শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে বাঁচার রক্ষাকবচ: সূরা নাসের মর্মকথা ও শিক্ষা
ধর্ম ও জীবন ডেস্ক: পবিত্র আল-কুরআনের ১১৪তম এবং সর্বশেষ সূরা হলো ‘সূরা আন-নাস’। মাত্র ৬টি আয়াত ও ১টি রুকু বিশিষ্ট এই সূরাটি মুমিনের জন্য এক বড় রক্ষাকবচ। জিন ও মানুষ—উভয় প্রকার শয়তানের কুমন্ত্রণা বা ‘ওয়াসওয়াসা’ থেকে মহান আল্লাহর কাছে কীভাবে আশ্রয় চাইতে হবে, সেই শিক্ষা ও নির্দেশনাই এই সূরার মূল প্রতিপাদ্য। অধিকাংশ মুফাসসিরের মতে সূরাটি মদিনায় অবতীর্ণ, তবে কোনো কোনো বর্ণনায় একে মক্কি সূরা হিসেবেও উল্লেখ করা হয়েছে।
আল্লাহ তায়ালা এই সূরায় মানুষকে শয়তানের অনিষ্ট থেকে বাঁচার পথ বাতলে দিয়েছেন। সূরার ভাবার্থ হলো:
(১) বলো, আমি আশ্রয় চাই মানুষের রবের; (২) মানুষের অধিপতির; (৩) মানুষের ইলাহের কাছে। (৪) আত্মগোপনকারী কুমন্ত্রণাদাতার অনিষ্ট থেকে; (৫) যে মানুষের অন্তরে কুমন্ত্রণা দেয়; (৬) তা জিন হোক অথবা মানুষ হোক।
সূরা নাসের মর্মবাণী বিশ্লেষণ করলে মুসলমান হিসেবে আমাদের জন্য তিনটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা ও নির্দেশনা বেরিয়ে আসে:
১. আল্লাহর আশ্রয়ই একমাত্র নিরাপত্তা: দৃশ্যমান মানুষ কিংবা অদৃশ্য জিন—উভয় শয়তানের কুমন্ত্রণা ও ক্ষতি থেকে বাঁচার জন্য আমাদের রব, মালিক ও ইলাহ মহান আল্লাহর কাছেই আশ্রয় চাইতে হবে। আল্লাহর আশ্রয় ছাড়া শয়তানের ধোঁকা থেকে বাঁচার আর কোনো কার্যকর উপায় নেই।
২. তাওহীদের ওপর অবিচল বিশ্বাস: অন্তরে এই বিশ্বাস দৃঢ়ভাবে ধারণ করতে হবে যে, আল্লাহই আমাদের একমাত্র রব (পালনকর্তা), মালিক (অধিপতি) এবং ইলাহ (উপাস্য)। যেকোনো বিপদ-আপদে বা সংকটে তিনিই আমাদের শেষ ভরসা ও আশ্রয়স্থল।
৩. শয়তানের মোকাবিলায় তাৎক্ষণিক আমল: যখনই মনে বাজে চিন্তা বা কুমন্ত্রণা জাগবে, কালক্ষেপণ না করে সঙ্গে সঙ্গে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাইতে হবে। এ ক্ষেত্রে ‘আউজু বিল্লাহি মিনাশ-শাইতানির-রাজিম’ (বিতাড়িত শয়তান থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাই) পাঠ করা অত্যন্ত কার্যকর।
হাদিস শরীফে এ বিষয়ে একটি চমৎকার ঘটনা বর্ণিত আছে। একবার মদিনার মসজিদে দুই ব্যক্তি বিবাদে লিপ্ত হলে নবীজি (সা.) বলেন, ‘আমি এমন একটি বাক্য জানি, যা পাঠ করলে তাদের এই রাগ দূর হয়ে যাবে।’ বাক্যটি হলো— ‘আউজু বিল্লাহি মিনাশ শাইতানির রাজিম’। অর্থাৎ, শয়তানের প্ররোচনা, রাগ কিংবা কুমন্ত্রণা দমনে এই আমলটি মুমিনের হাতিয়ার।



