জাতীয়বাংলাদেশবিশেষ প্রতিবেদনবিশ্লেষণমতামতরাজনীতি

জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট: ৭ দিনে ৭ বিভাগে ভোটগ্রহণের প্রস্তাব বিশেষজ্ঞদের

নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের বর্তমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এবং নির্বাচন কমিশনের সক্ষমতার কথা বিবেচনায় নিয়ে একই দিনে সারাদেশে ভোটগ্রহণের পরিবর্তে ‘সাত দিনে সাত বিভাগে’ নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তাবটি এখন বিশেষজ্ঞ মহলে জোরালো হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে জাতীয় নির্বাচনের সঙ্গে গণভোট আয়োজনের যে আলোচনা চলছে, সেই প্রেক্ষাপটে একদিনে ভোট নেওয়াকে ‘অবাস্তব ও ঝুঁকিপূর্ণ’ বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও বিশ্লেষক অধ্যাপক এম এ বার্ণিক তাঁর এক সাম্প্রতিক পর্যালোচনায় এই পদ্ধতির যৌক্তিকতা তুলে ধরেছেন। সাবেক প্রশাসক, নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ এবং নির্বাচন পর্যবেক্ষকরাও মনে করছেন, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য ধাপে ধাপে ভোটগ্রহণের বিকল্প নেই।

নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের তথ্যানুযায়ী, দেশের প্রায় ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ ভোটকেন্দ্র ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ তালিকায় রয়েছে। একদিনে সারাদেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে প্রতিটি কেন্দ্রে পর্যাপ্ত পুলিশ, র‍্যাব ও বিজিবি মোতায়েন করা প্রায় অসম্ভব। বিশেষজ্ঞদের মতে, ধাপে ধাপে বা বিভাগভিত্তিক নির্বাচন হলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের পূর্ণ শক্তি একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলে প্রয়োগ করতে পারবে। এতে করে স্বল্প পরিসরে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে, যা কেন্দ্র দখল ও সহিংসতা রোধে কার্যকর ভূমিকা রাখবে।

একই দিনে জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট আয়োজন নির্বাচন কমিশনের (ইসি) জন্য বিশাল চ্যালেঞ্জ। সাবেক ইসি কর্মকর্তাদের মতে, এতে দ্বৈত ব্যালট বা ইভিএম ব্যবস্থাপনা, অতিরিক্ত ব্যালট বাক্স সরবরাহ এবং দুই ধরনের ভোট গণনায় বড় ধরনের বিশৃঙ্খলা তৈরির আশঙ্কা থাকে।

একজন জ্যেষ্ঠ নির্বাচন পর্যবেক্ষকের মতে, “একদিনে দুই ধরনের ভোট আয়োজন পরিচালনগত ভুলের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। কিন্তু সাত দিনে সাত বিভাগে ভোট হলে কমিশন প্রতিটি ধাপে সর্বোচ্চ মনোযোগ দিতে পারবে এবং লজিস্টিক বা পরিবহন ব্যবস্থাপনাও ত্রুটিমুক্ত রাখা সম্ভব হবে।”

সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রধান মানদণ্ড হলো ভোটারদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ। একদিনের নির্বাচনে সাধারণত দীর্ঘ লাইন, ভিড় ও সহিংসতার শঙ্কায় সাধারণ ভোটাররা কেন্দ্রে আসতে নিরুৎসাহিত হন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ধাপে ধাপে ভোট হলে কেন্দ্রের পরিবেশ শান্ত থাকে এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার থাকে। ফলে নারী, বয়স্ক, প্রতিবন্ধী ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মানুষ নির্ভয়ে ভোট দিতে পারবেন, যা সামগ্রিক ভোট পড়ার হার বাড়াবে।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশ বিশেষ করে ভারত, ইন্দোনেশিয়া, নেপাল ও আফগানিস্তানে নিরাপত্তার স্বার্থে দীর্ঘ দিন ধরেই ধাপে ধাপে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। বাংলাদেশেও গণভোট ও জাতীয় নির্বাচনের মতো গুরুদায়িত্ব সঠিক ও স্বচ্ছভাবে পালনের জন্য এই মডেল অনুসরণ করা সময়োপযোগী বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

বিশ্লেষকদের অভিমত, বর্তমান প্রেক্ষাপটে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন ও প্রশ্নাতীত নির্বাচন উপহার দিতে হলে ‘৭ দিনে ৭ বিভাগে’ ভোটগ্রহণই একমাত্র যৌক্তিক সমাধান। অন্যথায় নিরাপত্তা রক্ষা, ফলাফল ঘোষণা এবং ইসির ব্যবস্থাপনায় বড় ধরনের বিপর্যয় ঘটার শঙ্কা থেকেই যায়।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button