সন্দ্বীপে ফেরি চলাচলে ক্ষতিগ্রস্ত ৩৪ জেলে পরিবার পেল সরকারি সহায়তা

মো.জুবায়ের: চ্যানেল নিরাপদ রাখতে গিয়ে যারা জীবিকা হারিয়েছিলেন, দীর্ঘ আট মাস পর সেই জেলে পরিবারগুলোর মুখে হাসি ফুটেছে। সড়ক পরিবহন, বিদ্যুৎ ও রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খানের সরাসরি নির্দেশনায় চট্টগ্রামের সন্দ্বীপে ক্ষতিগ্রস্ত ৩৪টি জেলে পরিবারের মাঝে জরুরি সরকারি সহায়তা বিতরণ করা হয়েছে।
শনিবার (৩০ নভেম্বর) সন্দ্বীপ উপজেলা কমপ্লেক্স প্রাঙ্গণে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এই সহায়তা প্রদান করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রতিটি পরিবারকে নগদ ২৫ হাজার টাকা এবং ৪০ কেজি করে চাল দেওয়া হয়। সব মিলিয়ে ৩৪টি পরিবারের মাঝে মোট ৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা এবং ১.৩৬ টন খাদ্যশস্য বিতরণ করে জেলা প্রশাসন।
চলতি বছরের ২৪ মার্চ সন্দ্বীপ-বাঁশবাড়িয়া নৌ-রুটে ফেরি সার্ভিস চালু হয়। ফেরি চলাচল নিরাপদ রাখতে উপজেলা প্রশাসন ও ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্দেশে চ্যানেল এলাকা থেকে মাছ ধরার স্থায়ী জাল অপসারণ করা হয় এবং মাছ ধরায় সাময়িক নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। এতে সনাতন ধর্মাবলম্বী ৩৪টি জেলে পরিবার তাদের একমাত্র আয়ের উৎস হারিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করতে শুরু করে। দীর্ঘ আট মাস ধরে তারা চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটাচ্ছিলেন।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মো. জাহিদুল ইসলাম মিঞা। তিনি জানান, জেলেদের এই দুর্দশার বিষয়টি নজরে আসার পর উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান গত ২৪ তারিখ তাকে ফোনে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন।
জেলা প্রশাসক বলেন, ‘উপদেষ্টা স্যারের নির্দেশ পাওয়ার পরপরই আমরা ইউএনও-র মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা যাচাই করি। ৩৪টি পরিবার মানবেতর অবস্থায় আছে জেনে, আমরা আইনের মধ্য থেকে সর্বোচ্চ সহযোগিতার উদ্যোগ নিই। ২৪ তারিখ নির্দেশনা পাওয়ার পর ২৫ তারিখেই সরকারি আদেশ (জিও) জারি করা হয়। মানুষের জীবন ও জীবিকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই আমাদের প্রথম দায়িত্ব।’
তিনি আরও উল্লেখ করেন, মাছ আমাদের জাতীয় সম্পদ। সম্পদ রক্ষায় চ্যালেঞ্জ থাকবেই, তবে জেলা প্রশাসন সর্বদা সাধারণ মানুষের প্রয়োজনে পাশে থাকবে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার ড. মো. জিয়াউদ্দীন। তিনি জেলেদের জীবনমান উন্নয়নে শিক্ষার ওপর জোর দেন। তিনি বলেন, ‘সনাতন পদ্ধতিতে মাছ ধরার দিন শেষ। এখন জ্ঞান-বিজ্ঞানের যুগ। মাছ ধরার পদ্ধতি আধুনিক করতে হবে। সন্তানদের শিক্ষার সুযোগ করে দিতে হবে, যাতে তারা আগামী দিনে উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ গড়তে পারে।’
উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খানের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘স্যার বিদেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করেছেন এবং সেখানে অধ্যাপনাও করেছেন। এমন একজন গুণী মানুষ যখন আপনাদের কথা ভাবেন, তখন বুঝতে হবে আপনাদের সন্তানদেরও সম্ভাবনা আছে। তারাও একদিন দেশের সম্পদে পরিণত হবে।’
দীর্ঘদিন পর সরকারি সহায়তা পেয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন জেলেরা। তাদের প্রতিনিধি হিসেবে হারামিয়া ইউনিয়নের জেলে রতি দাস বলেন, ‘ডিসি স্যার নিজে আমাদের দুঃখ-কষ্টের কথা শুনেছেন, সন্তানদের পড়াশোনার খোঁজ নিয়েছেন। আজ এই সহায়তা পেয়ে মনে হচ্ছে আমরা একেবারে ভেসে যাইনি। রাষ্ট্র আমাদের পাশে আছে, এই বিশ্বাসটুকু ফিরে পেয়েছি।’
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন সন্দ্বীপ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মংচিংনু মারমাসহ স্থানীয় প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা। প্রশাসনের এই উদ্যোগকে স্থানীয় দ্বীপবাসী মানবিকতার এক অনন্য দৃষ্টান্ত হিসেবে দেখছেন।



