অপরাধআইন ও বিচারএক্সক্লুসিভদেশপ্রতারনাপ্রশাসনবাংলাদেশমিডিয়া

যশোর সার্কিট হাউজে ভুয়া অতিরিক্ত সচিব আটক

নিজস্ব প্রতিবেদক: কখনো তিনি রংপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি), আবার কখনো কোনো মন্ত্রণালয়ের প্রভাবশালী অতিরিক্ত সচিব। এমন সব ভুয়া পদবি ব্যবহার করে দিনের পর দিন ভিআইপি সুবিধা ভোগ করে আসছিলেন এক ব্যক্তি। অবশেষে শেষ রক্ষা হলো না। যশোর সার্কিট হাউজে অবস্থানকালীন প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সন্দেহের জেরে ধরা পড়েছেন মো. আব্দুস সালাম (৬৭) নামের ওই প্রতারক।

বুধবার (২৭ নভেম্বর) দুপুরে সার্কিট হাউজ থেকে তাকে আটক করে কোতোয়ালি থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। আটক আব্দুস সালাম যশোরের মনিরামপুর উপজেলার খেদাপাড়া ইউনিয়নের হেলাঞ্চি গ্রামের মৃত এলাহী বক্স গাজীর ছেলে।

প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ওই ব্যক্তি গত তিন মাসে অন্তত তিনবার উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা পরিচয়ে যশোর সার্কিট হাউজে অবস্থান করেছেন। প্রতিবারই তিনি রাষ্ট্রীয় অতিথিদের জন্য বরাদ্দকৃত ভিআইপি কক্ষ, উন্নতমানের খাবার এবং অন্যান্য সরকারি সুযোগ-সুবিধা সম্পূর্ণ বিনামূল্যে ভোগ করতেন।

ঘটনার দিন দুপুরে সার্কিট হাউজে অবস্থানকালে আব্দুস সালামের কথাবার্তা ও চালচলন দেখে সন্দেহ হয় সেখানে উপস্থিত কর্মকর্তাদের। এ সময় যশোর জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম শাহীন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা) মাসুম বিল্লাহ, ভারপ্রাপ্ত জোনাল সেটেলমেন্ট অফিসার মো. জাকির হোসেন ও এনডিসি রেজওয়ান সরদার তাকে চ্যালেঞ্জ করেন। পরিচয়পত্র দেখতে চাইলে এবং পদবি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি অসংলগ্ন আচরণ শুরু করেন। একপর্যায়ে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসে তার আসল পরিচয়। যাচাই-বাছাই শেষে নিশ্চিত হওয়া যায়, তিনি কোনো সরকারি কর্মকর্তা নন, বরং অতীতে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন।

প্রশাসনের কর্মকর্তারা বলছেন, একজন সাধারণ নাগরিকের এভাবে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা সেজে সংরক্ষিত এলাকায় প্রবেশ করা এবং রাষ্ট্রীয় সুবিধা ভোগ করা নিরাপত্তার জন্য বড় হুমকি। ভুয়া পরিচয়ে কেউ গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হাতিয়ে নেওয়া বা নাশকতার পরিকল্পনা করতে পারে—এমন আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ভবিষ্যতে এমন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে সার্কিট হাউজে আগত অতিথিদের পরিচয়পত্র ও পদবি যাচাইয়ে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে। সরকারি ডাটাবেজের সঙ্গে তথ্য মিলিয়ে নিশ্চিত হওয়ার পরেই কেবল আবাসন সুবিধা দেওয়া হবে।

এদিকে, পুলিশ জানিয়েছে, আটক আব্দুস সালাম নিছক ব্যক্তিগত লোভে নাকি কোনো সংঘবদ্ধ চক্রের হয়ে কাজ করছিলেন, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তার কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া মোবাইল ফোন ও নথিপত্র যাচাই চলছে। বৃদ্ধ বয়সে এমন অভিনব প্রতারণার দায়ে আটক হওয়ার ঘটনায় স্থানীয়দের মাঝে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button