ইসলাম ধর্ম

জিবরাইলের ৩০ হাজার বছরের ইবাদতের চেয়েও শ্রেষ্ঠ উম্মতে মোহাম্মদির একটি সিজদা

ইসলামিক বিচিত্রা ডেস্ক: মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের অন্যতম মাধ্যম হলো সিজদা। বান্দা যখন সিজদায় যায়, তখন সে আল্লাহর সবচেয়ে নিকটবর্তী হয়। ফেরেশতাদের সরদার হজরত জিবরাইল (আ.) এবং উম্মতে মোহাম্মদির সিজদার মর্যাদার পার্থক্য নিয়ে একটি চমৎকার ঘটনা প্রচলিত রয়েছে, যা প্রতিটি মুমিনের জন্য অনুপ্রেরণাদায়ক।

একদা হজরত জিবরাইল (আ.) মহান রবের কাছে জানতে চাইলেন, ‘হে আল্লাহ! আপনি কিসে সবচেয়ে বেশি খুশি হন?’ জবাবে আল্লাহ তায়ালা জানালেন, ‘আমি তখন সবচেয়ে বেশি আনন্দিত হই, যখন আমার কোনো বান্দা আমাকে সিজদা করে।’

আল্লাহর এই বাণী শুনে জিবরাইল (আ.) ভাবলেন, তিনি এমন একটি সিজদা করবেন যা সৃষ্টির ইতিহাসে নজিরবিহীন হয়ে থাকবে। তিনি টানা ৩০ হাজার বছর ধরে আল্লাহর সান্নিধ্যে একটি দীর্ঘ সিজদা আদায় করলেন। সিজদা শেষ করে তিনি মনে মনে ভাবলেন, ‘নিশ্চয়ই আমার এই ৩০ হাজার বছরের সিজদার চেয়ে দামি কোনো ইবাদত আর কেউ করতে পারবে না এবং আল্লাহ নিশ্চয়ই আমার ওপর দারুণ খুশি হয়েছেন।’

জিবরাইল (আ.) আল্লাহর প্রশংসার অপেক্ষায় রইলেন। কিন্তু যখন কোনো সাড়া পেলেন না, তখন তিনি বিনীতভাবে প্রশ্ন করলেন, ‘হে আল্লাহ! আমি যে এত দীর্ঘ সময় ধরে সিজদা করলাম, আপনি কি তাতে সন্তুষ্ট হননি?’

উ উত্তরে আল্লাহ তায়ালা বললেন, ‘আমি তোমার প্রশ্নের জবাব দেব। তার আগে তুমি আমার আরশে আজিমের দিকে তাকাও।’ জিবরাইল (আ.) তাকিয়ে দেখলেন, আল্লাহর কুদরতি নূরে লেখা রয়েছে—‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ’।

বিস্মিত হয়ে জিবরাইল (আ.) জানতে চাইলেন, ‘হে আল্লাহ! আমার এই সিজদার সঙ্গে ওই কালিমার সম্পর্ক কী?’

তখন মহান আল্লাহ জিবরাইল (আ.)-কে সবিস্তারে জানালেন, ‘হে জিবরাইল! আমি এই দুনিয়া সৃষ্টি করব এবং মানব ও জিন জাতিকে হেদায়েতের জন্য লক্ষাধিক নবী-রাসুল প্রেরণ করব। তাঁদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষ নবী হলেন হজরত মুহাম্মদ (সা.)। আমি তাঁর উম্মতের ওপর দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করব। এই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের ফরজের মোট রাকাত সংখ্যা হবে ১৭টি। প্রতিটি রাকাতে দুটি করে সিজদা থাকবে।’

আল্লাহ তায়ালা আরও বলেন, ‘প্রতিটি সিজদায় যখন আমার ওই মাহবুব নবীর উম্মত তিনবার “সুবহানা রাব্বিয়াল আলা” পাঠ করবে, তখন তাদের মর্যাদা হবে অকল্পনীয়। হে জিবরাইল! তুমি ৩০ হাজার বছর সিজদা করে যে নেকি অর্জন করেছ, উম্মতে মোহাম্মদির একটি সিজদার বিনিময়ে আমি তাদের আমলনামায় তোমার সেই নেকির চেয়েও ৪০ হাজার গুণ বেশি সওয়াব লিখে দেব।’

এই ঘটনা প্রমাণ করে, মহান আল্লাহর কাছে শেষ নবীর উম্মতের ইবাদতের মর্যাদা কত উঁচুতে। সামান্য সময়ের সিজদা হলেও, ঈমান ও এখলাসের কারণে তা দীর্ঘ বছরের ইবাদতের চেয়েও ভারী হতে পারে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button