নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজধানীর উত্তরায় নামসর্বস্ব অফিস খুলে উচ্চ বেতনের চাকরি এবং লাভজনক ব্যবসার প্রলোভন দেখিয়ে এক অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তার কাছ থেকে ৪৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় জড়িত সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
গত সোমবার (২ ডিসেম্বর ২০২৫) রাজধানীর তাঁতিবাজার মোড় সংলগ্ন মালিটোলা পার্ক এলাকায় অভিযান চালিয়ে সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টার (সিপিসি) তাদের গ্রেপ্তার করে।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন—শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার ঘড়িষার বাজারের মৃত শান্তি চৌধুরীর ছেলে সনজ সাহা ওরফে উজ্জ্বল চৌধুরী (৫৬), দিনাজপুরের পার্বতীপুর উপজেলার সোনাপুকুর বানিয়াপাড়া গ্রামের মৃত খেরকেটুর ছেলে মো. মোশারফ হোসেন (৬৪) এবং একই জেলার বিরল উপজেলার জগতপুর গ্রামের মৃত ফইমুদ্দিনের ছেলে মো. শাহজাহান (৪৬)।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, ভুক্তভোগী বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের একজন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। অবসরের পর প্রতারক চক্রের সদস্য মো. আব্দুর রশিদ তাকে উচ্চপদে চাকরির প্রস্তাব দিয়ে উত্তরায় তাদের অফিসে নিয়ে যান। সেখানে ‘বিসিজে’ (বাংলাদেশ-চায়না-জাপান) নামের একটি কথিত গ্রুপে তাকে পরিচালক পদে চাকরির প্রস্তাব দেওয়া হয়। মাসিক বেতন ধরা হয় ২,৫০০ মার্কিন ডলার।
চাকরির পাশাপাশি তাকে ঘড়ি আমদানি-রপ্তানির একটি ভুয়া ব্যবসায় বিনিয়োগের প্রস্তাব দেওয়া হয়। চক্রের সদস্য মো. আব্দুর রাজ্জাক নিজেকে একটি ভারতীয় কোম্পানির প্রতিনিধি এবং আমিনুল ইসলাম নিজেকে বাণিজ্যিক ব্যবস্থাপক হিসেবে পরিচয় দেন। তারা ভুক্তভোগীকে বোঝান যে, ভারতীয় কোম্পানির কাছে ঘড়ি সরবরাহ করলে অল্প সময়ে কোটি টাকা লাভ করা সম্ভব। বিশ্বাস অর্জনের পর তারা ভুক্তভোগীর সঙ্গে লভ্যাংশ ভাগাভাগির মৌখিক চুক্তিও করেন।
সিআইডি জানায়, সরল বিশ্বাসে ভুক্তভোগী ধাপে ধাপে তাদের হাতে ৪৫ লাখ টাকা তুলে দেন। কিন্তু টাকা নেওয়ার পর প্রতারকরা জানান, ঘড়ি সরবরাহ করা সম্ভব হয়নি এবং উল্টো আরও ১০ লাখ টাকা দাবি করে চাপ দিতে থাকেন। তখনই ভুক্তভোগী বুঝতে পারেন তিনি প্রতারণার শিকার হয়েছেন। এ ঘটনায় তিনি গত ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫ তারিখে তুরাগ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন (মামলা নং-১৩)।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃতরা প্রতারণার কথা স্বীকার করেছেন। তদন্তে জানা গেছে, এই চক্রটি মূলত অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তাদের টার্গেট করে। তারা অপরাধের সময় ভিন্ন ভিন্ন ডিভাইস ব্যবহার করে এবং কাজ শেষে তা নষ্ট করে ফেলে।
তদন্তে আরও উঠে এসেছে, গ্রেপ্তারকৃত সনজ সাহা ওরফে উজ্জ্বল চৌধুরীর বিরুদ্ধে ১৩টি, মোশারফ হোসেনের বিরুদ্ধে ৩টি এবং মো. শাহজাহানের বিরুদ্ধে ২টি মামলার তথ্য পাওয়া গেছে। বর্তমানে মামলাটির তদন্ত এবং বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারে সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টারের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতদের আদালতে সোপর্দ করে রিমান্ড আবেদনসহ আইনি প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।



