করাচিতে অডিও বয়ান শুনে পাপের পথ ত্যাগ: রমজানের শেষ রাতে সিজদারত অবস্থায় নারীর মৃত্যু
ইসলাম ও জীবন ডেস্ক: পাকিস্তানের করাচি শহরে ঘটে যাওয়া একটি হৃদয়স্পর্শী ঘটনা, যা আল্লাহর রহমত ও বান্দার তওবার এক অনন্য দৃষ্টান্ত। একজন নারী, যিনি জীবিকা নির্বাহ করতেন পতিতালয় পরিচালনার মাধ্যমে, পবিত্র রমজান মাসে একটি অডিও বয়ান শোনার পর আমূল বদলে ফেলেন নিজের জীবন। এমনকি তওবা কবুলের আকুতি জানিয়ে রমজানের শেষলগ্নে সিজদারত অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন। আরিফ আজাদের ‘কাল আবার পাখিরা আকাশে উড়বে’ বইয়ের ‘প্রত্যাবর্তন’ গল্পে এই ঘটনার বিবরণ পাওয়া যায়।
ঘটনার সূত্রপাত পবিত্র মাহে রমজানের এক রাতে। ওই নারীর ছেলে তারাবির নামাজ শেষে মসজিদ থেকে বের হওয়ার সময় বিনামূল্যে বিতরণ করা একটি অডিও সিডি নিয়ে বাসায় ফেরে। বাসায় ফিরে ছেলেটি যখন সিডিটি বাজাচ্ছিল, তখন পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় মায়ের কানে বয়ানের কিছু অংশ ভেসে আসে। কৌতূহলবশত তিনি বসে পড়েন এবং মনোযোগ দিয়ে পুরো বয়ান শোনেন। বয়ান শেষ হওয়ার পর তিনি ছেলেকে সেটি আবারও বাজাতে বলেন। এভাবে টানা তিনবার শোনার পর তিনি জানতে চান, এই বক্তা কে? ছেলে জানায়, সে চেনে না, মসজিদের সামনে কেউ একজন বিতরণ করছিল।
পরদিন রাতে ওই নারী ছেলের সঙ্গে মসজিদে যান। তারাবির নামাজ শেষে তিনি ইমাম সাহেবের সাক্ষাৎ প্রার্থনা করেন। ইমামের কাছে তিনি জানতে চান আগের রাতের সিডির বক্তার পরিচয়। ইমাম জানান, তিনি বিখ্যাত আলেম মাওলানা তারিক জামিল। এরপর ওই নারী ইমামকে অত্যন্ত সংকোচ ও ভয়ের সাথে প্রশ্ন করেন, “একজন নারী বা পুরুষ যত নিকৃষ্ট পাপই করুক না কেন, আল্লাহ কি তার তওবা কবুল করবেন? আমি এতটাই পাপী যে আমার পাপের ভার অকল্পনীয়।”
উত্তরে ইমাম সাহেব নিজে কিছু না বলে পবিত্র কুরআনের সূরা জুমারের ৫৩ নম্বর আয়াতটি তেলাওয়াত করে শোনান—“হে আমার বান্দাগণ! যারা নিজেদের ওপর জুলুম করেছ, তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয় আল্লাহ সমস্ত গোনাহ মাফ করেন। তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।”
আল্লাহর এই বাণীতে আশ্বস্ত হয়ে ওই নারী তৎক্ষণাৎ ইমামকে সাক্ষী রেখে তওবা করেন এবং অন্ধকার জগত থেকে ফিরে আসার শপথ নেন। এরপর থেকে তিনি নিয়মিত মসজিদে এসে তারাবির নামাজ আদায় করতে শুরু করেন। প্রতি রাতে নামাজ শেষে তিনি আল্লাহর দরবারে আর্তনাদ করে বলতেন, “হে আল্লাহ! যদি আমার তওবা কবুল হয়ে থাকে, তবে আমাকে এখনই তোমার কাছে তুলে নাও।”
এভাবে রমজানের শেষ দশক অতিবাহিত হতে থাকে। ২৯ রমজানের রাতে মসজিদে খতমে তারাবি অনুষ্ঠিত হয়। নামাজ ও দোয়া শেষে মুসল্লিরা একে একে বিদায় নিলেও ওই নারী আর ওঠেননি। তিনি সিজদায় পড়ে ছিলেন। পরে দেখা যায়, মহান আল্লাহ তার প্রার্থনা কবুল করেছেন—সিজদারত অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন।
এই ঘটনা আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে, আল্লাহর রহমত আমাদের পাপের চেয়েও বিশাল। শয়তানের প্ররোচনায় আমরা প্রায়ই ভাবি, জীবনটা গুছিয়ে নিয়ে পরে তওবা করব। কিন্তু মৃত্যুর কোনো দিনক্ষণ নেই। কবরস্থানে এমন অনেক মানুষের কবর রয়েছে যারা ভেবেছিল ভবিষ্যতে শুধরে যাবে, কিন্তু সেই সুযোগ তারা আর পায়নি। তাই কালক্ষেপণ না করে আজই আল্লাহর পথে ফিরে আসা বাঞ্ছনীয়।



