অর্থনীতিজাতীয়প্রযুক্তিবানিজ্য সংবাদরাজনীতি

বিএনপি ক্ষমতায় গেলে এনইআইআর নীতিমালা রিভিউ করা হবে: আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাষ্ট্রক্ষমতায় আসীন হলে মোবাইল হ্যান্ডসেট নিবন্ধনের বিতর্কিত এনইআইআর (NEIR) নীতিমালা পুনর্বিবেচনার ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি সাফ জানিয়েছেন, মুক্তবাজার অর্থনীতির পথে বাধা সৃষ্টি করে—বিগত ও বর্তমান সরকারের এমন সব নীতিমালাই পর্যালোচনা করে পরিবর্তন আনা হবে।

রোববার রাজধানীর বনানীর হোটেল সারিনায় ‘সেন্টার ফর টেকনোলোজি জার্নালিজম’ (সিটিজে) আয়োজিত এক গোলটেবিল আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। ‘এনইআইআর: বাস্তবায়ন কাঠামো, জাতীয় স্বার্থ এবং নাগরিক উদ্বেগ’ শীর্ষক এই বৈঠকে রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী নেতা ও প্রযুক্তি সাংবাদিকরা অংশ নেন।

আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী তাঁর বক্তব্যে প্রযুক্তি খাতের বৈষম্য ও সিন্ডিকেট প্রথার তীব্র সমালোচনা করেন। তিনি প্রশ্ন তোলেন, “ডিজিটাল বাংলাদেশের নামে যে ৬৭ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হলো, তার প্রকৃত সুফল কী? জনগণের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম কেন সাধারণের নাগালের বাইরে থাকবে?”

দেশে মোবাইল ফোন উৎপাদনের নামে চলা কার্যক্রম নিয়েও সংশয় প্রকাশ করেন সাবেক এই বাণিজ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, “অ্যাসেম্বলিং বা সংযোজনের কথা বলে যারা ৫০ শতাংশ বাড়তি কর সুবিধা নিচ্ছে, তারা আদতে কতটা ভ্যালু এডিশন (মূল্য সংযোজন) করছে, তা খতিয়ে দেখা জরুরি। আমদানিকারক ও স্থানীয় সংযোজনকারীদের কর কাঠামোর মধ্যে সামঞ্জস্য থাকতে হবে। শুধুমাত্র একটি নির্দিষ্ট সিন্ডিকেটের স্বার্থরক্ষায় যদি কোনো নীতিমালা তৈরি করা হয় এবং একচেটিয়া বা মনোপলি ব্যবসার সুযোগ দেওয়া হয়, তবে তা সাধারণ ব্যবসায়ীদের ধ্বংস করবে। আমরা ক্ষমতায় গেলে সব স্টেকহোল্ডারের সঙ্গে আলোচনা করে এসব নীতি সংস্কার করব।”

বৈঠকে অংশ নিয়ে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বর্তমান সরকারের নীতি গ্রহণের প্রক্রিয়ার সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, “দেশে কর্মসংস্থানের চরম সংকট চলছে। এই মুহূর্তে এনইআইআর নীতিমালার কারণে ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীরা নতুন করে ঝুঁকির মুখে পড়েছেন।”

সাকি আরও বলেন, “অংশীজনদের সঙ্গে কোনো আলোচনা না করে একতরফা সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়া স্বৈরাচারী আচরণের শামিল। অভ্যুত্থানের পর গঠিত এই সরকারের কাছ থেকে শেখ হাসিনা সরকারের মতো একপাক্ষিক নীতি জনগণ আশা করে না। ব্যবসায়ীদের টিকে থাকার সুযোগ দিয়েই তবে নীতিমালা করতে হবে।”

বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জহির উদ্দিন স্বপন বলেন, “যেকোনো পলিসি তৈরির মাপকাঠি হতে হবে রাষ্ট্র ও জনগণের স্বার্থ। কারো পকেট ভারী করা বা নির্দিষ্ট কোনো গোষ্ঠীকে সুবিধা দেওয়ার জন্য নীতিমালা প্রণয়ন করা যাবে না।”

সিটিজে সভাপতি ও দৈনিক সমকালের সহকারী সম্পাদক হাসান জাকিরের সভাপতিত্বে ও মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনায় গোলটেবিল বৈঠকে আরও বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব কন্টাক্ট সেন্টার (বাক্কো)-এর সাধারণ সম্পাদক ফয়সল আলিম, আইএসপিএবি সভাপতি আমিনুল হাকিম, বেসিসের সহায়ক কমিটির সাবেক চেয়ারম্যান রাফায়েল কবীর এবং বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ।

এছাড়া আলোচনায় অংশ নেন দৈনিক রূপালী বাংলাদেশের সম্পাদক ও প্রকাশক মো. সায়েম ফারুকী, দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের প্রধান প্রতিবেদক আব্বাস উদ্দিন নয়ন এবং চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন মোবাইল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ আরিফুর রহমানসহ প্রযুক্তি খাতের বিভিন্ন পর্যায়ের প্রতিনিধিরা।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button