Uncategorizedজাতীয়দেশপ্রশাসনবাংলাদেশমিডিয়া

২০০৮ সালে সম্পদের সঠিক হিসাব নিলে হাসিনার মনোনয়ন বাতিল হতো: দুদক চেয়ারম্যান

অপরাধ বিচিত্রা ডেস্ক: দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আব্দুল মোমেন বলেছেন, ২০০৮ সালের নির্বাচনের সময় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দাখিলকৃত সম্পদ বিবরণী যদি যথাযথভাবে যাচাই-বাছাই করা হতো, তবে তখনই তার মনোনয়নপত্র বাতিল হয়ে যেত। আইন অনুযায়ী তিনি নির্বাচন করার যোগ্যতাই হারাতেন। ফলে তিনি সংসদ সদস্য বা প্রধানমন্ত্রী হতে পারতেন না এবং তার দলও রাষ্ট্রক্ষমতায় আসতে পারত না।

সোমবার (২৫ নভেম্বর) দুপুরে হবিগঞ্জ জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় আয়োজিত গণশুনানি শেষে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।

আসন্ন নির্বাচন প্রসঙ্গে ভোটারদের সতর্ক করে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ‘সামনে জাতীয় নির্বাচন। সংসদে কারা যাবেন বা আমরা কাদের নির্বাচিত করব, তা খুব ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আমরা যদি জেনেশুনে খারাপ লোক নির্বাচিত করি, তবে তাদের কাছ থেকে খারাপ কিছুই আমাদের প্রত্যাশা করতে হবে। ভালো প্রশাসক পেতে হলে সৎ ও যোগ্য প্রার্থীকে নির্বাচিত করতে হবে। অন্যথায় দুর্নীতিবাজ ও ঘুষখোররাই ক্ষমতায় আসবে।’

প্রার্থীদের সম্পদ বিবরণী প্রসঙ্গে ড. মোমেন বলেন, ‘নির্বাচনের আগে সম্পদের হিসাব দেওয়া বাধ্যতামূলক হলেও রাজনৈতিক নেতারা প্রায়ই আংশিক তথ্য জমা দেন এবং বাকিটা গোপন রাখেন। এ ধরনের তথ্য গোপনের প্রবণতা রোধে কঠোর নজরদারি প্রয়োজন। এক্ষেত্রে প্রার্থীদের সম্পদের প্রকৃত তথ্য যাচাইয়ে সাংবাদিক ও গণমাধ্যমের সহযোগিতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা অনেক সময় নিজেরা ভুল মানুষকে ভোট দেই, চাঁদাবাজকে নির্বাচিত করি—যার মাশুল পুরো জাতিকে দিতে হয়।’

পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বিদেশে পাচার হওয়া টাকা ফেরত আনা অত্যন্ত কঠিন ও জটিল প্রক্রিয়া। এ বিষয়ে দুদক, বাংলাদেশ ব্যাংক ও সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো সমন্বিতভাবে কাজ করছে। তবে অর্থ উদ্ধারের অগ্রগতি এখনও সন্তোষজনক পর্যায়ে পৌঁছায়নি। যারা দেশের টাকা বিদেশে পাচারে সহযোগিতা করেছে, আগে তাদের চিহ্নিত করতে হবে।’

দুদকের সীমাবদ্ধতা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘দুদক খুব বড় কোনো প্রতিষ্ঠান নয়, আমাদের জনবল ও লজিস্টিক সীমাবদ্ধতা রয়েছে। তবে অভিযোগ ও তথ্য-প্রমাণ যদি সময়মতো পাওয়া যায়, তবে তদন্ত করে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব।’

হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক আবু হাসনাত মোহাম্মদ আরেফীনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই গণশুনানিতে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দুদক কমিশনার (তদন্ত) মিঞা মুহাম্মদ আলি আকবার আজিজী এবং দুদক সচিব মোহাম্মদ খালেদ রহীম। এছাড়া পুলিশ সুপার এএনএম সাজেদুর রহমানসহ জেলা প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

গণশুনানি চলাকালে হবিগঞ্জ সদর উপজেলার হাতিরথান এলাকার ট্রাকচালক নোমান মিয়া বিআরটিএ-র সহকারী মোটরযান পরিদর্শক আশরাফুল ইসলামের বিরুদ্ধে ৪ হাজার টাকা ঘুষ দাবির অভিযোগ করেন। অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ায় দুদক চেয়ারম্যান তাৎক্ষণিকভাবে অভিযুক্ত আশরাফুল ইসলামকে সাময়িক বরখাস্ত করে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন।

এছাড়া সরকারি চাল আত্মসাতের অভিযোগে নবীগঞ্জের গজনাইপুর ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান ইমদাদুর রহমান মুকুল, সাবেক খাদ্য কর্মকর্তা গৌরপদ রায় এবং বানিয়াচং আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক নানু মিয়ার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তের নির্দেশ দেয় কমিশন।

দিনব্যাপী এই গণশুনানিতে রেলওয়ে, হাসপাতাল, নির্বাচন অফিস, সাব-রেজিস্ট্রি অফিস, বিআরটিএ, পাসপোর্ট, শিক্ষা ও গণপূর্তসহ বিভিন্ন দপ্তরের বিরুদ্ধে প্রায় ২০০টি অভিযোগ জমা পড়ে। এর মধ্যে ৮১টি অভিযোগ শুনানির জন্য গ্রহণ করা হয়। শুনানি শেষে ৬০টি অভিযোগ তাৎক্ষণিকভাবে নিষ্পত্তি করা হয় এবং ৩টি অভিযোগ তদন্তের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়। বাকি অভিযোগগুলো প্রতিবেদন প্রাপ্তি সাপেক্ষে নিষ্পত্তি করা হবে বলে জানানো হয়েছে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button