
নিজস্ব প্রতিবেদক: সাংবাদিকতার কার্ড আর পত্রিকার স্টিকারযুক্ত মোটরসাইকেল ব্যবহার করে দিনের আলোয় চলত দাপট, আর রাতের আঁধারে সেই পরিচয় ভাঙিয়েই চলত মাদকের রমরমা ব্যবসা। অবশেষে নৌবাহিনীর গোয়েন্দা অভিযানে মুখোশ খসে পড়েছে বরগুনার আলোচিত কথিত সাংবাদিক নাঈম মৃধার। গত বুধবার (৩ ডিসেম্বর) রাতে অভিযানের মুখে নিজের ব্যবহৃত মোটরসাইকেল ফেলে সহযোগীসহ পালিয়ে যান তিনি।
ঘটনাটি ঘটেছে তালতলী উপজেলার ছোটবগী চরপাড়া এলাকায়। এ সময় নৌবাহিনীর সদস্যরা হাতেনাতে আটক করেন মো. সরোয়ার তালুকদার (৩২) নামের এক মাদক কারবারিকে। তার কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় ৩২ পিস ইয়াবা।
নৌবাহিনী ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বুধবার রাত ১০টার দিকে ওই এলাকায় অভিযানে যায় নৌবাহিনীর একটি বিশেষ দল। সেখানে ইয়াবা লেনদেনের সময় ধাওয়া দিলে নাঈম মৃধা তার পেশাগত কাজে ব্যবহৃত ‘দৈনিক কালবেলা’র স্টিকারযুক্ত মোটরসাইকেলটি (বরগুনা হ-১১-৭৬৫২) ফেলে সহযোগী আসলামকে নিয়ে অন্ধকারে পালিয়ে যান।
ঘটনাস্থল থেকে আটক সরোয়ার তালুকদার প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানান, নাঈম মৃধা মূলত একজন মাদকের ডিলার ও পাইকারি বিক্রেতা। তিনি শুধু মাদক বিক্রিই করতেন না, স্থানীয় অন্য মাদক ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে নিয়মিত মাসোহারাও আদায় করতেন। সরোয়ার বলেন, “সন্ধ্যার দিকে নাঈম আমার বাড়িতে ইয়াবা কেনার জন্য খোঁজ করেছিলেন। পরে রাস্তায় লেনদেনের সময় নৌবাহিনী আমাদের ঘিরে ফেলে। তখন নাঈম ও আসলাম বাইক ফেলে পালিয়ে যায়।”
অনুসন্ধানে জানা গেছে, নাঈম মৃধার বিরুদ্ধে মাদক, দ্রুত বিচার আইন ও পেনাল কোডসহ ৫টি মামলা রয়েছে। তিনি দীর্ঘদিন ধরে সাংবাদিকতার প্রভাব খাটিয়ে এলাকায় মাদক সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করে আসছিলেন।
এদিকে, দৈনিক কালবেলা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, প্রতিষ্ঠানবিরোধী কর্মকাণ্ডের দায়ে ঘটনার দুই দিন আগেই অর্থাৎ ১ ডিসেম্বর ২০২৫ তারিখে নাঈম মৃধাকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। পত্রিকার অতিরিক্ত বার্তা সম্পাদক মেহেদী হাসান শাকিল ফারুক বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, নাঈমের সঙ্গে এখন পত্রিকার কোনো সম্পর্ক নেই এবং তার সাংবাদিক পরিচয়পত্র ও নিয়োগ বাতিল করা হয়েছে।
বর্তমানে পলাতক নাঈম মৃধা ও তার সহযোগী আসলামের বিরুদ্ধে তালতলী থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে। তাদের গ্রেফতারে পুলিশ ও নৌবাহিনীর যৌথ অভিযান অব্যাহত রয়েছে।



