ইসলাম ধর্মধর্ম ও জীবন

দ্বীনি জ্ঞানার্জন: ইহলৌকিক কল্যাণ ও পরলৌকিক মুক্তির সোপান

ধর্ম ও জীবন ডেস্ক: ইসলাম ধর্মে জ্ঞান বা ‘ইলম’ অর্জনকে ইবাদতের মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। পবিত্র কুরআন ও হাদিসে জ্ঞানীদের বিশেষ সম্মান এবং জ্ঞানার্জনের প্রতি অসামান্য গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর বিভিন্ন বাণী এবং সাহাবা ও বুজুর্গদের জীবনাচরণে জ্ঞানচর্চার এই তাগিদ স্পষ্টভাবে ফুটে ওঠে।

সহীহ বুখারীর ৭১ নং হাদিসে বর্ণিত রয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, আল্লাহ তাআলা যার বিশেষ কল্যাণ চান, তাকেই দ্বীনের গভীর বুঝ বা ফিকহ দান করেন। অর্থাৎ, দ্বীনি জ্ঞান লাভ করা মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি ও ভালোবাসার একটি অন্যতম নিদর্শন।

জ্ঞানান্বেষণের ফজিলত সম্পর্কে আবূ দাউদ ও তিরমিযী শরীফে বর্ণিত একটি দীর্ঘ হাদিসে রাসূল (সা.) সুসংবাদ দিয়ে বলেছেন, যে ব্যক্তি জ্ঞানার্জনের উদ্দেশ্যে কোনো পথে বের হয়, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতের পথ সহজ করে দেন। জ্ঞানান্বেষী বা ‘তালেবে ইলম’-এর প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে ফেরেশতারা নিজেদের ডানা বিছিয়ে দেন। এমনকি আসমান ও জমিনের সকল সৃষ্টি—পানির মাছ পর্যন্ত—আলেম বা জ্ঞানীদের জন্য মহান আল্লাহর দরবারে ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাকে।

উক্ত হাদিসে আরও বলা হয়েছে, সাধারণ ইবাদতকারী বা আবেদের তুলনায় একজন আলেমের মর্যাদা ঠিক তেমনই, যেমন তারকামণ্ডলীর ওপর পূর্ণিমার চাঁদের মর্যাদা। আলেমগণই হলেন নবীদের প্রকৃত উত্তরাধিকারী। নবীরা কোনো স্বর্ণ বা রৌপ্যমুদ্রা রেখে যাননি, তাঁরা রেখে গেছেন ইলম বা দ্বীনি জ্ঞান। তাই যারা এই জ্ঞান অর্জন করল, তারা মূলত নবীদের রেখে যাওয়া সম্পদের পূর্ণ অংশই লাভ করল।

জ্ঞানীদের মর্যাদার স্তর সম্পর্কে বিশিষ্ট সাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, সাধারণ মুমিনদের চেয়ে জ্ঞানী মুমিনদের মর্যাদা ৭০০ স্তর ওপরে। আর প্রতিটি স্তরের ব্যবধান ৫০০ বছরের পথের সমান। (এহ‌ইয়াউল উলূম)।

জ্ঞানচর্চার প্রতি পূর্বসূরিদের একাগ্রতা ছিল বিস্ময়কর। বিশিষ্ট তাবেঈ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মোবারক (রহ.)-কে একবার প্রশ্ন করা হয়েছিল, ‘যদি আল্লাহ তাআলা ওহির মাধ্যমে আপনাকে জানান যে আজ সন্ধ্যায় আপনি মৃত্যুবরণ করবেন, তবে সারাদিন আপনি কী করবেন?’ উত্তরে তিনি বলেছিলেন, ‘আমি ইলম অর্জনে মগ্ন থাকব।’

জ্ঞানচর্চার উপযুক্ত সময় ও মানুষের অবস্থানভেদে উত্তম কাজ সম্পর্কে ইমাম তিরমিযী (রহ.) ‘আস-সিয়ার’ গ্রন্থে (১৩/৪৪১) চমৎকার একটি উক্তি করেছেন। তিনি বলেন, যুবকদের জন্য উত্তম হলো জ্ঞানচর্চায় মগ্ন থাকা, বয়োজ্যেষ্ঠ বা প্রৌঢ়দের জন্য উত্তম হলো মসজিদে সময় কাটানো, নারীদের জন্য উত্তম হলো নিজ ঘরে অবস্থান করা এবং যারা মানুষকে কষ্ট দেয় তাদের জন্য উত্তম স্থান হলো কারাগার।

ব্যস্ততার অজুহাতে আমরা অনেকেই বই পড়া থেকে দূরে থাকি। অথচ সামান্য সময়ের সদ্ব্যবহার বড় পরিবর্তন আনতে পারে। আপনি যদি প্রতিদিন মাত্র ২০ মিনিট সময়ও দ্বীনি বই পড়ার জন্য বরাদ্দ করেন, তবে মাস শেষে তা দাঁড়াবে ৬০০ মিনিটে। অর্থাৎ মাসে প্রায় ১০ ঘণ্টা আপনি জ্ঞানচর্চায় ব্যয় করলেন। এই ১০ ঘণ্টার অধ্যয়ন আপনার জীবন ও চিন্তাধারায় ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে এবং দ্বীনি জ্ঞান ভাণ্ডার সমৃদ্ধ করতে বিশাল ভূমিকা রাখবে, ইনশাআল্লাহ।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button