ইসলাম ধর্মধর্ম ও জীবন

যেভাবে জ্বলন্ত অঙ্গার মুখে দিয়ে ফেরাউনের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছিলেন শিশু মূসা (আ.)

ইসলাম ও জীবন ডেস্ক: মিশরের প্রতাপশালী শাসক ফেরাউনের ঘরেই লালিত-পালিত হচ্ছিলেন মহান আল্লাহর নবী হযরত মূসা (আ.)। একদিন শিশুকালের এক বিস্ময়কর ঘটনায় ফেরাউনের সন্দেহের মুখে পড়েন তিনি। ফেরাউনের গালে চড় মারা থেকে শুরু করে অগ্নিপরীক্ষার সেই ঘটনা আজও ইতিহাসের পাতায় এক অলৌকিক দৃষ্টান্ত হিসেবে বর্ণিত হয়।

ঘটনার সূত্রপাত ফেরাউনের রাজপ্রাসাদে। একদিন হযরত আসিয়া (রা.) শিশু মূসা (আ.)-কে আদর করছিলেন। এ সময় ফেরাউন সেখানে উপস্থিত হয়ে শিশুটিকে কোলে তুলে নেন। যখন ফেরাউন শিশুটিকে আদর করতে যাচ্ছিলেন, ঠিক তখনই ঘটে এক অভাবনীয় ঘটনা। শিশু মূসা (আ.) বাম হাতে ফেরাউনের দাড়ি আঁকড়ে ধরেন এবং ডান হাতে তার গালে সজোরে চড় বসিয়ে দেন।

এই ঘটনায় ফেরাউন প্রচণ্ড ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। তাঁর দীর্ঘদিনের আশঙ্কা সত্য মনে হতে থাকে। তিনি চিৎকার করে বলেন, “এই শিশুই আমার সেই শত্রু, যে আমার রাজত্ব ও জীবনের বিনাশ ঘটাবে। একে এখনই হত্যা করা হোক।”

ফেরাউনের এমন রুদ্রমূর্তি দেখে ভীত হয়ে পড়েন হযরত আসিয়া (রা.)। তিনি স্বামীকে শান্ত করার চেষ্টা করে বলেন, “জাহাপনা, এটি একটি অবুঝ শিশুর কাজ। ভালো-মন্দ বোঝার মতো জ্ঞান এখনও এর হয়নি। নিছক শিশুসুলভ আচরণের জন্য একটি নিষ্পাপ শিশুকে হত্যা করা নিষ্ঠুরতা হবে।”

এ সময় উপস্থিত ফেরাউনের মন্ত্রী হামান একটি পরীক্ষার প্রস্তাব দেন। তিনি বলেন, শিশুটি কি সত্যিই বুদ্ধি করে এমন করেছে নাকি এটি তার অবুঝপনা, তা যাচাই করা হোক। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, শিশু মূসা (আ.)-এর সামনে দুটি পাত্র রাখা হয়। একটিতে ছিল উজ্জ্বল ‘ইয়াকুত’ পাথর বা রত্ন, আর অন্যটিতে ছিল জ্বলন্ত আগুনের অঙ্গার।

স্বাভাবিকভাবেই উজ্জ্বল বস্তুর প্রতি শিশুদের আকর্ষণ থাকে। শিশু মূসা (আ.) হামাগুড়ি দিয়ে সেই রত্নের দিকেই এগিয়ে যাচ্ছিলেন। কিন্তু মহান আল্লাহর নির্দেশে হযরত জিবরাইল (আ.) অদৃশ্যভাবে এসে তাঁর হাতটি ঘুরিয়ে জ্বলন্ত অঙ্গারের পাত্রের দিকে নিয়ে যান। শিশু মূসা (আ.) সেই জ্বলন্ত কয়লা হাতে নিয়ে মুখে পুরে দেন। এতে তাঁর হাত ও জিহ্বা পুড়ে যায়, যার ফলে পরবর্তীতে তাঁর কথায় কিছুটা জড়তা সৃষ্টি হয়েছিল।

এই দৃশ্য দেখে ফেরাউন ও তার পারিষদবর্গ নিশ্চিত হন যে, শিশুটির আসলে ভালো-মন্দ বিচার করার কোনো জ্ঞান নেই। চড় মারার বিষয়টি ছিল নিতান্তই কাকতালীয়। ফলে ফেরাউনের মন থেকে সন্দেহ দূর হয় এবং হযরত মূসা (আ.) নিশ্চিত মৃত্যুদণ্ড থেকে রক্ষা পান।

ফেরাউনের শূন্য হৃদয়জুড়ে আবার স্থান করে নেন শিশু মূসা (আ.)। আসিয়া (রা.) পরম মমতায় তাঁকে বুকে জড়িয়ে নেন। মূলত, আল্লাহ তায়ালা এভাবেই একটি ছোট শারীরিক ক্ষতির বিনিময়ে তাঁর প্রিয় নবীকে শত্রুর ঘরেই নিরাপদে বড় হওয়ার সুযোগ করে দিয়েছিলেন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button