নাজিরপুর সেতু উদ্বোধনের মঞ্চে দুষ্কৃতকারীদের হানা: প্রশাসনের ‘নিষ্ক্রিয়তায়’ জনমনে ক্ষোভ

নিজস্ব প্রতিবেদক: বরিশালের মুলাদী উপজেলায় আড়িয়াল খাঁ নদের ওপর নবনির্মিত নাজিরপুর সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শনিবার (৬ ডিসেম্বর) দুপুরে এক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে। উৎসবমুখর পরিবেশ মুহূর্তেই রণক্ষেত্রে পরিণত হয় যখন একদল দুর্বৃত্ত মঞ্চে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর করে। খোদ জেলা প্রশাসক ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতেই এই তাণ্ডব চললেও প্রশাসনের ‘নিরব ভূমিকা’ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয়রা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ‘প্রোগ্রাম ফর সাপোর্টিং রুরাল ব্রিজেস’ (পিএসআরবি) প্রকল্পের আওতায় নির্মিত এই সেতুটি উদ্বোধনের জন্য শনিবার দুপুরের পর থেকেই স্থানীয় জনতা, রাজনৈতিক নেতাকর্মী ও সরকারি কর্মকর্তারা জড়ো হতে থাকেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার উপস্থিত থাকার কথা ছিল। কিন্তু অনুষ্ঠান শুরুর ঠিক আগমুহূর্তে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, হঠাৎ ৬০ থেকে ৮০ জনের একটি সংঘবদ্ধ দল স্লোগান দিয়ে দ্রুতগতিতে মঞ্চের দিকে তেড়ে আসে। তাদের গতিবিধি ও আচরণ দেখে স্থানীয়রা এটিকে সুপরিকল্পিত হামলা হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। হামলাকারীরা মঞ্চে উঠেই চেয়ার-টেবিল, ব্যানার-ফেস্টুন ছিঁড়ে ফেলে এবং সাউন্ড সিস্টেম ভাঙচুর করে। এ সময় তারা উপস্থিত সাধারণ মানুষকে ধাওয়া দিলে পুরো এলাকায় তীব্র আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
ঘটনাস্থলে সে সময় বরিশাল জেলা প্রশাসক মো. খয়রুল আলম সুমন, মুলাদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এবং মুলাদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) উপস্থিত ছিলেন। স্থানীয়দের অভিযোগ, চোখের সামনে এমন সহিংসতা ঘটলেও প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্তাব্যক্তিরা হামলাকারীদের নিবৃত করতে তাৎক্ষণিক কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেননি। অভিযোগ রয়েছে, ঘটনাস্থলে নিরাপত্তার জন্য মাত্র ৪-৫ জন পুলিশ সদস্য মোতায়েন ছিলেন, যা এমন পরিস্থিতির জন্য একেবারেই অপ্রতুল।
হামলাকারীদের পরিচয় সম্পর্কে স্থানীয় একাধিক সূত্র দাবি করেছে, দুর্বৃত্তদের কয়েকজনের পরনে ‘মুজিব কোট’ দেখা গেছে। এই নাশকতার নেপথ্যে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত সচিব এমদাদুল হক মজনু এবং নৌকা প্রতীকের সাবেক এক ইউপি চেয়ারম্যানের ঘনিষ্ঠ সহযোগী জাহিদ হোসেন পনিরের ইন্ধন রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। তবে এই অভিযোগের বিষয়ে অভিযুক্তদের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
পুলিশ ও প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে, বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। হামলাকারীদের শনাক্ত করতে ভিডিও ফুটেজ ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হচ্ছে। তবে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি।
স্থানীয় বাসিন্দারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আড়িয়াল খাঁ নদের ওপর নির্মিত এই সেতুটি চালু হলে কয়েকটি ইউনিয়ন ও গ্রামের যোগাযোগব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আসত এবং অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড গতিশীল হতো। এমন একটি জনগুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধনে যারা হামলা চালিয়েছে, তারা দেশ ও উন্নয়নের শত্রু। প্রশাসনের সামনে এমন ঘটনা ঘটার পরও দোষীদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা না নেওয়ায় সাধারণ মানুষের মধ্যে অসন্তোষ ও ভীতি বিরাজ করছে। তারা দ্রুত অপরাধীদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।



