ইসলাম ধর্ম

দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতা ও হতাশা কাটাতে নবী আইয়ুব (আ.)-এর দোয়া ও আমল

ইসলামিক বিচিত্রা ডেস্ক: মানুষের জীবনে অসুস্থতা একটি বড় পরীক্ষা। এমন অনেকে আছেন যারা বছরের পর বছর শারীরিক অসুস্থতায় ভুগছেন। ডাক্তার, হাসপাতাল আর ওষুধের পরিবর্তন ঘটিয়েও যখন রোগ সারে না, তখন অনেকেই মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। দীর্ঘমেয়াদি অসুস্থতায় যখন সব চেষ্টা ব্যর্থ মনে হয়, তখন মুমিনের একমাত্র আশ্রয়স্থল মহান আল্লাহর দরবার। পবিত্র কুরআনে এমন কঠিন সময়ে ধৈর্যের মূর্ত প্রতীক নবী আইয়ুব (আ.)-এর ঘটনা ও দোয়ার উল্লেখ রয়েছে, যা অসুস্থ ও হতাশাগ্রস্ত মানুষের জন্য বড় সান্ত্বনা ও শেফার মাধ্যম হতে পারে।

কুরআনে বর্ণিত বিশেষ দোয়া
নবী আইয়ুব (আ.) দীর্ঘ বছর কঠিন রোগে আক্রান্ত ছিলেন। তাঁর শরীর ক্ষতবিক্ষত হয়ে গিয়েছিল এবং আপনজনরা তাঁকে ছেড়ে গিয়েছিল। কিন্তু তিনি কখনোই আল্লাহর ওপর ভরসা হারাননি। চরম কষ্টের মুহূর্তে তিনি যে দোয়াটি করেছিলেন, আল্লাহ তায়ালা তা পবিত্র কুরআনে উল্লেখ করেছেন। সুরা আল-আম্বিয়ার ৮৩ নম্বর আয়াতে বর্ণিত দোয়াটি হলো—

আরবি: رَبِّ إِنِّي مَسَّنِيَ الضُّرُّ وَأَنتَ أَرْحَمُ الرَّاحِمِينَ
উচ্চারণ: ‘রব্বি ইন্নি মাদ্দানিয্‌ দুর্‌রু ওয়া আনতা আরহামুর্‌ রাহিমীন।’
অর্থ: ‘হে আমার রব, নিশ্চয়ই আমাকে কষ্ট স্পর্শ করেছে, আর আপনি হলেন সর্বদয়ালুদের মধ্যে সর্বাধিক দয়ালু।’

আমল ও দোয়ার পদ্ধতি
ইসলামি চিন্তাবিদ ও আলেমরা দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতা থেকে মুক্তির জন্য এই আয়াতের ওপর ভিত্তি করে একটি বিশেষ আমলের পরামর্শ দিয়ে থাকেন। আমলটির নিয়ম নিচে তুলে ধরা হলো—

১. নির্জনে অবস্থান: রাতের শেষ ভাগে (তাহাজ্জুদের সময়) অথবা পরিবারের সবাই ঘুমিয়ে গেলে অজু করে নিরিবিলি স্থানে বসতে হবে, যেখানে একগ্রচিত্তে আল্লাহর সঙ্গে কথা বলা যায়।

২. সালাতুল হাজত আদায়: শারীরিক সামর্থ্য অনুযায়ী দাঁড়িয়ে বা বসে দুই রাকাত নফল নামাজ (সালাতুল হাজত) আদায় করতে হবে। একে ‘সুস্থতার দরখাস্তের নামাজ’ হিসেবে নিয়ত করা যেতে পারে। প্রতি রাকাতে সুরা ফাতিহার পর কুরআনের যেকোনো সুরা মেলানো যাবে।

৩. আয়াত পাঠ: নামাজ শেষে সালাম ফেরানোর পর দু’হাত তুলে সুরা আম্বিয়ার ৮৩ নম্বর আয়াতটি ভক্তি ও বিনয়ের সঙ্গে পাঠ করতে হবে। সংখ্যা নির্দিষ্ট না থাকলেও ৭ বা ১১ বার পাঠ করা যেতে পারে। পড়ার সময় এই অর্থ হৃদয়ে ধারণ করতে হবে যে, আল্লাহ সব ব্যথার খবর জানেন।

৪. নিজের ভাষায় ফরিয়াদ: আয়াত পাঠ শেষে নিজের মাতৃভাষায় আল্লাহর কাছে রোগের কথা খুলে বলতে হবে। কোথায় ব্যথা, কতদিন ধরে কষ্ট পাচ্ছেন এবং কী সমাধান চান—তা সবিস্তারে বলা। এতে আল্লাহর ওপর বান্দার নির্ভরতা বাড়ে।

৫. ধারাবাহিকতা: সপ্তাহে অন্তত তিন দিন (যেমন—শনি, সোম ও বৃহস্পতিবার) এই আমলটি নিয়মিত করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এতে মনের হতাশা দূর হয় এবং আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল বা ভরসা সৃষ্টি হয়।

সহায়ক গ্রন্থ ও যোগাযোগ
কুরআন ও হাদিসের আলোকে সাজানো এমন আরও বরকতময় দোয়া, আমল এবং রিজি, পারিবারিক সংকট ও দুশ্চিন্তা নিরসনের গাইডলাইন নিয়ে প্রকাশিত হয়েছে বিশেষ বই ‘কুরআনের বরকতময় দোয়া’। বইটিতে প্রতিটি দোয়ার আরবি, সহজ উচ্চারণ, অর্থ ও আমলের পদ্ধতি বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।

বইটি সংগ্রহ করতে আগ্রহীরা ০১৯৮৪৫৬৩৩৬২ নম্বরে যোগাযোগ করতে পারেন (হোয়াটসঅ্যাপ বা ইনবক্স)। অর্ডার করতে ‘কুরআনের দোয়ার বই চাই’ লিখে বার্তা পাঠানো যাবে।

উপসংহার
অসুস্থতা মানুষকে শরীর ও মন—উভয় দিক থেকেই দুর্বল করে দেয়। চিকিৎসাসেবা গ্রহণ করার পাশাপাশি রবের দুয়ারে ধরনা দেওয়া মুমিনের বৈশিষ্ট্য। এই দোয়ার বরকতে আল্লাহ যদি তাৎক্ষণিক রোগমুক্তি নাও দেন, তবুও তিনি বান্দার অন্তরে এমন প্রশান্তি দান করবেন, যা সুস্থতার চেয়েও বড় নেয়ামত হতে পারে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button