জামিনে ফিরলেন পতেঙ্গার ‘বিতর্কিত’ মাসুদ করিম, আতঙ্কে এলাকাবাসী, ক্ষোভ প্রশাসনের ভূমিকায়

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম: চট্টগ্রাম নগরীর পতেঙ্গা এলাকার ত্রাস হিসেবে পরিচিত স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা মাসুদ করিম দীর্ঘ কারাভোগের পর জামিনে মুক্ত হয়ে এলাকায় ফিরেছেন। হত্যাচেষ্টা ও থানা ভাঙচুরসহ একাধিক গুরুতর মামলার আসামি এই নেতার প্রত্যাবর্তনে ফুলছড়ি পাড়াসহ পুরো এলাকায় নতুন করে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। তার অবাধ বিচরণের কারণে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, টাকার জোরে এবং রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে মাসুদ করিম পতেঙ্গা ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ-সভাপতির পদ বাগিয়ে নিয়েছিলেন। অভিযোগ রয়েছে, সাবেক এক সংসদ সদস্যের নাম ভাঙিয়ে তিনি এলাকায় একটি নিজস্ব বাহিনী গড়ে তুলেছিলেন। গত এক দশক ধরে এই বাহিনীর মাধ্যমে তিনি এলাকায় আধিপত্য বিস্তার করে আসছেন।
মাসুদ করিমের বিরুদ্ধে অভিযোগের অন্ত নেই। স্থানীয়দের দাবি, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) সাগরিকা-পতেঙ্গা আউটার রিং রোডের সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য লাগানো কয়েক হাজার গাছ কেটে সেখানে শত শত অবৈধ দোকানপাট বসানোর নেপথ্যে ছিলেন তিনি। এতে একদিকে যেমন প্রকল্পের সৌন্দর্য নষ্ট হয়েছে, অন্যদিকে পরিবেশের বড় ধরনের ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া স্থানীয় ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে চাঁদাবাজি, মারধর, হুমকি প্রদান এবং মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর মতো গুরুতর অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। তার ভয়ে এতদিন কেউ প্রকাশ্যে মুখ খোলার সাহস পেত না।
গত ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর তিনি কিছুদিন কক্সবাজারে শ্বশুরবাড়িতে আত্মগোপনে ছিলেন। তবে অভিযোগ রয়েছে, আত্মগোপনে থেকেও মুঠোফোনে তিনি অনুসারীদের মাধ্যমে এলাকা নিয়ন্ত্রণ করতেন। পরবর্তীতে কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে পতেঙ্গা থানায় হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের মামলায় সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে গত ১৯ সেপ্টেম্বর পুলিশ তাকে দক্ষিণ পতেঙ্গা থেকে গ্রেপ্তার করে।
সম্প্রতি তিনি জামিনে বেরিয়ে এসে আবারও এলাকায় অবস্থান নেওয়ায় শঙ্কিত সাধারণ মানুষ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক স্থানীয় ব্যবসায়ী বলেন, “প্রশাসন কঠোর না হলে তিনি আবারও আগের মতো দৌরাত্ম্য শুরু করবেন। আমরা শান্তিতে ব্যবসা ও বসবাস করতে চাই।”
একাধিক গুরুতর অভিযোগ থাকার পরও মাসুদ করিমের বিরুদ্ধে প্রশাসনের দৃশ্যমান কোনো কঠোর পদক্ষেপ না থাকায় জনমনে প্রশ্ন উঠেছে। স্থানীয় প্রবীণ নাগরিকদের মতে, প্রশাসন যদি এখনই কড়া নজরদারি না বাড়ায়, তবে এলাকায় আবারও অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। এলাকাবাসী অবিলম্বে তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলোর সুষ্ঠু তদন্ত এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।



