ইসলাম ধর্ম

দৈনিক ১২ রাকাত সুন্নতের ফজিলত: জান্নাতে ঘর লাভ ও ফরজের ঘাটতি পূরণ

ধর্ম ডেস্ক: প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজের পাশাপাশি ইসলামের শরিয়তে ১২ রাকাত সুন্নত নামাজের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। শরীয়তের পরিভাষায় সুন্নত হলো এমন আদেশমূলক বিধান, যা ফরজ বা ওয়াজিবের মতো অপরিহার্য না হলেও রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর নিয়মিত আমল দ্বারা প্রমাণিত (ফিকহুস সুন্নাহ, ১৬০)। এই ১২ রাকাত সুন্নতের ফজিলত ও গুরুত্ব অপরিসীম, যা পরকালে মুমিনের নাজাতের উসিলা হতে পারে।

দৈনিক এই নির্ধারিত ১২ রাকাত সুন্নত আদায়ের বিনিময়ে মহান আল্লাহ বান্দার জন্য জান্নাতে একটি গৃহ নির্মাণ করেন। এ প্রসঙ্গে উম্মে হাবিবা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি রাতে ও দিনে ১২ রাকাত নামাজ আদায় করল, জান্নাতে তার জন্য একটি ঘর নির্মাণ করা হলো।’

এই ১২ রাকাত নামাজের বিন্যাস হলো— জোহরের ফরজ নামাজের আগে চার রাকাত ও পরে দুই রাকাত, মাগরিবের পর দুই রাকাত, এশার পর দুই রাকাত এবং ফজরের নামাজের আগে দুই রাকাত। (তিরমিজি, কিতাবুস সালাত, ১/ ৪৪০, ৪৪৫)।

হাশরের ময়দানে বান্দার আমলনামা হিসাবের সময় সুন্নত নামাজ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘কিয়ামতের দিন বান্দার কাছ থেকে সবার আগে নামাজের হিসাব নেওয়া হবে। নামাজ ঠিক হলে সে পরিত্রাণ ও সফলতা লাভ করবে। আর নামাজে সমস্যা হলে সে ক্ষতিগ্রস্ত ও ধ্বংস হবে।’

হাদিসে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, হিসাবের সময় যদি বান্দার ফরজ নামাজে কোনো ঘাটতি বা কমতি দেখা যায়, তখন আল্লাহ তায়ালা ফেরেশতাদের বলবেন, ‘দেখ, আমার বান্দার কোনো নফল (সু সুন্নত) নামাজ আছে কি না।’ যদি থাকে, তবে সেই নফল বা সুন্নত নামাজ দিয়ে ফরজের ঘাটতি পূরণ করা হবে। এরপর অন্যান্য আমলের হিসাব গ্রহণ করা হবে। (সুনানে আবু দাউদ, ৭৭০; তিরমিজি, ৩৩৭; ইবনে মাজাহ, ১১৭)।

সুন্নত নামাজের প্রকারভেদ ও বিধান
ফরজ নামাজের আগে ও পরে পঠিত সুন্নত নামাজ মূলত দুই প্রকার। যথা:
১. সুন্নতে মুয়াক্কাদা
২. সুন্নতে গায়রে মুয়াক্কাদা

সুন্নতে মুয়াক্কাদা: রাসুলুল্লাহ (সা.) যে সুন্নতগুলো নিয়মিত আদায় করতেন এবং ওজর বা বিশেষ অপারগতা ছাড়া কখনোই ছাড়তেন না, সেগুলোকে সুন্নতে মুয়াক্কাদা বলা হয়। যেমন— জোহরের আগে চার ও পরে দুই রাকাত, মাগরিব ও এশার পর দুই রাকাত করে এবং ফজরের আগে দুই রাকাত। জামাতে নামাজ পড়া ও আজান দেওয়াও এর অন্তর্ভুক্ত।

এর বিধান হলো—বিনা কারণে নিয়মিত এটি ছেড়ে দেওয়া গুনাহের কাজ। তবে প্রয়োজনে হঠাৎ ছাড়া যেতে পারে। ওজর ছাড়া নিয়মিত ত্যাগকারীকে তিরস্কার করা হবে, তবে তাকে ফাসিক বা কাফির বলা যাবে না।

সুন্নতে গায়রে মুয়াক্কাদা: নবীজি (সা.) যে আমলগুলো নিয়মিত করতেন কিন্তু ওজর ছাড়াও মাঝেমধ্যে ছেড়ে দিতেন, তাকে সুন্নতে গায়রে মুয়াক্কাদা বলা হয়। একে মুস্তাহাব, নফল বা মানদুবও বলা হয়ে থাকে। তাহাজ্জুদ, নফল রোজা, সদকা, জনসেবা ইত্যাদি এর অন্তর্ভুক্ত।

এর বিধান হলো—এগুলো পালন করা অত্যন্ত সওয়াব ও প্রশংসনীয় কাজ। তবে ওজর ছাড়া বা অপ্রয়োজনে ছেড়ে দিলে তিরস্কার করা যাবে না। অবশ্য কোনো কোনো আলেম মনে করেন, সাধারণ মুস্তাহাব বা নফলের চেয়ে সুন্নতে জায়েদা বা গায়রে মুয়াক্কাদা তুলনামূলক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। (কাশফুল আসরার: ২/৩০২)।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button