ইসলাম ধর্মসংগৃহীত সংবাদ

বিয়ের আগের দিন প্রত্যাখ্যান: ওমরাহ শেষে পাল্টে গেল নারীর ভাগ্য

ইসলাম ও জীবন ডেস্ক: জীবনের হিসাব-নিকাশ যখন মানুষের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, তখন স্রষ্টার পরিকল্পনাই যে উত্তম—তারই এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এসেছে। ৩৪ বছর বয়সী এক নারীর জীবনে ঘটে যাওয়া হার না মানা এই গল্পটি হার মানাবে সিনেমার চিত্রনাট্যকেও।

ঘটনার বিবরণে জানা যায়, ৩৪ বছর বয়সী ওই নারীর বিয়ে ঠিক হয়েছিল পারিবারিকভাবে। সব আয়োজন যখন চূড়ান্ত, ঠিক বিয়ের আগের দিনই নেমে আসে বিপর্যয়। পাত্র এবং তার পরিবার হঠাৎ করেই বিয়ে ভেঙে দেন। অজুহাত হিসেবে দাঁড় করানো হয় কনের বয়সকে। তাদের আশঙ্কা ছিল, এই বয়সে মেয়েটি হয়তো গর্ভধারণ করতে পারবে না বা সন্তান জন্মদানে অক্ষম হবে। পাত্র নিজেও জানিয়ে দেন, তিনি বয়স্ক মেয়ে বিয়ে করবেন না।

বিয়ের মাত্র একদিন আগে এমন প্রত্যাখ্যান এবং অপমানে মেয়েটি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। বয়স নিয়ে কটাক্ষ, ভবিষ্যৎ দুশ্চিন্তা আর সামাজিক লজ্জা তাকে গ্রাস করে। তবে হতাশায় ডুবে না গিয়ে তিনি সিদ্ধান্ত নেন মহান আল্লাহর কাছে ধরণা দেওয়ার। মানসিক প্রশান্তির খোঁজে তিনি পবিত্র ওমরাহ পালনের উদ্দেশ্যে মক্কা ও মদিনায় যান।

জানা গেছে, পবিত্র ভূমিতে সিজদায় পড়ে তিনি অঝোরে কাঁদতেন আর পবিত্র কোরআনের সুরা যুমারের ৫৩ নম্বর আয়াতটি আবৃত্তি করতেন, যেখানে বলা হয়েছে—‘তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না।’

ওমরাহ শেষে দেশে ফেরার পথেই ঘটে এক অলৌকিক ঘটনা। বিমানবন্দরে লাগেজের বেল্ট থেকে ভারী সুটকেস নামাতে পারছিলেন না ওই নারী। এ সময় পাশে থাকা এক ভদ্রলোক স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে তাকে সাহায্য করেন এবং বেল্ট থেকে ব্যাগটি নামিয়ে দেন। বিমানবন্দর থেকে বের হয়ে তিনি দেখতে পান, তার বোন ও দুলাভাই তাকে নিতে এসেছেন। কাকতালীয়ভাবে, লাগেজ নামিয়ে দেওয়া সেই ভদ্রলোকটি ছিলেন তার দুলাভাইয়েরই পরিচিত বন্ধু। সেখানেই দুলাভাই দুজনের পরিচয় করিয়ে দেন।

পরবর্তীতে এই পরিচয় পরিণয়ে রূপ নিতে খুব বেশি সময় নেয়নি। তাদের বিয়ে সম্পন্ন হয়। যেই নারীর বয়স এবং সন্তান ধারণক্ষমতা নিয়ে আগের পাত্র বিয়ে ভেঙে দিয়েছিলেন, মহান আল্লাহর কৃপায় বিয়ের পর সেই নারী একসঙ্গে তিন সন্তানের (ট্রিপলেট) মা হন।

অন্যদিকে, ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে, বয়সের অজুহাত তুলে যে ব্যক্তিটি বিয়ের আগের দিন সম্পর্ক ছিন্ন করেছিলেন এবং পরবর্তীতে কম বয়সী মেয়ে বিয়ে করেছিলেন, তিনি দীর্ঘ চেষ্টার পরও এখনো সন্তানহীন রয়েছেন।

ঘটনাটি প্রমাণ করে, মানুষের বিশ্বাস বা ইয়াকিন যদি খাঁটি হয় এবং সে যদি হালাল পথে থাকে, তবে আল্লাহ তার দোয়া কবুল করেন। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন:
“বলুন, হে আমার বান্দাগণ! যারা নিজেদের ওপর জুলুম করেছ, তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয় আল্লাহ সমস্ত গোনাহ মাফ করেন। তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।” (সুরা যুমার: ৫৩)

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button