নিজস্ব প্রতিবেদক: একসময় জীবিকার তাগিদে রাজধানীতে রিকশা চালাতেন তিনি। কিন্তু রাজনীতির ছায়াতলে এসে ভাগ্য বদলে যায় অভাবী সেই যুবকের। তিনি ঝালকাঠি সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি সৈয়দ রাজ্জাক আলী সেলিম। অভিযোগ রয়েছে, সাবেক শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমুর ‘ক্যাশিয়ার’ হিসেবে কাজ করে এবং প্রভাব খাটিয়ে গত ১৫ বছরে তিনি গড়ে তুলেছেন হাজার কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ। দেশে ও বিদেশে তার সম্পদের পাহাড় দেখে চোখ কপালে ওঠার উপক্রম।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ঝালকাঠি সদর উপজেলার তারপাশা গ্রামের মৃত সৈয়দ জুলফিকার আলীর ছেলে সৈয়দ রাজ্জাক আলী সেলিম। ১৯৮১ সালে অভাবের তাড়নায় তিনি ঢাকায় এসে রিকশা চালানো শুরু করেন। সাবেক মন্ত্রী আমুর এলাকার লোক হওয়ায় নব্বইয়ের দশকে তিনি রাজনীতিতে সক্রিয় হন। বিএনপি-বিরোধী আন্দোলনে ককটেল বিস্ফোরণ ও বাস পোড়ানোর মতো সহিংস কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে তিনি আমুর আস্থাভাজন হয়ে ওঠেন। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর সেলিমের ভাগ্য খুলে যায়। আমুর অঘোষিত ক্যাশিয়ার হিসেবে অবৈধ অর্থ লেনদেন ও সম্পদ অর্জনের মাধ্যমে তিনি বিত্তবৈভবের মালিক হতে থাকেন।

রাজধানীর গুলশানের নিকেতনের ১ নম্বর রোডের এ-ব্লকে ৪১ নম্বর বাড়িতে বর্তমানে বসবাস করেন সেলিম। বিলাসবহুল এই বাড়িটির আনুমানিক মূল্য অন্তত ৫০ কোটি টাকা। শুধু দেশেই নয়, কানাডার টরন্টো শহরেও তার রয়েছে প্রায় ৩০০ কোটি টাকার বাড়ি ও গাড়ি। দুবাইতে আলোচিত আরাভ খানের সঙ্গে স্বর্ণের ব্যবসায় তিনি বিনিয়োগ করেছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া নিজ গ্রাম ঝালকাঠিতে শত একর জমি, ডুপ্লেক্স বাড়ি ও বিনোদন রিসোর্ট গড়ে তুলেছেন তিনি।
গাজীপুর-টঙ্গীর কুনিয়া মৌজায় মেইন রোডের পাশে সাত্তার টাওয়ার সংলগ্ন ২ বিঘা জমিতে তার একটি দোতলা বাণিজ্যিক ভবন রয়েছে, যার বর্তমান বাজারমূল্য প্রায় ৫০ কোটি টাকা। ভবনটি বর্তমানে রূপা গার্মেন্টসের কাছে ভাড়া দেওয়া আছে।
আমির হোসেন আমুর প্রভাব খাটিয়ে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় মার্কেট, প্লট ও ফ্ল্যাট দখলের অভিযোগ রয়েছে সেলিমের বিরুদ্ধে। একই সম্পত্তি জাল দলিলে একাধিক ব্যক্তির কাছে বিক্রি করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগও পাওয়া গেছে।

রাজধানীর বাংলামোটরে কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউতে অবস্থিত ‘হ্যাপি রহমান প্লাজা’র প্রায় ৪০ হাজার স্কয়ার ফুট জায়গা জোরপূর্বক দখলের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। ভুয়া দলিল তৈরি করে এই স্পেস বিক্রি করে তিনি প্রায় ২০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।
ভুক্তভোগী ক্রেতা আবু হানিফ জানান, তিনি ওই মার্কেটের ছাদে ৩ হাজার স্কয়ার ফুট অফিস স্পেস কিনেছিলেন। টাকা পরিশোধের পর তাকে জাল দলিলে রেজিস্ট্রি দেওয়া হয়। নামজারি করতে গিয়ে তিনি জালিয়াতির বিষয়টি জানতে পারেন। সাবেক মন্ত্রীর প্রভাবের কারণে মামলা করেও তিনি কোনো প্রতিকার পাননি।



