সোনামণিদের ঈমানি বুনিয়াদ: তাওহীদ শিক্ষার সহজ পাঠ ও জরুরি প্রশ্নোত্তর
ইসলাম ও জীবন ডেস্ক: সন্তান মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে মা-বাবার জন্য এক বিশেষ আমানত। ছোটবেলা থেকেই সন্তানের মননে ঈমান ও আকিদার বীজ বপন করা প্রত্যেক অভিভাবকের আবশ্যিক দায়িত্ব। বিশেষ করে তাওহীদ বা আল্লাহর একত্ববাদ সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা দেওয়া জরুরি। শিশুদের সহজ-সরল ভাষায় আল্লাহর পরিচয়, ইবাদত এবং আকিদা শেখানোর জন্য কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে কিছু মৌলিক প্রশ্নোত্তর নিচে তুলে ধরা হলো, যা বারবার অভ্যাসের মাধ্যমে শিশুরা দ্বীনি শিক্ষায় গড়ে উঠবে।
আল্লাহর পরিচয় ও অবস্থান: শিশুদের সর্বপ্রথম শেখাতে হবে তাদের রবের পরিচয়। আল্লাহ কোথায় আছেন—এ প্রশ্নের উত্তরে শেখাতে হবে, আল্লাহ আকাশে অর্থাৎ সবকিছুর ঊর্ধ্বে বা আরশের ওপরে আছেন। এর স্বপক্ষে পবিত্র কুরআনের দলিল হলো সূরা ত্বা-হা’র ৫ নং আয়াত—‘আর-রহমানু আলাল আরশিস তাওয়া’ অর্থাৎ ‘রহমান (আল্লাহ) আরশের ওপর উঠেছেন’। এখানে ‘ইস্তওয়া’ শব্দের অর্থ হলো বাস্তবিক অর্থেই ঊর্ধ্বে ওঠা ও সমুন্নত হওয়া, এটি কোনো রূপক অর্থ নয়। আমাদের আকিদার মূল উৎস হবে কুরআন, সুন্নাহ এবং সাহাবা ও তাবেঈদের বাণী (আছার)।
সৃষ্টির উদ্দেশ্য ও ইবাদত: মানুষ ও জিন জাতিকে সৃষ্টির মূল লক্ষ্য সম্পর্কে শিশুদের জানাতে হবে। আল্লাহ কেবল তাঁর ইবাদতের জন্যই আমাদের সৃষ্টি করেছেন। সূরা যারিয়াতের ৫৬ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন, “আর আমি জিন ও মানবজাতিকে কেবল আমার ইবাদত করার জন্যই সৃষ্টি করেছি।” আয়াতে উল্লিখিত ‘ইয়াবুদুন’ বা ইবাদতের অর্থ হলো তাওহীদ প্রতিষ্ঠা করা ও আল্লাহর আনুগত্য করা। আর ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’-এর অর্থ হলো, আল্লাহ ছাড়া সত্য কোনো মাবুদ নেই।
তাওহীদ ও শিরকের ধারণা: সবচেয়ে বড় ইবাদত হলো তাওহীদ বা একত্ববাদ এবং সবচেয়ে বড় জুলুম হলো শিরক। ইবাদতের ক্ষেত্রে আল্লাহকে একক মানাই হলো তাওহীদ। অন্যদিকে, আল্লাহর সঙ্গে অন্য কাউকে ইবাদতে শরিক করাই হলো শিরক। তাওহীদ মূলত তিন প্রকার: ১. তাওহীদুর রুবূবিয়্যাহ, ২. তাওহীদুল উলূহিয়্যাহ বা উবূদিয়্যাহ এবং ৩. তাওহীদুল আসমা ওয়াস সিফাত।
• রুবূবিয়্যাহ: সৃষ্টি করা, রিজিক দেওয়া বা পরিচালনার মতো কাজে আল্লাহকে একক মনে করা।
• উলূহিয়্যাহ: বান্দার কাজ তথা দোয়া, জবেহ বা সিজদার মতো ইবাদতগুলো কেবল আল্লাহর জন্যই নিবেদন করা।
• আসমা ওয়াস সিফাত: আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (সা.) যেসব নাম ও গুণাবলি বর্ণনা করেছেন, তা বিশ্বাস করা। এসব গুণাবলি মাখলুক বা সৃষ্টির মতো নয়। সূরা শুরার ১১ নং আয়াতে বলা হয়েছে, “কোনো কিছুই তাঁর অনুরূপ নয়; তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা।”
কুরআন ও আখেরাত বিশ্বাস: পবিত্র কুরআন মহান আল্লাহর কালাম বা কথা। এটি নাযিলকৃত, কোনো সৃষ্টি বা মাখলুক নয়। এর শব্দ ও অর্থ উভয়ই আল্লাহর। এছাড়া মৃত্যুর পর পুনরুত্থান বা ‘আল-বাছ’ সত্য। কাফেররা পুনরুত্থান অস্বীকার করলেও আল্লাহ সূরা সাবার ৩ নং আয়াতে শপথ করে বলেছেন, “বলুন, হ্যাঁ, আমার রবের শপথ! তোমরা অবশ্যই পুনরুত্থিত হবে।”
পরিশেষে, ইসলাম শব্দের অর্থ হলো তাওহীদের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ করা, তাঁর আনুগত্য করা এবং শিরক ও মুশরিকদের থেকে নিজেকে মুক্ত রাখা। এই বুনিয়াদি শিক্ষাগুলো শিশুদের শিশুকাল থেকেই শেখানো গেলে তারা খাঁটি ঈমানদার হিসেবে বেড়ে উঠবে।



