ইসলাম ধর্মধর্ম ও জীবন

অশ্লীলতা ও পাপ থেকে মুক্তির উপায় পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ

ইসলাম ও জীবন ডেস্ক: ইসলামি জীবনবিধানে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজকে কেবল ইবাদত হিসেবেই নয়, বরং আত্মশুদ্ধি ও চরিত্র গঠনের প্রধান হাতিয়ার হিসেবে গণ্য করা হয়। নিয়মিত নামাজ ত্যাগ করলে একজন মুমিন খুব সহজেই শয়তানের কুমন্ত্রণা বা ‘ওয়াসওয়াসা’র শিকার হতে পারেন। এই কুমন্ত্রণাকে নিজের স্বাভাবিক ভাবনা মনে করে অনেকে জড়িয়ে পড়ছেন অশ্লীলতা ও ভয়াবহ সব পাপাচারের জালে।

বিশেষজ্ঞ ও ইসলামি চিন্তাবিদদের মতে, নামাজের অভাব মানুষকে অনৈতিকতার দিকে ঠেলে দেয়। ফলে মোবাইলে অশ্লীল ভিডিও দেখা এবং অবৈধ কামনার বশবর্তী হয়ে হস্তমৈথুনের মতো বদভ্যাসে আসক্ত হয়ে পড়েন অনেকে। এই আসক্তি কেবল আত্মিক ক্ষতিই করে না, বরং ডেকে আনে ভয়াবহ শারীরিক ও মানসিক বিপর্যয়।

দীর্ঘদিন ধরে অশ্লীলতায় লিপ্ত থাকা এবং হস্তমৈথুনের অভ্যাসের কারণে বিশেষ অঙ্গের স্বাভাবিকতা নষ্ট হয়ে যায়। ভুক্তভোগীরা প্রায়ই প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া এবং এক ধরনের দীর্ঘস্থায়ী যৌন অস্বস্তিতে ভোগেন। চিকিৎসাবিজ্ঞানের দৃষ্টিতেও অতিরিক্ত হস্তমৈথুন শুক্রাণুর সংখ্যা কমিয়ে দিতে পারে, যা ভবিষ্যতে সন্তান জন্মদানের সক্ষমতা হ্রাস করে। এছাড়া দাম্পত্য জীবনে স্থায়িত্ব কমে যাওয়া বা অক্ষমতার মতো সমস্যার সৃষ্টি হয়। মনের মধ্যে হাজারো নারীর চিন্তা ঘুরপাক খেলেও বাস্তবে শারীরিক সক্ষমতা হারিয়ে ফেলার মতো পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।

এই ধ্বংসাত্মক পথ থেকে ফিরে আসার একমাত্র কার্যকর উপায় হলো পাঁচ ওয়াক্ত নামাজে মনোনিবেশ করা। নিয়মিত নামাজ আদায় করলে মানুষের ভেতর আল্লাহভীতি জাগ্রত হয়, যা অশ্লীল কাজ ও হস্তমৈথুনের মাত্রা প্রাকৃতিকভাবে কমিয়ে আনে। পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে, নামাজ মানুষকে অশ্লীল ও মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখে।

কেউ যদি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে একনিষ্ঠভাবে নামাজ শুরু করেন, তবে শয়তানের কুমন্ত্রণা তাকে আর কাবু করতে পারে না। দীর্ঘদিনের বদভ্যাস ছাড়ার কারণে প্রথম দুই-তিন মাস শারীরিক ও মানসিক কষ্ট হতে পারে। তবে এই সময়টুকু ধৈর্য ধরে নামাজ ও জিকিরের মাধ্যমে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে বিশেষ অঙ্গ তার স্বাভাবিকতা ফিরে পায় এবং মন প্রশান্ত হয়।

যারা নামাজ পড়ার পরও মন্দ কাজ বা দুর্নীতিতে লিপ্ত থাকে, তারা মূলত হেদায়েতের পূর্ণ স্তরে পৌঁছাতে পারেনি। শয়তান মানুষের ঈমান হরণ করার জন্য মৃত্যু পর্যন্ত অপেক্ষা করে। যারা শয়তানের ওয়াসওয়াসাকে নিজের ভাবনা মনে করে পাপে ডুবে থাকে, মৃত্যুর আগে তাদের ঈমানহারা হওয়ার প্রবল ঝুঁকি থাকে। আর ঈমান ছাড়া মৃত্যু হলে পরকালে অনন্তকালের শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে। এমনকি ঈমান নিয়ে মৃত্যুবরণ করলেও পাপের শাস্তিস্বরূপ দীর্ঘকাল জাহান্নামের আগুনের স্বাদ নিতে হতে পারে।

পবিত্র কুরআনের ঘোষণা অনুযায়ী, তারাই জান্নাতুল ফেরদাউসের প্রকৃত উত্তরাধিকারী, যারা নিজেদের নামাজের প্রতি যত্নবান। যে নামাজ মানুষকে অশ্লীলতা, নেতিবাচক চিন্তা ও মানসিক চাপ (স্ট্রেস) থেকে মুক্ত রাখে, তাই প্রকৃত নামাজ।

হস্তমৈথুন বা অশ্লীলতার আসক্তি থেকে মুক্তি পেতে দৃঢ় ইচ্ছাশক্তির পাশাপাশি নামাজের কোনো বিকল্প নেই। এটি মানুষকে শুধু পাপমুক্তই করে না, বরং ইহকালে মানসিক প্রশান্তি এবং পরকালে জান্নাতের নিশ্চয়তা প্রদান করে। আল্লাহ সবাইকে সঠিক বুঝ ও হেদায়েত দান করুন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button