চট্টগ্রামজাতীয়দেশপরিবেশপ্রাকৃতিক দুর্যোগমিডিয়া

চট্টগ্রামে মাঝারি ভূমিকম্পেই ধসে পড়বে অসংখ্য ভবন আইইবি সেমিনারে ভয়াবহ সতর্কবার্তা

মুহাম্মদ জুবাইর:

বাংলাদেশে দীর্ঘ ৫০ বছরে বড় কোনো ভূমিকম্প না হলেও তার অর্থ নিরাপত্তা নয়—এই কঠোর সতর্কবার্তাই তুলে ধরলেন বিশেষজ্ঞরা। চট্টগ্রামকে ভূমিকম্পের উচ্চ ঝুঁকির শহর, ঘোষণা করে বলা হয়, ‘অবহেলা করলে ক্ষতির মাত্রা কল্পনারও বাইরে হবে।’ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন, বাংলাদেশ (আইইবি) চট্টগ্রাম কেন্দ্র এবং চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)-এর যৌথ উদ্যোগে মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টা ৩০ মিনিটে আইইবি মিলনায়তনে “Earthquake Risk in Bangladesh: Impact on National Economy” শীর্ষক সেমিনারে এ সব তথ্য উঠে আসে।

সেমিনারের সভাপতিত্ব করেন আইইবি চট্টগ্রাম কেন্দ্রের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মনজারে খোরশেদ আলম। সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী খান মো. আমিনুর রহমান।চট্টগ্রামে অসংখ্য ভবন মধ্যম মাত্রার ভূমিকম্পেই ধসে পড়তে পারে’মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন চুয়েটের প্রাক্তন উপাচার্য অধ্যাপক ড. প্রকৌশলী মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম। তিনি বলেন,১৯৭১ সাল পর্যন্ত ভবন নির্মাণে কোনো কোড মানা হয়নি। চট্টগ্রামে অসংখ্য ভবন মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্পেই ধসে পড়তে পারে—এ বাস্তবতা অস্বীকার করলে চলবে না।
তিনি আরও বলেন—বাংলাদেশ–মিয়ানমার সীমান্ত এবং সিলেট অঞ্চলে বড় ফল্ট লাইন রয়েছে কোটি টাকার ভবন নির্মাণে সয়েল টেস্টে ১০ হাজার টাকা বাঁচাতে অনভিজ্ঞদের রিপোর্ট নেওয়া হয়,পুকুর ভরাট করে ভবন নির্মাণ সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ফায়ার সার্ভিসের সক্ষমতা বাড়ানো জরুরি সিডিএ’র নিয়ম অমান্য করে যত্রতত্র ভবন নির্মাণ নগরবাসীকে মৃত্যুঝুঁকিতে ঠেলে দিচ্ছে সরকারি স্থাপনার দায় সরকারের, কিন্তু বেসরকারি স্কুল–কলেজ–মাদ্রাসার নিরাপত্তার দায়িত্ব নিতে হবে প্রত্যেক কর্তৃপক্ষকে,জাহাঙ্গীর আলম সতর্ক করে বলেন, মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্পেও চট্টগ্রাম বন্দরের বড় ক্ষতি হতে পারে। এতে জাতীয় অর্থনীতি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।জাতীয় অর্থনীতির ওপর প্রভাব ভয়াবহ হবে’—প্রধান অতিথি সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের প্রাক্তন উপাচার্য ড. প্রকৌশলী মোজাম্মেল হক। তিনি বলেন, ভূমিকম্প বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বিশাল আঘাত হানতে পারে। অর্থনীতি রক্ষায় সতর্কতা ও প্রস্তুতি এখন জাতীয় দায়িত্ব।
সিডিএ চেয়ারম্যান: যত্রতত্র ভবন নির্মাণ—সবচেয়ে বড় বিপদ,বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সিডিএ চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. নুরুল করিম বলেন,চট্টগ্রামের শতশত ভবন সঠিক অনুমোদন ছাড়াই নির্মিত হয়েছে। অনেক সময় চাপ প্রয়োগ করে অনুমোদন নেওয়া হয়। তিনি প্রশ্ন তোলেন—এই ভবনের ডাইভার কে নেবে? বিপদ হলে দায় নেবে কারা?

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন—চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সদস্য সচিব ও দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার আবাসিক সম্পাদক জাহিদুল করিম কচি বিইউজের চট্টগ্রাম ব্যুরো প্রধান মো. শাহ নেওয়াজ,এ্যাব’র প্রাক্তন সভাপতি প্রকৌশলী সেলিম মো. জানে আলম, দি ফোরাম অফ ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যান্ড আর্কিটেক্টস বাংলাদেশ–চট্টগ্রাম কেন্দ্রের সহ–সভাপতি প্রকৌশলী মোমিনুল হক স্বাগত বক্তব্য রাখেন মো. সাখাওয়াত হোসেন। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম।
ভূমিকম্প ঠেকানো যাবে না, কিন্তু ক্ষতি কমানো যাবে’—আইইবি চেয়ারম্যান,সভাপতির বক্তব্যে প্রকৌশলী মনজারে খোরশেদ আলম বলেন,ভূমিকম্প রোধ করা আমাদের হাতে নেই। কিন্তু আগে থেকেই সতর্কতা নিলে জানমালের ক্ষতি কমানো সম্ভব।তিনি সেমিনারের আলোচনাগুলো দ্রুত নীতি–নির্ধারণী পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button