অপরাধপ্রশাসনবাংলাদেশমিডিয়ারাজনীতি

আনোয়ারা-কর্ণফুলীতে লাপাত্তা ‘হাইব্রিড’ নেতারা

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম: ক্ষমতার পালাবদলের পর চট্টগ্রামের আনোয়ারা ও কর্ণফুলী উপজেলার রাজনৈতিক চিত্র পুরোপুরি পাল্টে গেছে। গত সরকারের আমলে দোর্দণ্ড প্রতাপশালী কথিত ‘হাইব্রিড’ নেতা ও দলে অনুপ্রবেশকারীরা এখন লাপাত্তা। সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ এলাকায় বা বিমানবন্দরে এলেই যারা হুমড়ি খেয়ে পড়তেন, পায়ে ধরে সালাম করার প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হতেন—সেই অতি উৎসাহী অংশটিকে এখন আর মাঠে দেখা যাচ্ছে না।

স্থানীয় ত্যাগী নেতাকর্মীদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের লেবাস ব্যবহার করে একটি সুবিধাবাদী গোষ্ঠী এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল। দলের দুর্দিনের কর্মীদের কোণঠাসা করে নব্য আওয়ামী লীগাররা অর্থের বিনিময়ে পদ-পদবি বাগিয়ে নিয়েছিল।

অভিযোগে জানা যায়, সাবেক মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ সহযোগী সায়েমের নেতৃত্বে এলাকায় একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছিল। স্থানীয়রা এই চক্রটিকে ‘লুটেরা’ হিসেবে অভিহিত করে জানান, জমি দখল, থানায় দালালি, কালোবাজারি এবং ভুয়া প্রকল্পের মাধ্যমে সরকারি টাকা আত্মসাৎ ছিল তাদের নিত্যনৈমিত্তিক কাজ। মন্ত্রীর সঙ্গে ছবি তুলে এবং সেই ছবির প্রভাব খাটিয়ে তারা প্রশাসনিক ও অপরাধ জগত নিয়ন্ত্রণ করত।

পরবর্তীতে রাজনৈতিক অবস্থার পরিবর্তনের ইঙ্গিত পেয়ে এই সুবিধাবাদী গোষ্ঠীটি সাবেক প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়েশা খানের শিবিরে ভিড়তে চেয়েছিল। কিন্তু গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে তারা আত্মগোপনে চলে যায়। বর্তমানে আনোয়ারা ও কর্ণফুলীতে এই হাইব্রিড নেতাদের আর কোনো হদিস মিলছে না। শীর্ষস্থানীয় নেতারা বা ‘রাঘববোয়াল’রাও মামলা ও গণরোষের ভয়ে পলাতক থাকায় পুরো সিন্ডিকেটটি এখন দিশেহারা।

বর্তমানে এলাকার ভুক্তভোগী ও সচেতন নাগরিকরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এসব সুবিধাবাদীর অতীত কর্মকাণ্ড ও ছবি প্রকাশ করে তাদের মুখোশ উন্মোচন করছেন।

সচেতন মহলের মতে, রাজনীতিতে অনুপ্রবেশকারীরা নির্দিষ্ট ‘টার্গেট’ বা অসৎ উদ্দেশ্য নিয়ে প্রবেশ করে। তারা এমপি-মন্ত্রীদের ‘ঢাল’ হিসেবে ব্যবহার করে বারবার অপরাধ করেও পার পেয়ে যায়। সাধারণ মানুষের প্রশ্ন—রাজনীতির নামে এই ‘ছবি বাণিজ্য’ ও দুর্বৃত্তায়ন দেশ থেকে কবে বন্ধ হবে?

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button