গৌরনদীতে ডাকাতির প্রস্তুতিকালে ৪ যুবক আটক, বিএনপি নেতাদের ছত্রছায়ায় মাদক ব্যবসার অভিযোগ
গৌরনদী (বরিশাল) প্রতিনিধি: বরিশালের গৌরনদী উপজেলা ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ হলেও সাম্প্রতিক সময়ে মাদকের অভয়ারণ্য হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে এখানে অবাধে চলছে মাদক কেনাবেচা, যার সঙ্গে জড়িয়ে আছে নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড। তবে মাদক ও অপরাধ নির্মূলে কঠোর অবস্থানে রয়েছে গৌরনদী মডেল থানা পুলিশ। এরই ধারাবাহিকতায় ডাকাতির প্রস্তুতিকালে স্থানীয়দের সহায়তায় চার যুবককে আটক করেছে পুলিশ।
গত বুধবার (৪ ডিসেম্বর) দিবাগত রাত আনুমানিক ১টা ১০ মিনিটের দিকে উপজেলার সীমান্তবর্তী বাটাজোড় বাসস্ট্যান্ড এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
থানা সূত্রে জানা যায়, গৌরনদী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. তরিকুল ইসলামের নির্দেশনায় এসআই সাইফুল ইসলাম ও এএসআই উজ্জ্বল সঙ্গীয় ফোর্স এবং বাজার পাহারাদারদের নিয়ে চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি চালাচ্ছিলেন। এ সময় একটি সিএনজিতে থাকা চার যুবকের গতিবিধি সন্দেহজনক মনে হলে পাহারাদাররা তাদের থামানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু তারা পালানোর চেষ্টা করলে পুলিশ, পাহারাদার ও স্থানীয় জনতা ধাওয়া করে সিএনজিচালকসহ চারজনকে আটক করে। এ সময় উত্তেজিত জনতা তাদের গণপিটুনি দিয়ে পুলিশের কাছে সোপর্দ করে।
আটককৃতরা হলেন—গৌরনদী উপজেলার নলচিড়া ইউনিয়নের খানাবাড়ি গ্রামের মালেক জমাদ্দারের দুই ছেলে হৃদয় জমাদ্দার ও তারেক জমাদ্দার, পিরোজপুরের নেছারাবাদ এলাকার বাবুল শরীফের ছেলে তসলিম শরীফ এবং বানারীপাড়া উপজেলার সৈয়দকাঠী এলাকার আনন্দ মণ্ডলের ছেলে অশোক মন্ডল।
আটকের পর বেরিয়ে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য। অভিযোগ রয়েছে, আটককৃতরা স্থানীয় প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায় অপরাধ জগত নিয়ন্ত্রণ করত। জবানবন্দিতে আটককৃতরা স্বীকার করেছে, গৌরনদী পৌরসভার সাবেক বিএনপি নেতা শহীদ এবং বড়কসবা পূর্ব পাড়ার ছাদের হাওলাদারের ছেলে বিএনপি নেতা মাসুক (যিনি এলাকায় ‘মাছ মাসুক’ নামে পরিচিত) ও তার ছেলে মিঠুনের সঙ্গে তাদের সম্পৃক্ততা রয়েছে। বিএনপি ও দলীয় দাপট দেখিয়ে মাসুক ও তার ছেলে মিঠুন দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় মাদক ব্যবসা ও সেবন করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এলাকাবাসী তাদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হলেও থানা প্রশাসনের অসাধু কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে বা উৎকোচ দিয়ে তারা ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকত বলে অভিযোগ করেছেন আটককৃতরা।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে গৌরনদী মডেল থানার এসআই সাইফুল ইসলাম জানান, আটককৃতরা মূলত ডাকাতির প্রস্তুতি নিচ্ছিল। তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধেই পুরোনো অপরাধের রেকর্ড রয়েছে। এর মধ্যে তারেকের বিরুদ্ধে ৫টি, তসলিমের বিরুদ্ধে ২টি এবং অশোকের বিরুদ্ধে ১টি করে বিভিন্ন ধারায় মামলা চলমান রয়েছে।
গৌরনদী মডেল থানার ওসি মো. তরিকুল ইসলাম বলেন, “খবর পেয়ে আমরা চার ডাকাতকে উদ্ধার করে প্রথমে উপজেলা হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদান করি। এ ঘটনায় আটককৃতদের বিরুদ্ধে থানায় নতুন করে মামলা দায়ের করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন থানায় একাধিক ডাকাতি মামলা রয়েছে।”
শুক্রবার দুপুরে আইনি প্রক্রিয়া শেষে আটককৃতদের আদালতের মাধ্যমে বরিশাল কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়েছে বলে নিশ্চিত করেন ওসি।



