পৃথিবীর ২৩.৫ ডিগ্রি হেলে থাকা: মহান আল্লাহর কুদরতের এক অনন্য নিদর্শন
ধর্ম ডেস্ক: মহাকাশে পৃথিবী তার অক্ষে সম্পূর্ণ সোজা হয়ে ঘোরে না, বরং সূর্যকে প্রদক্ষিণ করার সময় এটি প্রায় ২৩.৫ ডিগ্রি কোণে হেলে থাকে। বিজ্ঞানের ভাষায় একে বলা হয় ‘আর্থ টিল্ট’ (Earth’s Tilt)। আপাতদৃষ্টিতে সামান্য মনে হলেও, পৃথিবীর এই বিশেষ কোণে হেলে থাকার ওপরই নির্ভর করছে মানবজাতির অস্তিত্ব ও পৃথিবীর বাসযোগ্যতা। বিজ্ঞানীদের মতে, এটি মহাজাগতিক এক বিস্ময়, আর মুমিনদের কাছে এটি মহান আল্লাহর সুনিপুণ সৃষ্টির এক অনন্য নিদর্শন।
পৃথিবীর ‘টিল্ট’ ও বিজ্ঞানের ব্যাখ্যা
বিজ্ঞানীরা বলছেন, পৃথিবী যদি এই ২৩.৫ ডিগ্রি কোণে হেলে না থাকত, তবে পৃথিবীতে কোনো ঋতু পরিবর্তন হতো না। ফলে বৃষ্টিপাতের অভাবে কৃষি ব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে যেত এবং মেরু অঞ্চলের বরফ গলে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ত।
এই টিল্ট না থাকলে পৃথিবীর একদিকের মানুষ সারা বছর তীব্র রোদে পুড়ে যেত, আর অন্যদিকের মানুষ নিমজ্জিত থাকত চিরস্থায়ী অন্ধকারে। এই দুই চরম অবস্থার কোনোটিতেই মানবজীবন টিকে থাকা সম্ভব ছিল না। লক্ষ লক্ষ বছর ধরে এই হেলে থাকার পরিমাণ স্থিতিশীল থাকা প্রমাণ করে যে, এটি কোনো আকস্মিক ঘটনা নয়, বরং এক সুপরিকল্পিত ‘ব্যালান্স’ বা ভারসাম্যের ফল।
কোরআনের ইশারা
পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ তায়ালা দিন-রাতের এই পরিবর্তন ও মহাজাগতিক শৃঙ্খলার দিকে মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। সূরা আল ফুরকানের ৬২ নম্বর আয়াতে ইরশাদ হয়েছে:
“তিনিই রাত ও দিনকে পরস্পরের অনুগামী করেছেন, তাদের জন্য যারা উপদেশ গ্রহণ করতে চায় বা কৃতজ্ঞ হতে চায়।”
দিন ও রাতের এই যে পর্যায়ক্রমিক পরিবর্তন এবং দৈর্ঘ্যের কমবেশি—তা মূলত পৃথিবীর এই টিল্ট বা হেলে থাকার কারণেই ঘটে। মহান আল্লাহ এই ব্যবস্থার মাধ্যমে পৃথিবীকে মানুষের বসবাসের উপযোগী করে রেখেছেন।
হাদিসের আলোকপাত ও শিক্ষা
সৃষ্টিজগতের এই নিখুঁত পরিমাপ সম্পর্কে হাদিসেও ইঙ্গিত পাওয়া যায়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “আল্লাহ আসমান ও জমিন সৃষ্টি করেছেন যথাযথ পরিমাপে।” (তিরমিজি)।
আজকের বিজ্ঞানও স্বীকার করছে যে, এই ‘যথাযথ পরিমাপ’ বা নিখুঁত টিল্টের কারণেই ঋতুচক্র সচল আছে এবং প্রাণিজগত টিকে আছে। আসমান ও জমিনের প্রতিটি ভারসাম্যের পেছনে রয়েছে মহান রবের অসীম প্রজ্ঞা বা হিকমত। পৃথিবীর এই সামান্য হেলে থাকার বিষয়টি নিয়ে চিন্তা করলে বোঝা যায়, মহান স্রষ্টা কত নিখুঁতভাবে আমাদের জন্য এই পৃথিবীকে সাজিয়েছেন।



