নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজধানীর মহাখালীস্থ কড়াইল বস্তিতে লাগা ভয়াবহ আগুন দীর্ঘ প্রচেষ্টার পর পুরোপুরি নেভানো সম্ভব হয়েছে। মঙ্গলবার বিকেলে শুরু হওয়া এই অগ্নিকাণ্ড বুধবার সকাল সাড়ে ৯টায় সম্পূর্ণ নির্বাপণ করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে ফায়ার সার্ভিস। আগুনের লেলিহান শিখায় বস্তির প্রায় দেড় হাজার ঘরবাড়ি ভস্মীভূত হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মিডিয়া সেল সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার বিকেল ৫টা ২২ মিনিটে আগুনের খবর পাওয়া মাত্রই ঘটনাস্থলে ছুটে যায় ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। আগুনের তীব্রতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে একে একে যোগ দেয় মোট ১৯টি ইউনিট। টানা পাঁচ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে লড়াই করার পর রাত ১০টা ৩৫ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হন দমকলকর্মীরা। এরপর ডাম্পিং ও নির্বাপণ কাজ শেষে বুধবার সকালে আগুন পুরোপুরি নেভানোর ঘোষণা দেওয়া হয়।
আগুন নেভাতে গিয়ে বেশ কিছু প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হয় উদ্ধারকারীদের। ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা জানান, রাস্তায় প্রচণ্ড যানজটের কারণে ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে শুরুতে বিলম্ব হয়। এরপর বস্তির সরু গলিপথ দিয়ে গাড়ি প্রবেশ করানো অসম্ভব হয়ে পড়ায় দূর থেকে দীর্ঘ পাইপ টেনে পানি ছিটাতে হয়েছে। এ ছাড়া ঘটনাস্থলে পানির সহজলভ্য উৎস না থাকায় আগুন নেভাতে বেগ পেতে হয়। পরে বস্তি সংলগ্ন খাল থেকে পানি পাম্প করে আগুন নিয়ন্ত্রণের কাজ চালানো হয়।
ভয়াবহ এই অগ্নিকাণ্ডে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি বলে জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিসের ওয়্যারহাউস ইন্সপেক্টর আনোয়ারুল ইসলাম। তবে আগুনের সূত্রপাত কীভাবে হলো এবং ক্ষয়ক্ষতির সুনির্দিষ্ট পরিমাণ জানতে তদন্ত করা হবে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
এদিকে, আগুনে সর্বস্ব হারিয়ে খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবন যাপন করছেন বস্তির শত শত বাসিন্দা। মঙ্গলবার রাতে অনেকেই ধ্বংসস্তূপের পাশে রাত কাটিয়েছেন। সরেজমিনে দেখা যায়, ধ্বংসস্তূপের মধ্যে শেষ সম্বলটুকু খোঁজার চেষ্টা করছেন কেউ কেউ। অগ্নিকাণ্ডের সময় অনেকেই প্রাণভয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে ছুটলেও রক্ষা করতে পারেননি জমানো সম্পদ। অনেকেই ঘর থেকে কোনো কিছুই বের করতে পারেননি।
ক্ষতিগ্রস্ত লাভলী বেগম নামের এক নারী আক্ষেপ করে বলেন, ‘সাত বছর ধরে এই বস্তিতে আছি। অনেক কষ্ট করে টিভি, ফ্রিজসহ সংসারের জিনিসপত্র কিনেছিলাম, যার কিস্তিও এখনো শেষ হয়নি। এক নিমিষেই আমার সব পুড়ে ছাই হয়ে গেল, এখন আমি নিঃস্ব।’



