সাগরিকা–পাহাড়তলীতে ‘চাঁদাবাজ রিপাবলিক শিল্প এলাকা জিম্মি প্রভাবশালীদের হাতে (পর্ব-২)

নিজস্ব প্রতিবেদক: চট্টগ্রামের পাহাড়তলী সাগরিকা শিল্প এলাকা, আলিফ গলি, শফি মোটরস—এমন কোনো সড়ক নেই যার নিয়ন্ত্রণ প্রশাসনের হাতে।বছরের পর বছর এলাকা চালাচ্ছে একটি অদৃশ্য কিন্তু শক্তিশালী চাঁদাবাজ সিন্ডিকেট। প্রধান সড়কের দুই পাশে ট্রাক–বাসের স্থায়ী অবৈধ পার্কিং; কোনো উৎসব নয়, তবু সারাক্ষণ যানজট।এ যেন বাংলাদেশের শিল্পাঞ্চলের বুকে প্রতিষ্ঠিত ‘চাঁদাবাজ রিপাবলিক’।
ট্রাক–বাস চালকদের হাহাকার:এখানে আমাদের দেখার কেউ নেই!
সরেজমিনে গেলে ক্ষোভে মুখ ফুটে উঠে চালকদের কথায়।
দিন–রাত প্রকাশ্যে চাঁদা ওঠে।দিতে চাই না বললেই মারধর, যন্ত্রাংশ চুরি, ভয়ভীতি।আইন আছে, পুলিশ আছে—কিন্তু আমরা যেন কেউ না।
বিশেষ করে শফি মোটরস এলাকায় কোনো পার্কিং সুবিধাই নেই। বাধ্য হয়ে রাস্তার ওপর গাড়ি রাখতেই হয়—এই সুযোগেই চক্রের ‘উৎপাটন ফি’।
স্থানীয়দের তথ্য—বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাদের নাম ব্যবহার করে বহুদিন ধরে চলছে চাঁদাবাজি।৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের আগেও শ্রমিকলীগ নেতা ইলিয়াছ পরিবহন খাত থেকে চাঁদা তুলতেন—এমন অভিযোগ রয়েছে।এখন শুধু নাম পাল্টেছে, সিন্ডিকেটের রুটিন কাজ পাল্টায়নি। চাঁদা নেই, গাড়ি নেই—এটাই অঘোষিত আইন। সিকিউরিটি গার্ড মতিউর রহমান বলেন শফি মোটরসের:কথা বলবেন না—নির্দেশ সিকিউরিটি গার্ডের,গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা দখল নিয়ে অবস্থান জানতে চাইলে দায়িত্বে থাকা সিকিউরিটি গার্ড মতিউর রহমান কথা বলতে অস্বীকৃতি জানালেন।একাধিকবার যোগাযোগের পরও প্রতিষ্ঠানটির কাউকেই পাওয়া যায়নি।নীরবতা কি সত্যকে ঢাকার জন্য?বিসিক সাগরিকা—গাড়ির ‘স্থায়ী গুদামঘর’মূল সড়কের দুই পাশে শত শত বাণিজ্যিক গাড়ির সারি।যানজট ঘণ্টার পর ঘণ্টা স্থায়ী হয়।এ ভোগান্তির বড় শিকার গার্মেন্টস–কারখানার নারী শ্রমিকেরা।ট্রাকের আড়ালে ইভটিজিং—রোজকার আতঙ্ক,রোজকার অপমান।এ যেন শিল্প এলাকায় নারী শ্রমিকদের জন্য একটি ‘অসুরক্ষিত করিডর’। অত্র এলাকায় রাস্তার উপরে গাড়ি রাখলে প্রতিটি গাড়ি থেকে দিনে দিতে হয় ২০০ টাকা রাতে ২০০, এলাকায় গাড়ি প্রবেশ করলে দিতে হয় ৫০০ চাঁদাবাজদের । মোট চাঁদাবাজরা প্রতিমাসে চাদার টাকা তুলে থাকেন পনেরো থেকে ৩০ লক্ষ টাকা, এসব টাকার ভাগ যায় কথিত ভুয়া সাংবাদিক, পুলিশ ,নামধারী নেতাদের পকেটে।
অলংকার ট্রাফিক বক্সের টিআই সামিউর রহমান আমাদের প্রতিবেদককে বলেন—নিয়মিত অভিযান হয়। পুরোপুরি নির্মূল কঠিন হলেও আইনগত ব্যবস্থা চলছে।
পাহাড়তলী থানার ওসি জমির হোসেন জিয়া আমাদের এই প্রতিবেদককে বলেন—প্রতিনিয়ত টহল টিম পাঠাই। এখনই আবার পাঠাচ্ছি।কিন্তু এলাকাবাসীর প্রশ্ন—যদি অভিযান ও টহল থাকে, তাহলে পরিস্থিতি দাঁড়াচ্ছে আগের চেয়ে ভয়াবহ কেন?এ প্রশ্নের উত্তর কেউ দেয় না।
সবচেয়ে আলোচিত অভিযোগ: সিন্ডিকেটের ‘হৃদয়’—পারভেজ ও আব্দুল রহমান,অত্র এলাকার শ্রমিক ও চালকরা বলেন—বছরের পর বছর একইভাবে জিম্মি হয়ে আছি। চাঁদা না দিলে গাড়ি রাখা যায় না।তাদের অভিযোগ—চাঁদাবাজির মূল নিয়ন্ত্রণে পাহাড়তলী থানার স্থায়ী সোর্সবর্মা পারভেজ ও আব্দুল রহমান।তাদের সঙ্গে কথা বলতে গেলে তারা বলেন—আমাদের বউ–বাচ্চা আছে রাস্তায় কেন গাড়ি রাখছে? গাড়ি সরিয়ে দেন, চাঁদাবাজি করবো না।
এ উত্তর কি দায় এড়ানো, নাকি স্বীকারোক্তি?
শিল্পপ্রতিষ্ঠানের দায়—পার্কিং নেই, নিয়ম মানে না,বিসিক শিল্প এলাকার অধিকাংশ ডিপো, কারখানা, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের পার্কিং নেই।তাই পুরো সড়কই হয়ে উঠেছে ‘স্ট্যান্ডবাই পার্কিং জোন’।এ বিশৃঙ্খলার ওপরই ভর করে চাঁদাবাজ সিন্ডিকেটের রাজত্ব। রাস্তাঘাটে যেসব গাড়িগুলো দাঁড়িয়ে থাকে ওখানে দিনে রাতে ২৪ ঘন্টা চলে মাদক সেবনের মত আরো অনেক অপকর্ম
স্থানীয়দের দাবি—এবার শেষ হোক দখল–চাঁদাবাজির মাধব সেবনকারীদের যুগ:অবৈধ পার্কিং উচ্ছেদ, চাঁদাবাজ ও মাদক সেবনকারী সিন্ডিকেটকে শনাক্ত করে কঠোর ব্যবস্থা,শিল্পপ্রতিষ্ঠানের জন্য বাধ্যতামূলক নিজস্ব পার্কিং, পুলিশের কার্যকর, জবাবদিহিমূলক টহল,স্থানীয়দের অভিযোগ—চাঁদাবাজ—ভুয়া সাংবাদিক—কিছু পুলিশ মিলে পুরো এলাকা লুটে খাচ্ছে,প্রভাবশালীদের ছায়ায় দাঁড়িয়ে এই শিল্পাঞ্চল আজ ভয়ংকরভাবে অনিরাপদ।
চট্টগ্রামের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শিল্পাঞ্চল আজ চাঁদা–দখল–অনিয়মের এক জ্বলন্ত উদাহরণ। প্রতিদিনের এই দখলদারিত্ব শুধু রাস্তা নয়—অর্থনীতি, শ্রমিক নিরাপত্তা এবং প্রশাসনের বিশ্বাসযোগ্যতাকেটেনে নামাচ্ছে গভীর খাদে।সিন্ডিকেট অটল,ভয় অটল, কিন্তু ভুক্তভোগীদের প্রশ্ন জ্বলজ্বল করছে—এই শহর কি কোনোদিন আমাদেরও হবে?



