মুহাম্মদ জুবাইর: নারী ও কন্যার প্রতি সহিংসতা বন্ধে ঐক্যবদ্ধ হই, ডিজিটাল নিরাপত্তা নিশ্চিত করি।অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক ও বিজ্ঞ জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা। সভাপতিত্ব করেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. শরীফ উদ্দিন। স্বাগত বক্তব্য দেন মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর, চট্টগ্রাম-এর উপপরিচালক জনাব আতিয়া চৌধুরী।বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন মো. ফরিদুল আলম, উপপরিচালক, জেলা সমাজসেবা কার্যালয়- মোছলেহ উদ্দিন, জেলা শিশু বিষয়ক কর্মকর্তা, চট্টগ্রাম,সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা, বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার প্রতিনিধি, মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরে নিবন্ধিত স্বেচ্ছাসেবী মহিলা সমিতির নেতৃবৃন্দ এবং অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণার্থীবৃন্দ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন।
মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন মানবাধিকারকর্মী ও বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধি—প্রত্যাশী’র প্রধান নির্বাহী মনোয়ারা বেগম, ইলমা’র প্রধান নির্বাহী জেসমিন সুলতানা পারু, স্বপ্নীল ব্রাইট ফাউন্ডেশনের মোহাম্মদ আলী সিকদার, এছাড়া ব্র্যাক, ইপসা, যুগান্তর, ঘাসফুল, বিটা, সিডিসি, উষা নারী উন্নয়ন সংস্থা, ওয়াইএএসডি, কারিতাসসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা।বক্তারা অনলাইনে নারীর নিরাপত্তা নিয়ে সচেতন ও দক্ষ হয়ে ওঠার উপর জোর দেন। সঠিকভাবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারের প্রশিক্ষণকে জরুরি বলেও উল্লেখ করেন তারা।
তারা বলেন—প্রতিবন্ধী নারী ও প্রবাসী পরিবারের সদস্যদের জন্য বিশেষ সচেতনতা উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি। গণপরিবহন, কর্মক্ষেত্র ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানি প্রতিরোধে মহামান্য হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী কার্যকর কমিটি গঠন অপরিহার্য।পরিবারে সচেতনতা সৃষ্টি ছাড়া নারী নির্যাতন প্রতিরোধ সম্ভব নয়।

গত দশ মাসে নারীর প্রতি সংঘটিত সহিংসতার তথ্য উপস্থাপন করা হলে বক্তারা আইন প্রয়োগের পাশাপাশি পরিবার ও সমাজপর্যায়ে নিয়মিত সচেতনতামূলক কর্মসূচি পরিচালনার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।জেলা শিশু বিষয়ক কর্মকর্তা মোছলেহ উদ্দিন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার মাধ্যমে জেলার নারি–শিশুর ঝুঁকিসংক্রান্ত তথ্য সমন্বিতভাবে সংগ্রহ ও প্রক্রিয়াজাতকরণের প্রস্তাব দেন।
জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. ফরিদুল আলম বলেন—নারীর আত্মকর্মসংস্থানই তাকে সবচেয়ে বেশি সুরক্ষা ও স্বাধীনতা দেয়। কারিগরি শিক্ষা ও দক্ষতা অর্জনের মাধ্যমে নারীরা স্বাবলম্বী হলে সহিংসতার ঝুঁকিও কমে আসে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা তাঁর বক্তব্যে সমাজে আত্মসচেতনতা বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তার ওপর বিশেষভাবে আলোকপাত করেন।
তিনি বলেন-নারী, কন্যা কিংবা শিশুর ওপর যে সহিংসতা ঘটে, তাদের প্রতি নিষ্ঠুরতা দেখানো ব্যক্তিরা আমাদেরই কোনো না কোনো পরিবার থেকে উঠে আসে। শুধু বক্তৃতা দিয়ে বা আইন প্রয়োগ করেই এ সমস্যার সমাধান হবে না। জেলখানায় মাদক মামলায় হাজারো মানুষ বন্দি, কিন্তু মাদকাসক্তি কি কমেছে? তাই নিজেদের চরিত্র, নৈতিকতা এবং পারিবারিক মূল্যবোধের পুনর্জাগরণই প্রকৃত পরিবর্তন আনতে পারে।তিনি নতুন প্রজন্মের জন্য সঠিক নৈতিক আদর্শ তৈরিতে পরিবার ও বড়দের ভূমিকা অপরিহার্য বলে মন্তব্য করেন।নারী ও শিশুর জন্য নিরাপদ পরিবার, নিরাপদ সমাজ ও নিরাপদ রাষ্ট্র গঠনে সকলে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
সভাপতি শরীফ উদ্দিন গণপরিবহনে নারীর প্রতি সহিংসতার ঘটনায় তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ গড়ে তোলার আহ্বান জানান। তিনি বলেন—পরিবারে পুত্রসন্তানের বিয়ের পর নানা অকারণ বিরোধ তৈরি হলেও তার দায় যেন নারীর ওপর চাপানো না হয়। নারীকে সচেতন ও শিক্ষিত করে তুলতে পারলেই এসব সংকট মোকাবিলা করা সম্ভব।তিনি নারীর শিক্ষা, আত্মনির্ভরতা ও অধিকার–সচেতনতা বৃদ্ধির গুরুত্ব উল্লেখ করেন এবং অংশগ্রহণকারীদের ধন্যবাদ জানিয়ে সভা সমাপ্ত ঘোষণা করেন।অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ইপসার সহকারী পরিচালক ফারহানা ইদ্রিস।



