০টি আমল: কোরআন ও হাদিসের আলোকে

ইসলামিক বিচিত্রা ডেস্ক: দুনিয়া ও আখিরাতের সফলতার মূল চাবিকাঠি মহান আল্লাহর রহমত। আল্লাহর দয়া ও অনুগ্রহ ছাড়া কোনো বান্দার পক্ষেই জান্নাতে প্রবেশ করা সম্ভব নয়। প্রতিটি মুমিন মুসলমানের সর্বদা সেই রহমতের প্রত্যাশাই করা উচিত। পবিত্র কোরআন ও হাদিসে এমন কিছু বিশেষ আমলের কথা বর্ণিত হয়েছে, যার মাধ্যমে বান্দা খুব সহজেই আল্লাহর রহমত ও ভালোবাসার পাত্র হতে পারে। এখানে আল্লাহর রহমত লাভের ১০টি উপায় তুলে ধরা হলো—

১. সৃষ্টির প্রতি সদয় আচরণ
সৃষ্টির সেবা স্রষ্টার সন্তুষ্টির অন্যতম মাধ্যম। রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যারা দয়া করে, রহমান (আল্লাহ) তাদের প্রতি দয়া করেন। তোমরা পৃথিবীবাসীর প্রতি দয়া করো, তাহলে আসমানওয়ালা তোমাদের প্রতি দয়া করবেন।’ (আবু দাউদ: ৪৯৪১)। হাদিসে এমন উদাহরণও পাওয়া যায় যে, তৃষ্ণার্ত কুকুরকে পানি পান করানোর মতো কাজের উসিলায় আল্লাহ বান্দাকে ক্ষমা করে দিয়েছেন।

২. ফরজ বিধানের যথাযথ অনুসরণ
আল্লাহর রহমত পাওয়ার প্রধান শর্ত হলো তাঁর নির্দেশিত ফরজ ইবাদতগুলো পালন করা। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনের সুরা নূরের ৫৬ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, ‘তোমরা নামাজ কায়েম করো, জাকাত দাও এবং রাসুলের আনুগত্য করো, যাতে তোমরা অনুগ্রহভাজন হতে পারো।’

৩. ইহসান বা সৎকর্মপরায়ণতা
যেকোনো কাজ নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সঙ্গে করাই হলো ইহসান। যারা এমনটি করে, আল্লাহ তাদের ভালোবাসেন। সুরা আরাফের ৫৬ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা ঘোষণা করেছেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহর অনুগ্রহ সৎকর্মপরায়ণদের নিকটবর্তী।’

৪. তাকওয়া বা খোদাভীতি
যাদের অন্তরে আল্লাহর ভয় বা তাকওয়া আছে, তারাই আল্লাহর রহমতের সবচেয়ে বড় দাবিদার। সুরা আরাফের ১৫৬ নম্বর আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘আমার দয়া—তা তো প্রত্যেক বস্তুকে ঘিরে রয়েছে। কাজেই আমি তা লিখে দেব তাদের জন্য, যারা তাকওয়া অবলম্বন করে ও ঈমান আনে।’

৫. কোরআনের অনুসরণ
পবিত্র কোরআনকে জীবন পরিচালনার গাইডলাইন হিসেবে গ্রহণ করলে আল্লাহর রহমত সুনিশ্চিত। সুরা আনআমের ১৫৫ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘এটি (কোরআন) বরকতময় কিতাব, যা আমি অবতীর্ণ করেছি। সুতরাং তোমরা এর অনুসরণ করো এবং সাবধান থাকো, যাতে তোমরা রহমতপ্রাপ্ত হও।’

৬. মনোযোগ দিয়ে কোরআন শ্রবণ
কোরআন তেলাওয়াত করা যেমন সওয়াবের, তেমনি মনোযোগ দিয়ে শোনাও রহমত লাভের উপায়। যখন কোরআন পাঠ করা হয়, তখন চুপ থেকে তা শোনার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সুরা আরাফের ২০৪ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, ‘যখন কোরআন পাঠ করা হয়, তখন তা মনোযোগ দিয়ে শোন এবং চুপ থাক, যাতে তোমরা রহমত লাভ কর।’

৭. দ্বীনের পথে ত্যাগ স্বীকার
আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য হিজরত করা বা দ্বীনের পথে কষ্ট স্বীকার করা মুমিনের জন্য বড় প্রাপ্তি। সুরা বাকারার ২১৮ নম্বর আয়াতে আল্লাহ মুমিন, মুহাজির ও মুজাহিদদের জন্য তাঁর বিশেষ অনুগ্রহের ইঙ্গিত দিয়েছেন।

৮. আল্লাহ ও রাসুলের আনুগত্য
জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (সা.)-এর সুন্নাহর অনুসরণ করা রহমত লাভের অন্যতম পূর্বশর্ত। সুরা আলে ইমরানের ১৩২ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, ‘তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের আনুগত্য করো, যাতে তোমরা দয়া লাভ করতে পারো।’

৯. ইস্তেগফার বা ক্ষমা প্রার্থনা
ভুলত্রুটির জন্য আল্লাহর কাছে লজ্জিত হয়ে ক্ষমা চাইলে তাঁর দয়ার দুয়ার খুলে যায়। সুরা নামলের ৪৬ নম্বর আয়াতে নবী সালেহ (আ.) তাঁর কওমকে বলেছিলেন, ‘কেন তোমরা আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছ না, যেন তোমাদের ওপর রহমত করা হয়?’

১০. রহমত লাভের বিশেষ দোয়া
আল্লাহর কাছে তাঁর দয়া ভিক্ষা চেয়ে দোয়া করাও একটি আমল। আসহাবে কাহাফের যুবকরা আল্লাহর কাছে যে দোয়া করেছিলেন, তা পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে। সুরা কাহফের ১০ নম্বর আয়াতে বর্ণিত দোয়াটি হলো—
‘রাব্বানা আতিনা মিল্লাদুনকা রাহমাতাও ওয়া হাইয়িই লানা মিন আমরি-না রাশাদা।’
অর্থ: ‘হে আমাদের রব! আমাদেরকে আপনার পক্ষ থেকে রহমত দান করুন।’ বেশি বেশি এই দোয়া পাঠের মাধ্যমে আল্লাহর রহমত লাভ করা সম্ভব।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button